পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, ‘‘ইথারে ভেসে থাকা মানুষের কথা ও শব্দগুলো একসময় বিজ্ঞানীরা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবেন।  আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে আবার পুনরুদ্ধার করতে হবে।’’

এজন্য হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে সরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন কাজে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন সুপ্রদীপ চাকমা।

আজ বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি মিলনায়তনে ‘প্রাথমিক স্তরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যালোচনা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘‘আমাদের দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় গোষ্ঠীর ৪১টি ভাষা এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কেবল ৫টি ভাষাকে জাতীয়ভাবে মাতৃভাষা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন কিছু সম্প্রদায় রয়েছে যার জনগোষ্ঠী অনেক কম। তাদেরও ভাষা আছে। যেমন লুসাই, তাদের মোট জনগোষ্ঠী আড়াই হাজার। তাদের মাতৃভাষাও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’’

আমাদের বাকি ভাষাগুলোর কথা বা ভাষাকে উদ্ধার করা ও টিকিয়ে রাখা জরুরি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় মানুষের সংখ্যা অনেক কম। আমাকে এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর চিন্তা করতে হয়। পার্বত্য অঞ্চলের লুসাই, চাক, বোম সম্প্রদায়ও দেশের মূলধারার সাথে এক হতে চায়। তারা পিছিয়ে থাকতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই। আপাতত প্রি-প্রাইমারি থেকে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত শুরু করব। পরে উপজেলা পর্যায়ে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করে থাকার ব্যবস্থা করে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই। যাতে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ে।’’

‘‘প্রশিক্ষিত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা আমার আরেকটি লক্ষ্য। আমার দ্বিতীয় এজেন্ডা হলো লাইভলি হুড ডেভেলপমেন্ট। পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো। আর আমার তৃতীয় এজেন্ডা হলো, পরিবেশ। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক এলাকায় পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। আমরা কাপ্তাই লেক ও নদী-নালা-ঝিরির পানি সঠিক পদ্ধতিতে ধরে রেখে পানির সমস্যার সমাধান করতে চাই।’’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ মতামত ও উন্মুক্ত আলোচনায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষক সংকট, রুটিন সংক্রান্ত বিষয়াদি, ভাষাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদায়ন, ভাষাভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম, এমএলই যথাযথ বাস্তবায়নের রূপরেখা, মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারকরণ, অন্যান্য ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসে।

উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশের  বর্ণনা মতে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য চাকমা ভাষার ৯৩ হাজার ১৬২টি, মারমা ভাষার ৪৫ হাজার ২১৯টি, ককবরক ভাষার ৩৫ হাজার ৫৬০টি, সাদরি ভাষার ৩ হাজার ৮৪৬টি এবং গারো ভাষার ১৫ হাজার ৩৮টিসহ সর্বমোট ১ লাখ ৯২ হাজার ৮২৫টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ এবং সরবরাহ করা হয়েছে। সরকার প্রশিক্ষত শিক্ষক দ্বারা শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা, স্ব স্ব ভাষার শিক্ষক নিয়োগ, যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ এবং মাঠ পর্যায়ে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। মাতৃভাষাভিত্তিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে মুদ্রণ ও বিতরণ, মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীদের শিখন কার্যক্রম যথাযভাবে বাস্তবায়ন করাসহ অবশিষ্ট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্যান্য ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা ছিল কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো.

মাসুদ রানার সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. মনিরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মডারেটর মাসুদ আকতার খান, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এনসিটিবি’র ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল মুমিন মোছাব্বির।

ঢাকা/হাসান

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • জাফলংসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • পরিবেশবান্ধব পর্যটনে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি