কার্যক্রম সচল করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
Published: 30th, April 2025 GMT
শিশু–কিশোরদের মধ্যে শিল্প–সংস্কৃতিচর্চার ভিত তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। ফলে মননশীল ও সৃজনশীলতার চর্চার সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। জেলা–উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলেও নানা কারণে অনেক জায়গায় এর কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। এমনকি নিজস্ব ভবন ও ভালো ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও শিশু একাডেমি শিশু–কিশোরদের আকৃষ্ট করতে পারছে না, এমন উদাহরণও আছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে দিনাজপুরের ক্ষেত্রে। বিষয়টি হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দিনাজপুরে ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ মাঠের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ভবন। সেখানে আছে তিনতলা প্রশাসনিক ভবনের সঙ্গে লাগোয়া পাঁচতলা একটি প্রশিক্ষণ ভবনও। আছে ছোট একটি মাঠ। মাঠে আছে শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামও। বাইরে থেকে দেখে কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশ মনে হলেও শিশু একাডেমির ভেতরের চিত্রটি ঠিক উল্টো। এত বড় ভবন কিন্তু ভেতরের অনেকগুলো কক্ষ পরিত্যক্ত। কক্ষগুলোর মেঝেতে ধুলার আস্তরণ পড়েছে। আলমারিগুলোও অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। দুটি তলায় বিদ্যুৎ–সংযোগও অকেজো হয়ে আছে। প্রতিটি তলার টয়লেটগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ভবনের লিফট থাকলেও সেটি পরিত্যক্ত। এককথায় বলা যায়, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা ছাড়া ভবনের বাকি অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
শিশু একাডেমিটির লোকবলেও ঘাটতি আছে। প্রয়োজনমতো নেই ঝাড়ুদার ও নৈশপ্রহরী। খোদ জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার পদটিও শূন্য। চলতি দায়িত্ব পালন করছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কর্মকর্তা। সপ্তাহের দু-তিন দিন দিনাজপুরে আসেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষক আছেন ১০ জন, তা–ও চুক্তিভিত্তিক। শিশু একাডেমির সামগ্রিক কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এসব প্রশিক্ষক। তাঁরা বলছেন, শিশু একাডেমি হবে শিশুদের আনন্দের তীর্থস্থান, কিন্তু গতানুগতিকতার বাইরে শিশুদের মনোবৃত্তি বিকাশে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকেরা, ফলে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘শিশু একাডেমির কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে কিছু আসবাব ও সংস্কারকাজের জন্য একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে দিনাজপুর এলজিইডিতে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এসব বিষয়ের সমাধান হবে।’
আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা করব, শুধু দিবস উদ্যাপন ও গতানুগতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনে সীমাবদ্ধ না থেকে শিশু একাডেমির কার্যক্রমে আরও বৈচিত্র্য আনা হবে। জেলার সব স্কুলে শিশু একাডেমির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম নিয়ে নিয়মিত প্রচার–প্রচারণা করা হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতি শিশু–কিশোরদের যুক্ত করতে লোকবল নিয়োগসহ প্রশিক্ষকদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক