এনসিপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, হঠাৎ কেন এ কথা বললেন উমামা ফাতেমা
Published: 29th, April 2025 GMT
‘আমি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই’—ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমা। এ পোস্ট দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় উমামা বলেছেন, এনসিপিতে যোগ না দেওয়া সত্ত্বেও অনেকে তাঁকে নতুন এই দলের আদলেই দেখার চেষ্টা করেন। সে জন্যই স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন। অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে যেসব ছাত্রী সম্মুখসারিতে ছিলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।
অভ্যুত্থানের পর গত বছরের অক্টোবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হলে উমামা মুখপাত্রের দায়িত্ব পান। তখন তিনি ছাত্র ফেডারেশনের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু উমামা এনসিপিতে যোগ দেননি। উমামা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আছেন। প্ল্যাটফর্মটির সাংগঠনিক কাঠামো আবারও পুনর্গঠিত হতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুনর্গঠিত কমিটিতে উমামা শীর্ষ পদপ্রত্যাশী, এমন আলোচনা আছে।
গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উমামা বলেছেন, ‘সবার উদ্দেশে একটা ছোট ঘোষণা। আমি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমার অনেক পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এই দলটির সঙ্গে আছেন। ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তাই এনসিপি–সংক্রান্ত পরামর্শ, সাংগঠনিক আলাপ বা প্রস্তাবনা আমার কাছে উপস্থাপন না করার অনুরোধ রইল। এতে আপনার, আমার দুজনেরই সময় বাঁচবে।’
হঠাৎ কেন এ পোস্ট দিতে হলো, তা জানতে চাইলে আজ মঙ্গলবার দুপুরে উমামা ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক পেরিফেরিসহ (পরিসর) সবার কাছ থেকে আমাকে নিয়মিত এসব প্রশ্ন মোকাবিলা করতে হয় যে আমার দল কী করছে বা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? মূলত তারা এনসিপি–বিষয়ক আলোচনা করতে চায়। বিভ্রান্তির কারণে অনেকে আমাকে এনসিপির প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ আমাকে ওই দলের আদলে ভাবার একটা প্রবণতা আছে। এ জন্য আমি স্ট্যাটাসটা দিয়েছিলাম, যাতে মানুষ বিষয়টা পরিষ্কার হয় যে আমি এনসিপির সঙ্গে যুক্ত নই।’
এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আছেন জানিয়ে উমামা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি এখনো ডিজলভড (বিলুপ্ত) হয়নি। এর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এরপর নতুন করে কার্যক্রমও শুরু হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।