দেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধের সময়সীমা কমিয়ে ১৫ দিন করার পরামর্শ দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। সাধারণত ইলিশ মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

এ ছাড়া জলদস্যু, বালুদস্যু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

ইলিশ শিকারের এই নিষেধাজ্ঞা সাধারণত আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে নির্ধারণ করা হয়, যা ইংরেজি ক্যালেন্ডারে অক্টোবর মাসে পড়ে। যেমন ২০২২ সালে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ ছিল। এভাবে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন, সরকার নিবন্ধিত জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রদান করে, যেমন প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

তবে ইলিশের ক্ষেত্রে এটিই একমাত্র নিষেধাজ্ঞা নয়। ইলিশের পুরো প্রজনন, আহরণ ও সংরক্ষণের চক্রজুড়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। যেমন মার্চ-এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ (ইলিশসহ) থাকে। মূলত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মে–জুলাই মাসের মধ্যে ‘জাটকা সংরক্ষণের’ জন্য বিশেষ এলাকায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, যা মূলত বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরসহ কিছু নির্দিষ্ট জেলায় তা কার্যকর করা হয়।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মৎস্যজীবী ও জেলে জনগোষ্ঠীর জন্য আরও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন জলমহাল ইজারা প্রথা বাতিল করে লাইসেন্স বা নিবন্ধন প্রথা চালুর পরামর্শ দিয়েছে সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া ফিশিং ট্রলার মৎস্যজীবীদের জন্য গেজেট বাস্তবায়ন এবং নিষিদ্ধকালীন বিকল্প কর্ম ও রেশনিংসহ সামাজিক সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

দাদন প্রথা বিলোপে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, সহজ শর্তে বিনা সুদে ঋণ প্রদান এবং শ্রমিকদের জন্য পরিচয়পত্র ও ট্র্যাকিং-মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

এ ছাড়া মাছ ধরা ঘাটে অবকাঠামো ও বরফকল নির্মাণ, উপকূলীয় জেলেদের জন্য জমি বরাদ্দ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা ও করিমপুর চা বাগানের মধ্যখানে লালচে রঙের ন্যাড়া টিলা। মাটি কেটে নেওয়ায় বির্পযস্ত সেই টিলার গা জুড়ে গর্ত করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে নীল-লেজ সুইচোরা পাখিরা।

নানা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করে দিনভর চলে উড়াউড়ি আর বেলা-অবেলাজুড়ে চলে নানা সুরের মনমতানো গান। গ্রীষ্মকালে এ এলাকায় বেড়াতে আসা পাখিদের মধ্যে অন্যতম এই নীল-লেজ সুইচোরা পাখি।

টিলার পাশে দাঁড়িয়ে একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যায় টিলার গায়ে ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত। গর্তগুলোর প্রতিটিই একেকটি বাসা, সুইচোরা পাখির বাসা। কোন কোন বাসায় বাচ্চা রয়েছে। আবার কোন বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে স্ত্রী সুইচোরা।

বিকেলের পড়ন্ত রোদে টিলার গায়ের উঁচু গাছটির মরা ডালগুলোতে সরু, লম্বা ঠোঁট ও নীল লেজের কয়েকটি সুইচোরাকে বসে থাকতে দেখা গেল। কিছুক্ষণ পরপর তারা উড়ে গিয়ে শূন্য থেকে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় পোকা ধরে নিয়ে আবারও গাছের ডালে গিয়ে বসছে। মা পাখিরা পোকা ধরে বাসায় নিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রজননের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত স্থানে বসবাস করে সুইচোরা পাখিরা। এরা আমাদের দেশীয় পাখি হলেও সব সময় একই অঞ্চলে বসবাস করে না এরা। তাই এদের অনেকে পরিযায়ী বলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরা পরিযায়ী বা আবাসিক পাখি নয়। এরা আমাদের স্থানীয় পাখি।

প্রকৃতি প্রেমি মুরাদ হোসেন বলেন, “এরা এদেশের আবাসিক ‘নীল-লেজ সুইচোরা’। ইংরেজী নাম Blue-tailed Bee-eater. Meropidae নাম এই পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Merops Philippinus.”

স্থানীয়রা এদের ‘নীল চড়ুই’ বলে জানেন। তবে সবসময় এদের দেখা মেলে না। কেবল গ্রীষ্মকালেই কোথা থেকে যেন ঝাঁক বেঁধে চলে আসে এরা। 

করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, “বাগানের পাশে পরিত্যাক্ত ন্যাড়া টিলার পেটে গর্ত করে গত তিনমাস ধরে পাখিগুলো বসবাস করছে। আগে ফি-বছর তারা আসলেও এখন আর আগেরমতো আসে না। মাঝে মাঝে এদের দেখা মেলে।”

ওই বাগানের বাসিন্দা দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, “পাখি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস শুরু করে। কোন বাধা বিপত্তি এলে তারা চলে যায়। ৩/৪ বছর পর এদের দেখা মিলল। এরা এখানে নিরাপদে প্রজনন করতে পারছে। জুন মাসের শেষে তারা আবার চলে যাবে।”

শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার গাজীপুরের পাখি বিশেষজ্ঞ আল্লামা শিবলী সাদিক বলেন, ‘‘নীল-লেজ সুইচোরা পাখিদের পরিযায়ী বা আবাসিক বলা যাবে না। এরা আমাদের দেশীয় পাখি। প্রজননের সময় তারা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে বলে এদের অনেকেই মনে করেন তারা পরিযায়ী বা আবাসিক। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তাদের প্রজনন সময়। এরা পাহাড়ি টিলার নরম মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। গর্তের মধ্যেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। পরে বাচ্চাদের নিয়ে অন্য স্থানে চলে যায়।”

প্রাপ্তবয়স্ক এই পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার, ওজন ৩৮ থেকে ৫০ গ্রাম। নীল-সবুজ পালক বিশিষ্ট পাখিটির পেছনের অংশ ও লেজ নীল। গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি, চোখে কাজল টানা এবং পেট আপেলের মতো সবুজ। 

চোখ লালচে বাদামি থেকে গাঢ় লাল। কোমর, লেজ ও লেজের নিচের অংশ নীল। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই বা পালক রয়েছে। 

এদের ঠোঁট সরু, লম্বা ও কালো। নিচের দিকে খানিকটা বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক নীললেজ সুইচোরার দেহের রং অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে। স্ত্রী ও পুরুষ একই রকম দেখতে।

এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এসময় পাহাড়ের গায়ে বা নদী ও খালপাড়ে প্রায় দুই মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এরা। সেখানে ৫-৬টি ডিম পাড়ে, ডিমের রং সাদা। ২১-২৬ দিনে ডিম ফোটে এবং ২০-২৭ দিন পরে বাচ্চারা উড়তে শেখে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল