জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রার্থিতা মনোনয়ন ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ফৌজদারি মামলার আসামিদের না রাখাসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩ দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদ। 

শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী। 

তাদের দাবিগুলো হলো- বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফৌজদারি মামলার আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারীদের নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিশ্চিত করতে সংশোধিত নীতিমালা ঘোষণা করতে হবে। 

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল এ দেশের ছাত্ররাজনীতির এক প্রগতিশীল বাঁক। সেই ঐতিহাসিক গণপ্রতিরোধে যারা হামলা চালিয়েছিল, যারা প্রগতি ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সহিংস রূপ নিয়েছিল এবং যারা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছিল- তাদের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের প্রতি চরম অপমান। আমরা লক্ষ্য করেছি, সেই সহিংস ঘটনাগুলোর অভিযুক্তদের কেউ কেউ প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ পর্বে অংশ নিয়েছে। আবার ক্যাম্পাসে গর্বভরে পুনরাগমনও করেছে। এই ঘটনা গণতন্ত্রের নামে চরম দ্বিচারিতা এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি অবমাননার শামিল। 

তারা আরও বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সাধুবাদ জানাচ্ছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অচলায়তনের অবসানের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে এবং দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি করেছে। জাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্রে আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ধারা ৩.

৪, ৩.৬, ৩.৯, ৩.১০, ৩.১১ ও ৩.১২ বিবেচিত হয়েছে। এই সংস্কারগুলো ছাত্র সংসদকে আরও কার্যকর, অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক করে তুলবে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গঠনতন্ত্রে এখনও কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ও অস্পষ্ট দিক রয়ে গেছে, যা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। 


 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি

এই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না।’ তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ থাকলে বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, নারী, জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়িত মানুষের কোনো দাবি আদায় হবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। শুক্রবার বেলা তিনটার পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়।

কোনো একক দলের পক্ষে শেখ হাসিনার কায়েম করা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বদল সম্ভব না বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা নির্বাচনী গণতন্ত্রের কথা বলছি। কিন্তু এই নির্বাচনী গণতন্ত্র যদি খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষার গণতন্ত্রে পরিণত হতে না পারে, তাহলে এই গণতন্ত্র টেকে না। সে কারণে আমরা রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, দেশের সামাজিক ব্যবস্থা, দেশের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা—সবকিছু পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, সে জন্য দেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই এখন প্রধান কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে এমন একটা লক্ষ্য নিয়ে সামনে যাচ্ছে, কোনো কিছুই আর তাকে পিছুটান দিতে পারবে না। সেই পিছুটান যারা দেবে, যারা কোনো না কোনোভাবে, অন্য কোনো নামে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে চাইবে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি করতে চাইবে, তাদের এ দেশের জনগণ আর গ্রহণ করবে না। কাজেই এ দেশে জাতীয়তাবাদের নামে যেমন ফ্যাসিবাদ চলবে না, কোনো মতবাদ দিয়ে কোনো ফ্যাসিবাদ এ দেশে গ্রহণযোগ্য হবে না।’

‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—সবকিছুই অপরিহার্য’ উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক উত্তরণ হবে না।’ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি না করে জুলাই জাতীয় সনদ কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এ দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এই অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এ দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে এবং মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা, স্বৈরতন্ত্র তৈরির সাংবিধানিক কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অনেক সময় চরম বুদ্ধিমান মানুষেরা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়; জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবার সেই পরিচয়টা দিয়েছে। তারা এখন বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টকর, দুঃখের, লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকেরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু: ৩ দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের ব
  • খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি প্রোগ্রামে ডিপ্লোমা, অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন ফি ১০০০
  • অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি
  • রূপগঞ্জে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লিফলেট বিতরণ