ধারণা করা গিয়েছিল, গত বছরের ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল আদায় করে নিতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের পেছনে ফেলে বুধবার মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলো। এ জন্য সেখানকার প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ পেতে পারেন।
তফসিল অনুযায়ী জাকসু নির্বাচন হবে ৩১ জুলাই। ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো.
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল ঘোষণা না করতে পারলেও ডাকসু নির্বাচনের পথনকশা দিয়েছে। এরপর থেকে ক্যাম্পাস সরগরম হয়ে ওঠে এবং ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব ছাত্রসংগঠন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। গত বছর ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জল্পনা চলছে। এককভাবে নির্বাচন হলে ডাকসুতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। কিন্তু জোটগত নির্বাচন হলে হিসাব–নিকাশ বদলেও যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বার ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। আর স্বাধীন দেশের ৫৩ বছরে মাত্র আটবার নির্বাচন হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই বছর ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দুবার ও এরশাদের আমলে দুবার ডাকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ আছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ অধিকাংশ আসনে জয়ী হতো। স্বীকার করতে হবে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী জোরদার আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার সূচনা হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
এর বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত শুধু এই চার বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে যে শূন্যতা বিরাজ করছে, তারও অন্যতম কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জাকসুর মধ্য দিয়ে যে ভোটের সূচনা হতে যাচ্ছে, সেটি আদর্শ নির্বাচন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা করি। জাকসুর তফসিল ঘোষণার পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এগিয়ে আসুক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তফস ল ঘ ষ র তফস ল স গঠন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।
আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।
লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।