বেড়ানোর কথা বলে পাচারের চেষ্টা, ভারতীয় গ্রেপ্তার
Published: 2nd, May 2025 GMT
দুই নারী ও এক শিশুকে ভারতে পাচারের চেষ্টা করার সময় শংকর অধিকারী (৩৯) নামে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেল ৫টার দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (২ মে) সকালে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার শংকর অধিকারী ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাগদা থানার পূর্বহুদা গ্রামের নুকুল অধিকারীর ছেলে।
আরো পড়ুন:
আখাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক আহত
ট্রেনে বিজিবির অভিযান, কোটি টাকার হেরোইন জব্দ
বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঘাডাঙ্গা বিওপির নায়েক আবু হানিফ ভারতীয় নাগরিক শংকর অধিকারীকে গ্রেপ্তার করেন। সীমান্ত পিলার-৬০/৩৩ সংলগ্ন বাংলাদেশের ১ কিলোমিটার ভেতরে কাঞ্চনপুর গ্রামের ব্রিজের ওপর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রেপ্তার শংকর অধিকারী দুই নারী ও এক শিশুকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছিলেন। বিজিবির টহল দল তাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছ থেকে ৫০ হাজার ১১০ টাকা, ৮৫০ ভারতীয় রুপী এবং ৭ ওমানি রিয়েল জব্দ হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর শংকর অধিকারী ও দুই নারীর দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই শুরু করে বিজিবি। বেরিয়ে আসে নারী ও শিশু পাচারের চাঞ্চল্যকর কৌশলের অজানা তথ্য।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির বরাতে বিজিবি জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর ৬ মাসের ভিসা নিয়ে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন শংকর অধিকারী। এরপর তিনি মাদারীপুরে রাজৈর থানার বড়খোলা গ্রামে তার আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নেন। সেখানে তিনি কৌশলে এক কিশোরীকে (১৩) বিয়ে করে ভারতে ফিরে যান। গত ১৭ এপ্রিল আবারো বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন শংকর অধিকারী। এরপর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নিজের কথিত কিশোরী স্ত্রী, প্রতিবেশী যুথিকা বালা (২৯) ও তার ছেলে বাধন বৈদ্যকে নিয়ে মহেশপুর সীমান্তে আসেন শংকর অধিকারী। একপর্যায়ে দালালদের মাধ্যমে দুই নারী ও এক শিশুকে ভারতে পাচারের চেষ্টাকালে বিজিবির জালে আটকা পড়েন তিনি।
শংকরের কথিত কিশোরী স্ত্রী ও অপর নারী যুথিকা হালদারের বরাতে বিজিবি জানায়, ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে পাচারের জন্য দুই নারী ও এক শিশুকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসেন শংকর অধিকারী। সীমান্ত এলাকায় পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত ভিকটিম নারী ও শিশু শংকর অধিকারীর আসল উদ্দেশ্য বুঝতেও পারেননি। ভিকটিম নারী ও শিশু ভারতে প্রবেশের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না বলে তারা বিজিবির কাছে দাবি করেছেন।
শংকর অধিকারী বিজিবির কাছে জানিয়েছেন, কথিত স্ত্রীসহ দুজন নারী এবং এক শিশুকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনৈক দালাল আনোয়ারের সঙ্গে ৪৭ হাজার টাকার চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ওই দুই নারী ও শিশুকে ভারতে অনুপ্রবেশ করানোর পরে কথিত দালাল আনোয়ারকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল শংকরের।
বিজিবি বলছে, আটক মানব পাচারকারী চক্রের হোতা শংকর অধিকারী কৌশলে নিজের টাকা ব্যয় করে ওই তিনজনকে ভারতে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ভারতে নেয়ার পরে ওই তিনজনকে বিক্রি করে দিয়ে নিজের টাকা উসুল করার পরিকল্পনা ছিল পাচারকারীর। মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন নানা কৌশলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী ও শিশু পাচারের চেষ্টা করছে। গ্রেপ্তার শংকর অধিকারীকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার পাচারকারী চক্রের হোতা ভারতীয় নাগরিক শংকর অধিকারীর বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। নারী শিশুসহ তিন বাংলাদেশিকে যশোরের জাস্টিস এন্ড কেয়ার সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র আটক গ র প ত র কর এক শ শ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’