বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে গত মার্চে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ২৫৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। সম্প্রতি এই বহিষ্কারাদেশের চিঠি সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে পিটুনিতে নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লার নামও রয়েছে।

সম্প্রতি শামীমের বহিষ্কারাদেশের চিঠি তাঁর বিভাগে পৌঁছানোর পর বিষয়টি জানাজানি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন মৃত ব্যক্তিকে বহিষ্কার করে প্রশাসন উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন। জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একদল শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে পিটুনি দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে আশুলিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের প্রায় দুই ঘণ্টা পর শামীম মোল্লা মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের বহিষ্কার এবং মামলা করে প্রশাসন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলছেন, সিন্ডিকেট থেকে প্রাপ্ত তালিকা শিক্ষা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রস্তুত করে তাঁর কাছে দিয়েছিলেন। ৩৭টি বিভাগে আলাদা আলাদা চিঠি স্বাক্ষর করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভুল হয়েছে। তাঁরা দ্রুত বিষয়টি ঠিক করে পুনরায় বিভাগে পাঠাবেন।

আরও পড়ুনমৃত্যুর আগে জাহাঙ্গীরনগরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীমকে দফায় দফায় পেটানো হয়১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৪, ১৫ ও ১৭ জুলাই ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং পুলিশ হামলা চালায়। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসন দায়িত্বে এসে এসব হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন শেষে গত ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভা থেকে ২৫৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। প্রশাসন বলছে, ওই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁদের ছাত্রত্ব শেষ, তাঁদের সনদ স্থগিত করা হবে। যাঁরা পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়েছেন, তাঁদের ফলাফল স্থগিত করা হবে এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।

সম্প্রতি বহিষ্কারাদেশের চিঠি নিজ নিজ বিভাগে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বহিষ্কারাদেশের চিঠি ইতিহাস বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় বিভাগটির মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর নামপরিচয় উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নামটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মৃত শামীম মোল্লার নাম। ওই চিঠিতে শামীম মোল্লার নামের পাশে ব্র্যাকেটে ‘মৃত’ লেখা রয়েছে। বিষয়টি ঘিরে ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের শাস্তি দিয়েছে। সেই তালিকায় একজন মৃত মানুষকেও সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: মারধরে অভিযুক্ত চারজন ছাত্রদলের, একজন সমন্বয়ক১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের ২৮৯ নেতা-কর্মী সাময়িক বহিষ্কার১৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ রনগর

এছাড়াও পড়ুন:

পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের


ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।

কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।

এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।

মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।

উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর