এক রাতের কথা। ইয়ানুর ইসলাম দেখলেন—তাঁর স্ত্রী ক্লাস শেষে ঘরে ফিরেও ল্যাপটপ খুলে বসেছেন। কখনো লেসন প্ল্যান, কখনো ছাত্রের মূল্যায়ন, কখনো অভিভাবকদের মেসেজ—তাঁর দিন যেন শেষই হয় না। ক্লান্ত চোখে তিনি বলছিলেন, ‘শিক্ষকের কাজ তো শুধু ক্লাসে না। ক্লাসের বাইরেও অনেক কিছু সামলাতে হয়।’ কথাগুলো ইয়ানুরের মাথায় গেঁথে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই নানা নতুন উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন এই তরুণ। ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ক্লাবের সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে নিজেই শুরু করেছিলেন বহুব্রীহি নামের শিক্ষাপ্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু স্ত্রীর কথা থেকে ইয়ানুরের মাথায় খেলতে থাকে এক নতুন উদ্যোগের ভাবনা।

যে ভাবনা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের আজমাইন আদেলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। ইয়ানুর বলেন, ‘আমি যখন আদেলের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করি, তখন একটা সুবিধা ছিল। ওর মা ও স্ত্রী, দুজনই শিক্ষক। তাই সে সমস্যাগুলো কাছ থেকে দেখেছে। আইডিয়াটা বোঝাতে আমার খুব বেগ পেতে হয়নি।’

আরও পড়ুনহার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ডকে হারিয়ে যেখানে প্রথম বুয়েট৮ ঘণ্টা আগে

এভাবেই শুরু মনষার যাত্রা। মনষা এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্ল্যাটফর্ম, যা শিক্ষকদের সহায়তা করে। কমিয়ে দেয় কাজের চাপ।

যেভাবে সাড়া ফেলল

বাজার যাচাই করে ইয়ানুররা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শুধু বাংলাদেশের জন্য তাঁরা প্ল্যাটফর্ম বানাবেন না। কেননা বাংলাদেশের শিক্ষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত নন। কিন্তু বাইরের দেশের শিক্ষকদের কাছে যোগাযোগটা হবে কী করে? ফান্ডিং বা তহবিলের সমস্যা তো আছেই। তার ওপর আদেল তখনো একটা পূর্ণকালীন চাকরি করছিলেন।

সব বাধা সামলেই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করে ফেলেছেন দুই প্রকৌশলী। প্রথম সংস্করণটি শিক্ষকদের মধ্যে বেশ সাড়াও ফেলেছে। পাঠ্যক্রম তৈরি, সেই অনুযায়ী লেসন প্ল্যান বানানো, লেসন প্ল্যান থেকে কুইজ ও প্রয়োজনীয় স্টাডি ম্যাটেরিয়াল তৈরি—মনষার মাধ্যমে সবই করতে পারেন শিক্ষকেরা। আগে যেসব কাজ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যেত, এখন সেগুলো কয়েক ক্লিকেই হয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি গ্রাহক পেয়েছে মনষা, যার ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। ইয়ানুর বলেন, ‘আমরা কিন্তু আমাদের প্ল্যাটফর্মের মার্কেটিং সেভাবে করিইনি। গ্রাহকেরাই খুঁজে বের করছেন। এমনকি একটা ফ্রি ভার্সন থাকার পরও আমাদের গ্রাহকদের একটা বড় অংশ প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইব করছে। এ থেকে বোঝা যায়, এটি তাঁদের কাজ আরও সহজ করে দিচ্ছে।’

এসেছে তহবিল

লঞ্চ এক্সেলারেটর থেকে সম্প্রতি ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের ‘প্রি-সিড ফান্ডিং’ পেয়েছে মনষা। এই তহবিল পাওয়ার পর নতুন করে আরও নানা পরিকল্পনা করছেন উদ্যোক্তারা। ইয়ানুর বলেন, ‘এখন আমরা পরিকল্পনা করছি, মনষার প্রোডাক্ট আরও উন্নত করে দেশের বাইরেও কাজ করব। যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী—যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি, তার সমাধান করা সম্ভব। বাজারে এর ভালো চাহিদা আছে। তবে কাজটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা নানা ধরনের সাড়া পাচ্ছি এবং সেগুলোর ভিত্তিতে কাজ করতে আমাদের আরও একটি শক্তিশালী টিম প্রয়োজন। তাই এই ফান্ডিং নিয়েছি, যার মাধ্যমে আমাদের প্রোডাক্ট আরও উন্নত করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে আমাদের প্রোডাক্ট আরও ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

আরও পড়ুনমায়ের শেষ সম্বল ৫০ হাজার টাকায় ছেলের উদ্যোগ২৭ অক্টোবর ২০২৪

কিন্তু মনষা তাঁদের প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশের সামাজিক বাস্তবতাগুলো কীভাবে বিবেচনায় নেয়? একেক দেশের পাঠ্যক্রম ও পাঠদান পদ্ধতি তো আলাদা। ফলে শিক্ষকদেরও আলাদা আলাদা কাজ করতে হয়। ইয়ানুর বলেন, ‘আমরা এমন একটা সিস্টেম ডেভেলপ করেছি, যেখানে আগেই কিছু কারিকুলাম লাইব্রেরি আকারে দেওয়া আছে। যেগুলো বিশ্বমানের। এর পাশাপাশি একজন শিক্ষক চাইলে আগেই কিছু ইনফরমেশন ইনপুট দিয়ে ওই লার্নিং অবজেকটিভ অনুযায়ী লেসন প্ল্যান, কুইজ ও প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করতে পারেন।’

নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে গিয়ে আরও একটু যোগ করলেন এই প্রকৌশলী, ‘আমাদের লক্ষ্য কিন্তু শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেট নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের সহায়তা করা। আমাদের এআইভিত্তিক প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষকদের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠবে। সারা বিশ্বেই শিক্ষার উন্নতিতে মনষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম শ ক ষকদ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে। 

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী

প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক  আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।  

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন। 

ঢাকা/কাওছার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ