রক্ষণভাগে একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। কোপা ডেল রে’র ফাইনালে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের দায়ে ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন আন্তোনিও রুডিগার। একইসঙ্গে লেফটব্যাক ফারল্যান্ড মেন্ডি ও সেন্টারব্যাক ডেভিড আলাবার চোটে বেশ বেকায়দায় পড়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল।

স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রুডিগার ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। যদিও তার হাঁটুর ইনজুরির কারণে সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে। রিয়াল জানিয়েছে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে যে সময় লাগবে, তা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার সঙ্গেই মিলে যেতে পারে।

তবে বড় ধাক্কা এসেছে ফারল্যান্ড মেন্ডির ইনজুরিতে। কোপা ডেল রে’র ফাইনালের মাত্র ১১ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, তার ডান উরুর মাংসপেশি ছিঁড়ে গেছে। ফলে অন্তত ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে এই ফরাসি লেফটব্যাককে। মৌসুম শুরুর আগেই ফিরতে পারবেন কি না, সেটাও অনিশ্চিত।

এরপর আসে ডেভিড আলাবার খারাপ খবর। বাঁ-হাঁটুর চোটে পড়া এই অস্ট্রিয়ান সেন্টারব্যাককে মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। যদি ছয় সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে ক্লাব বিশ্বকাপে পাওয়া যেতে পারে তাকে। তবে সময় বেশি লাগলে সেই সম্ভাবনাও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

এই পরিস্থিতিতে রক্ষণভাগে আনচেলত্তির হাতে আছেন কেবল ফ্রাঙ্ক গার্সিয়া ও জেসুস ভাল্লেয়ো। তবে ভাল্লেয়ো পুরো মৌসুমে লিগে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন। ফলে বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে মিডফিল্ডার চুয়ামেনি ও কামাভিঙ্গাকে, যারা অতীতে রক্ষণে খেলেছেন। তবে তারাও ক্লান্তি ও ইনজুরির ঝুঁকিতে রয়েছেন। সঙ্গত কারণেই আনচেলত্তির পরিকল্পনায় ধাক্কা লাগছে।

উল্লেখ্য, কোপা ডেল রে’র ফাইনালে রুডিগারের সঙ্গে লাল কার্ড দেখেছিলেন লুকাস ভাসকুয়েজ ও জুড বেলিংহ্যামও। তবে প্রমাণের অভাবে বেলিংহ্যামের লাল কার্ড বাতিল করা হয়েছে, আর ভাসকুয়েজ কোপায় দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন।

চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে রিয়াল। হাতছাড়া হয়েছে স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা ডেল রে শিরোপাও। এখন কেবল লা লিগা জয়ের লড়াইয়ে আছে তারা, যেখানে বার্সেলোনার চেয়ে চার পয়েন্ট পেছনে অবস্থান করছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নগর উন্নয়নে সবুজকে কেন্দ্রে রাখতে হবে

বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সবুজ অঞ্চল রাখতে হয়। এ জন্য সব সংস্থার সমন্বয়ে স্বল্প–মধ্য–দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শুধু নগর নয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সারা দেশের জন্য প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান (নেচার–বেজড সলিউশন) দরকার। জীবনযাপনে যেন প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাও একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে নগর উন্নয়নে প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ক এক তথ্য সংকলন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নগরবিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট (আইইউসিএন) বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) যৌথভাবে সংকলনটি প্রণয়ন করেছে, যার অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এতে ২০টি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগযোগ্য ‘নেচার–বেজড সলিউশন’ উদ্যোগ উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে শহর পরিকল্পনাকারী, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বা নেচার–বেজ সলিউশন হচ্ছে প্রকৃতির কোনো ধরনের ক্ষতি না করে বা মাটি, বায়ু, পানিসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অটুট রেখে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। তিনি বলেন, ‘এই সংকলন শুধু একটি নথি নয়, এটি আমাদের সবুজ ও নিরাপদ শহর গঠনের প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে।’

প্রকৃতির কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত মন্তব্য করে ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘আমাদের জীবনযাপনে প্রকৃতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক এস এম মেহেদি আহসান বলেন, নগরকে বাসযোগ্য করতে হলে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩০ শতাংশ অঞ্চল সবুজ রাখতে হয়। বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত।
বিষয়টি বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে এস এম মেহেদি আহসান বলেন, ‘আমাদের একটা বিল্ডিং কোড আছে। সেটা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দক্ষতার উন্নয়ন করার সুযোগ আছে। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যে ১ হাজার ৪০০ প্রকল্প আছে। সেগুলোকে যদি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে একটা পরিবর্তন আসবে।’ তবে এটার জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ক্লাইমেট ও এনভায়রনমেন্ট উইংয়ের টিম লিডার নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন সব সময় তাঁদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে। বাংলাদেশের প্রকৃতি, জীবন–জীবিকার সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

জলবায়ু অভিযোজন খাতে অধিক বিনিয়োগ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, ‘আমরা সুন্দরবন, হাকালুকি হাওরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এগুলো রক্ষা করা জরুরি।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের চলমান কিছু প্রকল্পে আমরা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের চর্চা করি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ক্লাইমেট মিটিগেটেড নলেজ হাব তৈরি করেছি। পাশাপাশি জার্মান সরকারের অর্থায়নে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট লোকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প চলছে।’ বাংলাদেশ সরকারের ১৩২টি প্রকল্প ও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ৩২টি প্রকল্পে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দেন আইইউসিএনের বাংলাদেশের অ্যাক্টিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং জিসিএর ইন্টেরিম কান্ট্রি ম্যানেজার এম ফয়সাল রহমান। মূল প্রবন্ধ পড়েন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক আলিয়া শাহেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ