বলিউডের এক সময়ের দাপুটে অভিনেতা ফিরোজ খান। তার জন্ম বেঙ্গালুরুতে। তার মা ছিলেন পারস্য বংশোদ্ভূত আর বাবা আফগান। যে কারণে ফিরোজ খানের চেহারায় পশ্চিমাদের ছোঁয়া ছিল। ফলে বলিউডে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেই সবার নজর কাড়েন। তার আসল নাম জুলফিকার আলি শাহ খান। রুপালি জগতে পা রেখে সেই নাম বদলে হন ফিরোজ খান।

মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন ফিরোজ খান। ১৯৬৫ সালে ‘আরজু’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। অভিষেক সিনেমা তাকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়। ক্যারিয়ারে মুমতাজ, হেমা মালিনী, রেখা, জিনাত আমানের মতো তারকারা তার নায়িকা হয়েছেন। ‘ধর্মাত্মা’, ‘কোরবানি’, ‘জানবাজ’, ‘মেলা’, ‘ওয়েলকাম’-এর মতো সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন

মুমতাজ-ফিরোজ খানের অনস্ক্রিন রসায়ন পর্দায় রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। সেসময় প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর গুঞ্জন শোনা যেত। কিন্তু ফিরোজ খান সত্যি মুমতাজকে মন দিয়েছিলেন। দুজনের ধর্ম এক হওয়াতে এ সম্পর্ক এগোতে সময় লাগেনি।

তবে মুমতাজ ছিলেন প্রেমে ঘা খাওয়া মেয়ে। কারণ এর আগে শাম্মি কাপুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তা এগিয়ে নিয়েছিলেন মুমতাজ। শাম্মি কাপুর বিয়ের জন্য মুমতাজকে প্রস্তাব দিলেও শর্ত জুড়ে দেন। তার শর্ত ছিল— বিয়ে করলে মুমতাজকে অভিনয় ছেড়ে কাপুর পরিবারের স্ত্রী হয়েই থাকতে হবে। কিন্তু মুমতাজ এ শর্তে রাজি হননি।

মুমতাজ-ফিরোজের প্রেমও গভীর ছিল। তবে অজানা সংশয়ও ছিল। ফিরোজের ভালোবাসাকে মুমতাজ বলেছিলেন— “হ্রদের জলে ঝাঁপ দেওয়া”। কোনোভাবেই ফিরোজের সঙ্গে সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দিতে চাননি মুমতাজ। প্রেম পরিণয় না পেলেও দুজনের বন্ধুত্ব আজীবন ছিল।

ফিরোজ খান বহুগামী ছিলেন। এ খবর জানতেন মুমতাজ। ঘরে সুন্দরী স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকা সত্ত্বেও বিমানবালা জ্যোতিকার প্রেমে পড়েছিলেন ফিরোজ। জ্যোতিকা ফিরোজকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও ফিরোজ তার প্রথম বিয়ে ভাঙতে চাননি। অথচ স্ত্রীর কাছে গোপন রাখেন এই পরকীয়া। স্ত্রী জানার পর সংসারে প্রচন্ড অশান্তি তৈরি হয়েছিল। এই অশান্তি এক বছর ধরে চললেও, সংসার ভাঙেনি।

১৯৭৪ সালে ব্যবসায়ী ময়ূর মাধবনীকে বিয়ে করেন মুমতাজ। এ সংসারে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ভাগ্যের লিখন বদলানো যায় না! ফিরোজ-মুমতাজ স্বামী-স্ত্রী হননি ঠিকই। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ছেলে-মেয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ২০০৫ সালে ফিরোজ খানের পুত্র ফারদিন খান বিয়ে করেন মুমতাজের কন্যা নাতাশা মাধবনীকে। ফলে প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে মুমতাজ-ফিরোজ বেয়াই-বেয়াইন হয়ে যান।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ম মত জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ