যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে ১৯৮৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে তীব্র চিৎকার আর দুবার ভারী কিছু পড়ার শব্দে ছোট্ট কোলিয়ারের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ১১ বছরের কোলিয়ার তার শোবার ঘরের দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ভয়ে কম্বল মুড়ি দেয়। পরদিন সকালে সে ঘুম থেকে উঠে মাকে খুঁজতে থাকে। তখন তার বাবা জানান, মা ছুটিতে বেড়াতে গেছেন।

কথাটা মোটেও বিশ্বাস হয়নি কোলিয়ারের। এক দিন পরই নতুন বছরের প্রথম দিন। ছুটির এই মৌসুমে মা তাকে কিছু না জানিয়ে কখনো কোথাও চলে যাবেন না। তার ওপর সপ্তাহ কয়েক আগেই তার মা তাকে নিজের বন্ধুদের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন, যদি সে কোনো দিন হঠাৎ করে জানতে পারে মা বাড়িতে নেই, বেড়াতে গেছে, তবে যেন মায়ের বন্ধুদের সে কথা জানায়।

কোলিয়ার মায়ের দেওয়া ফোন নম্বর বাবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। কোলিয়ারের বাবা জন ফ্রান্সিস বয়েল জুনিয়র একজন চিকিৎসক। তিনি রোগী দেখতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাড়িতে যেতেন। কোলিয়ারও মাঝেমধ্যে রোগী দেখতে যাওয়ার সময় বাবার সঙ্গী হতো। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকেরা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখতেন।

এক তরুণী রোগীর সঙ্গে বাবার অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা দেখে ছোট্ট কোলিয়ারের সন্দেহ হয়েছিল। বাবা ওই তরুণীর হাতে হাত রেখে হাঁটেন, জড়িয়ে ধরেন, চুমু খান। একদিন ওই তরুণীর হাতে মায়ের বড় হীরার আংটি দেখে কোলিয়ারের সন্দেহ হয়। ছোট্ট কোলিয়ার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেয়। তখন থেকেই শুরু হয় মা–বাবার ঝগড়া।

একসময় কোলিয়ারের মা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। কিন্তু ভরণপোষণের খরচ, সন্তানেরা কার হেফাজতে থাকবে—এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রায়ই তুমুল বিবাদ হতো।

কোলিয়ারের একটি বোন ছিল। তার মা–বাবা চীন থেকে মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন।

মা হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ায় কোলিয়ারের মনে সন্দেহ হয় এবং সে বাবার নজর এড়িয়ে মায়ের এক বন্ধুকে ফোন করে সব জানায়। মায়ের বন্ধু ওই নারী কোলিয়ারকে পুলিশের জরুরি নম্বরে ফোন করতে বলে।

কোলিয়ার পুলিশে ফোন করলে পুলিশ তার মা নোরিন বয়েলের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করে। বাবাকে না জানিয়ে তদন্তকারী দলকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় কোলিয়ার। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জন বয়েলের কেনা নতুন একটি বাড়ির বেজমেন্টের তলা খুঁড়ে নোরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। জন বয়েলের নতুন বাড়িটি তাঁর আগের বাড়ি থেকে ১৭৫ মাইল দূরে ছিল।

জন বয়েলের বিরুদ্ধে স্ত্রী খুনের অভিযোগে বিচার শুরু হয়, যে মামলায় মূল সাক্ষী ছেলে কোলিয়ার। পাঁচ মাস পর আদালত জন বয়েলকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বনিম্ন ২০ বছর থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

তিন দশকের বেশি সময় আগে ঘটা এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি নতুন একটি পডকাস্ট ‘ফাইন্ডিং মমস কিলার’ প্রকাশ পেয়েছে। ওই পডকাস্টে কীভাবে কোলিয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের তার মায়ের খুনিকে খুঁজে বের করতে পথ দেখিয়েছিল, তার বিস্তারিত উঠে আসে।

জন বয়েলের বয়স এখন ৮১ বছর। এ বছরের আগস্টে তাঁর তৃতীয় প্যারোল শুনানি। এবার তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মায়ের খুনি বাবার সম্ভাব্য মুক্তির খবরে ছেলে কোলিয়ার নতুন এক মানসিক লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছেন।

কোলিয়ারের বয়স এখন ৪৭। তিনি নামের শেষে বাবার বয়েল পদবি ব্যবহার করেন না; বরং তিনি তাঁর দত্তক মা–বাবার পদবি ল্যানড্রি ব্যবহার করেন।

কোলিয়ার বলেন, ‘এমন নয় যে বাবাকে আমার শত্রু মনে হয়.

..তবে এর অর্থ এই নয় যে আমরা হাতে হাত ধরে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাব এবং মনে হবে, সবকিছু দারুণ চলছে।’

কোলিয়ার বলেন, তাঁর বাবা যে বয়সে তাঁর মাকে খুন করেছিলেন, এখন তাঁর সেই বয়স। তবে তিনি নিজের মধ্যে বাবার ছায়া দেখতে পান না বলেই মনে করেন।

বরং কোলিয়ার নিজেকে একজন সত্যিকারের ভালো ও দয়ালু ব্যক্তি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে জীবনের ওই দুঃখগাথা আমার ভেতর থেকে এসব গুণ কেড়ে নিতে পারেনি।’

এখন কোলিয়ার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করেন। সেখানে তিনি সৈকতে বেড়াতে যান, বন্ধুদের সঙ্গে পিকলবল খেলেন, বাবার ছায়ার নিচে চাপা না পড়ে বরং নিজের পছন্দের কাজ ছবি তোলা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাচ্ছেন তিনি।

কোলিয়ার বলেন, তিনি নিজের মতো করে নিজের গল্প বলতে চান। তিনি নিজেকে ওই ছোট্ট বালক হিসেবে পরিচয় করাতে চান না, যে তার মায়ের খুনি বাবাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। বরং তিনি নিজের জীবনের গল্পের মাধ্যমে অন্যদের বলতে চান, জীবনে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাওয়ার পরও সব আশা শেষ হয়ে যায় না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা

বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। অভিনয়ে তাকে দেখা না গেলেও নিজের ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে তাকে প্রায়ই দেয়া যায়। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তিন। অবশ্য এবিষয়ে টুঁশব্দও করেননি এই অভিনেত্রী।

এদিকে মাস তিনেক আগে কংগ্রেসের পক্ষ অভিযোগ তোলা হয়েছিল, প্রীতি জিনতার ১৮ কোটি টাকার ঋণ নাকি মকুফ করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শুধু তাই নয়, প্রীতি নাকি তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপির হাতে সঁপে দিয়েছেন- এমন অভিযোগও ওঠে। এরপর বলিউড নায়িকার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়।

সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে প্রীতি জিনতাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দেবেন? আপনার গত কয়েক মাসের টুইট দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের এটাই একটা সমস্যা। সবাই এত বিচার করতে বসে যান সবকিছু নিয়ে। আমি যেমনটা আগে বলেছি, মন্দিরে, মহাকুম্ভে যাওয়া কিংবা নিজের পরিচয় নিয়ে আমি গর্বিত। তার মানে এই নয় যে এসমস্ত কারণে আমি বিজেপিতে যোগ দেব।’

প্রীতি বলেন, ‘ভারতের বাইরে থাকার ফলে আমি দেশের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং আর পাঁচজন ভারতীয়র মতোই গর্ববোধ করি আমার দেশকে নিয়ে।’

রাজনীতিতে না আসার কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জানিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা। সেসময় তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল আমাকে টিকিট দিতে চেয়েছে। এমনকি রাজ্যসভার আসনের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে আমি বিনম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার ইচ্ছে নেই। আর আমাকে ‘সৈনিক’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। কারণ, আমি একজন আর্মি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সৈনিক এবং আমার দাদাও। আর্মি পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমাদের মানসিকতা খানিক আলাদা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় কিংবা হিমাচলী বা বাঙালি বলে ভাবি না, আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ভারতীয়। আর হ্যাঁ, দেশভক্তি আমাদের রক্তে।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
  • একাধিক সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা