অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন আগামী ৩ মে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার ও পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই দলই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বাড়ানোর কথা বলেছে। অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে আবাসনব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ার প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলীয় সরকার গত বছরের ১ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফির পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি জানিয়েছে, তারা পুনর্নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফি ২ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার (১ হাজার ২৭৯ ডলার) পর্যন্ত বাড়াবে। দেশটিতে অভিবাসনের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় শিক্ষা খাত। এখন শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বাবদ দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ অস্ট্রেলীয় ডলার। গত বছরের জুলাই মাসে ৭১০ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ অস্ট্রেলিয়া ডলার ভিসা ফি নির্ধারণ করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম চালমারস এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘার গত শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বৃদ্ধির ফলে আগামী চার বছরে ৭৬০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার আয় হবে। অস্ট্রেলিয়া আগামী ৩ মে ফেডারেল নির্বাচন। এর আগে লেবার পার্টির নীতিগত ব্যয় সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বাড়ানোর কথা জানানো হয়। বিবৃতি প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাটি গ্যালাঘার বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি একটি যুক্তিসংগত পদক্ষেপ।’

অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল বিরোধী দল ইতিমধ্যেই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনকারীদের জন্য ভিসা ফি সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ অস্ট্রেলীয় ডলার এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (গ্রুপ অব এইট নামে পরিচিত) জন্য ৫ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের প্রধান একটি উৎস। আবার দেশটিতে আবাসন খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্যও আংশিকভাবে তাদের দায়ী করা হয়। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যায় গত বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুনজাপানে উচ্চশিক্ষা: যাত্রা শুরু করবেন কোথা থেকে, কীভাবে?৯ ঘণ্টা আগে

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার ২০২৫ সালে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বিরোধী দল বলেছে, ২ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে তারা অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে দিতে চায়।

২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অনুমিত পেয়েছিলেন। সেখানে ৫ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করেছিলেন।

২০২২ সালে করোনা মহামারির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসীদের চাপ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় অভিবাসীদের চাপ কমাতে ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভিসার ওপার বিভিন্ন ধরনের কড়াকড়ি আরোপ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

আরও পড়ুনমাদ্রাসা ও কারিগরির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা পাবেন অনুদান, আবেদনের সময় বাড়ল৭ ঘণ্টা আগে

ভিসা ফি বাড়ানোর কারণে এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করাটা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং কানাডায় আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫০ কানাডীয় ডলার খরচ করতে হবে।

এদিকে গত বছরের মার্চ মাসে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিতে জোর দেয় অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া গত বছরের মে মাস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সঞ্চয়ের পরিমাণ (ব্যাংক ব্যালান্স) আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেয় দেশটি। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, ভিসা পেতে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জমা দেখাতে হবে। আগে ২৪ হাজার ৫০৫ অস্ট্রেলীয় ডলার ব্যাংক ব্যালান্স দেখাতে হতো।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্প খাতগুলোর একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়া সরকার এ খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার সমমূল্যের অর্থ আয় করেছে।

আরও পড়ুনবেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টা শুল্ক কার্যকরে নতুন সময়সূচি ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে।

এর আগে ট্রাম্প ১ আগস্টের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলে দিয়েছিলেন, এ সময়ের মধ্যে চুক্তিতে না পৌঁছালে চড়া শুল্ক আরোপ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাহী আদেশে ৭০টির বেশি দেশের ওপর নতুন পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।

যেসব পণ্য ৭ আগস্টের মধ্যে জাহাজে তোলা হবে বা বর্তমানে যাত্রাপথে রয়েছে এবং সেগুলো যদি ৫ অক্টোবরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়, তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।

অবশ্য কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ১ আগস্ট অর্থাৎ আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।

আরও পড়ুনকোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

উত্তর আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী হলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

কানাডা যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ধাতব পদার্থ ও কাঠের পাশাপাশি কানাডা বিপুল পরিমাণে তেল, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা বাণিজ্য চুক্তি করেনি, তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে: ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ