বরগুনায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে নারীকে জখম ও দুই শিশুকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে মো. ইলিয়াস পহলান নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার সকালে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ইলিয়াস বরগুনা সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নের পূর্ব কেওরাবুনিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন পহলানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রঞ্জুয়ারা সিপু।

আদালত ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ফুলকুড়ি ইউনিয়নের এক গৃহবধূ তাঁর তিন বছর বয়সী শিশুসন্তান তাইফাকে নিয়ে নিজেদের বসতঘরে বসবাস করেন। হাফিজুল (১০) নামের এক শিশু তার ঘরে থাকত। রাতের আঁধারে কে বা কারা হাফিজুলকে কুপিয়ে হত্যা করে। এতে গুরুতর আহত হন ওই গৃহবধূ ও তাঁর শিশুসন্তান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি ইলিয়াস ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করতে তাঁর ঘরে ঢোকেন। এ সময় গৃহবধূর ডাক-চিৎকারে হাফিজুল এগিয়ে গেলে আসামি ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তিনজনকে জখম করেন। এতে গৃহবধূ গুরুতর আহত হন এবং অন্য দুই শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় তদন্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

আদালত তিনটি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে আসামিকে সাজা দিয়েছেন। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, ইলিয়াস ভুক্তভোগী গৃহবধূকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে বাধা পেয়ে তিনজনকে এলোপাতাড়ি কোপান। এতে দুই শিশু মারা যায়। আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত।

বিশেষ পিপি রঞ্জুয়ারা সিপু বলেন, ‘এই রায়ে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।’ আসামির আইনজীবী না থাকায় আইনজীবী এম মজিবুল হককে ইলিয়াসের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেন আদালত। তিনি বলেন, ‘আমি সাধ্যমতো মামলা পরিচালনা করেছি। আসামি জেলকোড অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ হবধ

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ