হেফাজতে মৃত্যু আইন বাতিলসহ জানানো হবে একাধিক দাবি
Published: 28th, April 2025 GMT
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ। পুলিশ সপ্তাহে সাইবার ইউনিট গঠন, হেফাজতে মৃত্যু আইন বাতিলসহ উত্থাপন করা হবে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া। চার দিনব্যাপী এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য– ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ ও পদক প্রদানের মধ্য দিয়ে এবারের পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টলের উদ্বোধন ও পরিদর্শন করবেন তারা।
অন্যান্য বছর প্যারেডের মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন হলেও এবার তা থাকছে না। কমিয়ে আনা হয়েছে সময়সীমাও। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহে নানা শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের মতবিনিয়ম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি ড.
তিনি বলেন, দেশে জঙ্গি নেই–এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এর আগে অনেকে জঙ্গিবাদের অভিযোগে কারাভোগ করেছেন। জেএমবির বিষয় আমরা জানি। এ মুহূর্তে পুলিশ বিভাগ সজাগ আছে। বর্তমান জঙ্গি মোকাবিলার মতো সক্ষমতা পুলিশ বিভাগের আছে।
পুলিশের বদলি, পদোন্নতি ও ছাড়পত্রের মতো বিভিন্ন অন্যায় আবদারে জর্জরিত হতে হচ্ছে বলে জানান আইজিপি। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের মতো পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাজ কতদূর অগ্রসর হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটি পুলিশ বাহিনী চায়। এই পুরো বিষয়টি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে।
মব ভায়োলেন্স সম্পর্কে পুলিশপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ তৎপর আছে। এমনকি এ ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি থাকলেও সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৬৮ কর্মকর্তা ও সদস্য পাচ্ছেন আইজিপি’স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ বা আইজি’জ ব্যাজ। পুলিশ সপ্তাহের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাজারবাগ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে তাদের এ ব্যাজ পরিয়ে দেবেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে থাকছে নতুন কিছু ইভেন্ট। প্রথম দিন এসবি এবং পরের দিন সিআইডি, র্যাব, পিবিআইসহ সব ইউনিট তাদের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন শেষে উপদেষ্টা ও সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহের তৃতীয় দিন ব্যাচ প্রদানের পর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে যোগ দেবেন আইজিপি। পরে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন তারা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চায় পুলিশ। বিশিষ্ট নাগরিক ও সংবাদকর্মীদের মতামতও শুনতে চায় বাহিনী। এ জন্য প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মতো অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে।
দাবি-দাওয়ার মধ্যে যা থাকছে
পুলিশে ক্ষতিপূরণ ভাতা চালু, যানবাহন ক্রয়, কর্মীদের দাফন বা সৎকারের জন্য আর্থিক সহায়তা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাধীন সাইবার ইউনিট গঠন, জনবল বৃদ্ধি, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা উন্নতকরণ, পুলিশ মেডিকেল কলেজ স্থাপন, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি এবং ভূমি বিরোধ ও পরিবেশ আইন বাস্তবায়নসংক্রান্ত অতিরিক্ত কাজের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন। এছাড়া পুলিশের পুরোনো দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন বাতিল, ডিআইজি পদ সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এভিয়েশন ইউনিট চালু করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র র মত আইন ব ইউন ট আইজ প সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক