জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
Published: 27th, April 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত থাকা এবং এতে প্ররোচণার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়ার কতিপয় কর্মকর্তারও নাম রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগ মুহূর্তে মিরপুরে মাহফুজুল আলম শ্রাবণ নামে ২১ বছর বয়সি এক তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার সিএমএম আদালতে এই মামলা করেন। এজাহারে অভিযুক্তদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সবার সম্পৃক্ততা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন তুলে ধরা হয়েছে।
শ্রাবণের বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার দোগাছী এলাকায়। তিনি মিরপুরে বসবাস করতেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিলে আসামিরা তাকে মিরপুর থানার সামনে গুলি করে হত্যা করে বলে এজাহাজারের বর্ণনায় এসেছে।
আরো পড়ুন:
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনা-রেহানা-জয় ও পুতুলসহ ১০ জনের ‘এনআইডি লক’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্রাবণের শরীরে একাধিক গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই শ্রাবণের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। তার মৃত্যুর প্রায় ৯ মাসের মাথায় গত ২০ এপ্রিল তার ভাই আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) একটি সূত্র এই মামলার তথ্য দেওয়ার পর মিরপুর থানায় খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়।
গত ২০ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মিরপুর থানা মামলাটি নথিভুক্ত করেন। বর্তমানে মামলাটি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন তদন্ত করছেন। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মিরপুর থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মামলার আসামি সংখ্যা ৪০৮ জন; যাদের মধ্যে বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা এবং শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, সালমান ফজলুর রহমান, হাসান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপুকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সাবেক তিন আইজপি, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ, একেএম শহীদুল হোক, হাবিবুর রহমান, আসাদুজ্জমান মিয়া, বিপ্লব কুমার, হারুনুর রশিদ আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, মেয়র, দুদক চেয়ারম্যান, দুর্নীতিবাজ আমলা, চিহ্নিত ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার আর্থিক সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে এই মামলায়। রউফ তালুকদার, কামাল আব্দুন নাসের, নজরুল ইসলাম মজুমদার, এন আই খান, ফজলে নুর তাপস, নুর আলী, আহমেদ আকবর সোবহান, চৌধুরী নাফিস শরাফত, এস আলমও আসামির তালিকায় রয়েছেন।
চিহ্নিত সাংবাদিক ও মিডিয়া-সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমকর্তাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ ধামা চাপা দেওয়ার মাধ্যমে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, মোর্শেদ আলম, ফারজানা রূপা, সাবান মাহমুদ, আরিফ হাসান, মোরশেদ আলম, মাসুদা ভাট্টি ও ইকরাম মঈন চৌধুরীর নাম আসামির তালিকায় রয়েছে।
চার শতাধিক আসামির তালিকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম আসাদুজ্জমান নূর এবং এশিয়াটিক গ্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালক ও অভিনেতা ইরেশ যাকের।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন বলেন, “মামলাটি আদালেতর নির্দেশে মিরপুর থানা নথিভুক্ত করেছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ওসি নিজেই। তবে তিনি বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। ওসি স্যার থানায় এসে কথা বলতে পারবেন।”
এর আগে জুলাই গণহত্যার একাধিক মামলায় শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের উপরের সারির নেতা এবং আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত বড় বড় নাম এসেছে।
৫ আগস্ট রাজনীতির পট পরিবর্তনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়, যেখানে জুলােই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ও অন্যান্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। বেশ কিছু মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছে।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণহত য আওয় ম ল গ শ খ হ স ন সহ কর মকর ত সরক র র গণহত য মন ত র ক ত কর র মন ত তদন ত আওয় ম আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ