ধারণা করা গিয়েছিল, গত বছরের ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল আদায় করে নিতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের পেছনে ফেলে বুধবার মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলো। এ জন্য সেখানকার প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। 

তফসিল অনুযায়ী জাকসু নির্বাচন হবে ৩১ জুলাই। ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো.

মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৯ জুলাই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ জুলাই এবং প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ১৫ জুলাই। এরপর ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।

 এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল ঘোষণা না করতে পারলেও ডাকসু নির্বাচনের পথনকশা দিয়েছে। এরপর থেকে ক্যাম্পাস সরগরম হয়ে ওঠে এবং ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব ছাত্রসংগঠন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। গত বছর ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জল্পনা চলছে। এককভাবে নির্বাচন হলে ডাকসুতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। কিন্তু জোটগত নির্বাচন হলে হিসাব–নিকাশ বদলেও যেতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বার ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। আর স্বাধীন দেশের ৫৩ বছরে মাত্র আটবার নির্বাচন হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই বছর ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দুবার ও এরশাদের আমলে দুবার ডাকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ আছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ অধিকাংশ আসনে জয়ী হতো। স্বীকার করতে হবে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী জোরদার আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার সূচনা হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।  

এর বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত শুধু এই চার বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। 

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে যে শূন্যতা বিরাজ করছে, তারও অন্যতম কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জাকসুর মধ্য দিয়ে যে ভোটের সূচনা হতে যাচ্ছে, সেটি আদর্শ নির্বাচন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা করি। জাকসুর তফসিল ঘোষণার পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এগিয়ে আসুক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তফস ল ঘ ষ র তফস ল স গঠন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি

বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ নেওয়ার সময় কিংবা ছক্কা ঠেকাতে গিয়ে অনেক সময় শরীরের ভারসাম্য থাকে না। ফিল্ডাররা তাই বাধ্য হয়েই একটি কৌশল অবলম্বন করেন।

বলটি ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যান। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে থাকতেই লাফ দিয়ে বলটি হাতের ধাক্কায় আবারও ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান এবং তারপর ক্যাচটি নেন কিংবা ছক্কা বাঁচান। এই কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে একাধিকবার শূন্যে লাফিয়েও বল হাত দিয়ে স্পর্শ করেন।

ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) নতুন নিয়ম অনুযায়ী এভাবে ক্যাচ নেওয়া কিংবা ছক্কা বাঁচানো আর বৈধ থাকছে না।

আরও পড়ুনস্বপ্ন পূরণ হতে ৬৯ রান দরকার, এবার কি পারবে ‘চিরকালের চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা১০ ঘণ্টা আগে

ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে নতুন এ নিয়ম কার্যকরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে নিয়মটি সংযুক্ত হবে চলতি মাসেই। এরপর এমসিসির বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে আগামী বছরের অক্টোবরে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একজন ফিল্ডার বাউন্ডারি সীমানার বাইরে লাফিয়ে শুধু একবারই বল স্পর্শ করতে পারবেন। এরপর সীমানার ভেতরে ঢুকে তাঁকে ক্যাচ নিতে হবে। ২০২৩ সালে বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্সের জর্ডান সিল্কের ক্যাচ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে (লাফিয়ে) দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান ব্রিসবেন হিটের মাইকেল নেসের। শূন্যে লাফিয়ে বলটি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে তিনি সীমানার বাইরেই পা রাখেন এবং দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ক্যাচটি নেন। এমসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী এমন ক্যাচ আর আইনসিদ্ধ হবে না।

নেসের সেই ক্যাচ নেওয়ার পর ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ২০২০ বিগ ব্যাশে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ অনেকটা এভাবেই নিয়েছিলেন ম্যাট রেনশ—যেখান থেকে তিনি ওভাবে ক্যাচটি নেওয়ার প্রেরণা পান। সে সময় দুটি ক্যাচের বৈধতা নিয়েই বিতর্ক হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিলেন, বাউন্ডারি সীমানার ক্যাচের নিয়ম পাল্টানো হোক, যেটা সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১০ সালে।

আরও পড়ুনম্যাক্সওয়েল, ক্লাসেন, পুরান—জাতীয় দল ছাড়তেই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অধিনায়ক১২ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের শুরুতে ক্যাচ নেওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ এই নিয়ম পুনরায় যাচাইয়ের জন্য এমসিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল আইসিসির ক্রিকেট কমিটি। এরপর দুই পক্ষই এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে এবার সেটি হালনাগাদ করল। এ বিষয়ে এমসিসির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রতিটি সদস্যদেশের বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে আইসিসি। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান নিয়মের অধীন ‘অসাধারণ’ ফিল্ডিং দেখা গেলেও সেটা ‘অস্বাভাবিক কিছু ক্যাচেরও জন্ম দিয়েছে, যা সিংহভাগ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের চোখে অবৈধ’।

নেসেরের ক্যাচের উদাহরণ টেনে এমসিসি বলেছে, ব্রিসবেন হিটের এই ফিল্ডার সীমানার ‘ভেতরে’ ক্যাচটি নেওয়া সম্পন্ন করার আগে ‘বানি হপড’ (ছোট্ট লাফ) করেছেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘এমসিসি নতুন আইন করেছে, যেখানে সীমানার বাইরে “বানি হপড” পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে। তবে এসব ক্যাচে ফিল্ডার সীমানার ভেতরে থেকে বল শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বাইরে পা রাখার পর ক্যাচটি ধরতে ডাইভ দিয়ে ফিরতে পারবেন। আমাদের সমাধান হলো, সীমানার বাইরে চলে যাওয়া ফিল্ডারকে শূন্যে থাকতে একবারই বল স্পর্শ করতে দেওয়ার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া এবং তারপর ডেলিভারিটির বাকি সময় সম্পন্ন করতে সীমানার ভেতরে থাকতে হবে।’

রিলে অর্থাৎ একাধিক ফিল্ডার মিলে ক্যাচের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে বল স্পর্শ করা ফিল্ডারকে সীমানার ভেতরে ফিরতে হবে তাঁর সতীর্থ ক্যাচ নিলেও।

১৭ জুন শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যকার গল টেস্ট দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। এই ম্যাচের সঙ্গে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনও হালনাগাদ করা হবে। নতুন এই নিয়ম কার্যকর হবে আগামী বছরের অক্টোবর থেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেলে তল্লাশি চালানো যুবক গ্রেপ্তার 
  • স‌চিবাল‌য়ে কর্মচারী‌দের বি‌ক্ষোভ, চল‌বে মঙ্গলবারও 
  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি