ইলিশ ধরার নিষাধাজ্ঞা ১৫ দিন করার পরামর্শ
Published: 2nd, May 2025 GMT
দেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধের সময়সীমা কমিয়ে ১৫ দিন করার পরামর্শ দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। সাধারণত ইলিশ মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এ ছাড়া জলদস্যু, বালুদস্যু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
ইলিশ শিকারের এই নিষেধাজ্ঞা সাধারণত আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে নির্ধারণ করা হয়, যা ইংরেজি ক্যালেন্ডারে অক্টোবর মাসে পড়ে। যেমন ২০২২ সালে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ ছিল। এভাবে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন, সরকার নিবন্ধিত জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রদান করে, যেমন প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
তবে ইলিশের ক্ষেত্রে এটিই একমাত্র নিষেধাজ্ঞা নয়। ইলিশের পুরো প্রজনন, আহরণ ও সংরক্ষণের চক্রজুড়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। যেমন মার্চ-এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ (ইলিশসহ) থাকে। মূলত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মে–জুলাই মাসের মধ্যে ‘জাটকা সংরক্ষণের’ জন্য বিশেষ এলাকায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, যা মূলত বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরসহ কিছু নির্দিষ্ট জেলায় তা কার্যকর করা হয়।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মৎস্যজীবী ও জেলে জনগোষ্ঠীর জন্য আরও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন জলমহাল ইজারা প্রথা বাতিল করে লাইসেন্স বা নিবন্ধন প্রথা চালুর পরামর্শ দিয়েছে সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া ফিশিং ট্রলার মৎস্যজীবীদের জন্য গেজেট বাস্তবায়ন এবং নিষিদ্ধকালীন বিকল্প কর্ম ও রেশনিংসহ সামাজিক সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
দাদন প্রথা বিলোপে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, সহজ শর্তে বিনা সুদে ঋণ প্রদান এবং শ্রমিকদের জন্য পরিচয়পত্র ও ট্র্যাকিং-মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া মাছ ধরা ঘাটে অবকাঠামো ও বরফকল নির্মাণ, উপকূলীয় জেলেদের জন্য জমি বরাদ্দ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে বুধবার মধ্যরাত থেকে তিন মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক সুষ্ঠু প্রজনন বৃদ্ধি, মজুদ ও ভারসাম্য রক্ষায় সকল প্রকার মাছ শিকার, শুকানো,পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) জানায়, কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও মাছের স্বাভাবিক বংশ বৃদ্ধির লক্ষে বুধবার রাত ১২টা থেকে ৩১ জুলাই পর্ষন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে হ্রদে পানি উঠা নামার ওপর নির্ভর করবে তিন মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও সময় বাড়ানো হবে কিনা। এ বছর বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ ঘাটে প্রায় ৮ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করেছে, যার রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছরে হ্রদে ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করার কথা রয়েছে।
বিএফডিসি রাঙামাটির বিপণন কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দৌজা জানান, বুধবার রাত ১২টা থেকে কাপ্তাই সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে যেসব মাছ হ্রদ থেকে আহরণ করা হয়েছে সেগুলো জেলেরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ বিক্রি ও প্যাকেজজাত পরিবহন করতে পারবেন। বন্ধকালীন সময়ে হ্রদে মাছ শিকার রোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বন্ধ থাকবে স্থানীয় সকল বরফ কলগুলোও।
১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফূলী নদীর উপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশাল জলধার সৃষ্টি হয়। এ বাঁধের ফলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হচ্ছে। রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের ওপর নির্ভর করেন ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে।