বিচারের আগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সারাদেশে জেলা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বিচার, সংস্কার এবং শহীদ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন না করে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। 

শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি’তে সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। তারা আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, শাহবাগে সমাবেশ করবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, দক্ষিণ গেটে হবে কর্মসূচি। 

বহু বছর ধরে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সভা-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। আর নয়াপল্টনে কর্মসূচি করে বিএনপি। উত্তর গেটে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো। আওয়ামী লীগের এলাকায় কর্মসূচি করার চিন্তা থেকে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা এসসিপি। 
সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তৃতা করেন। 

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার কমিশন সুস্পষ্টভাবে সুপারিশ করেছে– 

গণহত্যা, লুটপাটকারী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িতরা কোনোভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তাবে সম্মত হচ্ছে না। আমরা সন্দেহ করছি, এই নির্বাচন কমিশন দলটির স্বার্থ দেখবে। তিনি বলেন, জাতি আমাদের ওপর ৫ আগস্ট আস্থা রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের দিকে এখনও তাকিয়ে আছে। এনসিপি দ্রুত সময়ে সুসংগঠিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে যাব; প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব। 

পাড়া-মহল্লায় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় প্রস্তুত হোন, আমরা আসছি। দ্রুত সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। পাড়া-মহল্লায় আমরা জনতার আদালত তৈরি করব। সরকার যদি বিচার করতে ব্যর্থ হয়, জনতার আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে। 
নৌকাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে– মন্তব্য করে সমাবেশে সভাপতিত্ব করা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটা ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো প্রশ্ন থাকে না। বিচার হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। 

নাহিদ আরও বলেন, যারা বলছেন– হাসিনার গণহত্যা প্রমাণিত নয়; তাদের বলব, আপনারা সাংবাদিক নন। আপনারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর। শুধু বাংলাদেশে নয়; জাতিসংঘের রিপোর্টে স্পষ্ট প্রমাণ হয়েছে– জুলাইয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের নির্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, নতুন সংবিধানের দাবি এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

ঢাকা মহানগর এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন সমাবেশস্থলে। দক্ষিণ গেট থেকে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেন। 
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত এনসিপির সমাবেশে অংশ নেন চব্বিশের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা। তারা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করেন। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ৫ আগস্ট রক্ত দিয়ে মানুষ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে– আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। 

আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে দায় শুধু জাতীয় নাগরিক পার্টির নয়। এই দায় বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি পক্ষের। আমরা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একযোগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এই প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টি। তারা নব্বইয়ে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখন তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক দোসর– সুশীল সমাজের কেউ, সাংবাদিক কিংবা বিচারপতিও, যারা দলটিকে রাজনীতিতে ন্যূনতম স্পেস দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দুর্গ গড়ে তুলবে।
সামান্তা শারমিন বলেন, যেখানে যখনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে দেখবেন, মিছিল দেখবেন, তখনই প্রতিবাদ করবেন এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করবেন। এ দেশে আর কোনো দিন আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাজনূভা জাবীন, আশরাফ মাহদী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.

তাসনিম জারা, নাহিদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসেইন, মাহিন সরকার, হুমায়রা নূর, সালেহ উদ্দীন সিফাত, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম র র জন ত র জন ত ক এনস প র মহল ল য় গণহত য দলট র আওয় ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে এক সপ্তাহে তিন ব্যাংক এমডির পদত্যাগ

গত সপ্তাহে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আর মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন।

জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ করতে হয়। হঠাৎ করে দুই এমডির পদত্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই তিন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংক ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ও মেঘনা ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েকজন এমডি কেন পদত্যাগ করেছেন, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং নিয়মে কোনো এমডি পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার কারণ জানাতে হয়। তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না, এরপরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পদত্যাগ করা এমডিকে কাজে ফিরিয়ে দেওয়ার উদাহরণও আছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। গত মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পর্ষদের কয়েকজন সদস্য। পরদিনই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তবে ব্যাংকটি লিখিতভাবে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এমডি লক্ষ্য পূরণ করতে না করায় তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন, এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কমার্স ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন।

এদিকে গত সোমবার সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন পদত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে চলতি বছরের ৪ মে তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

গত রোববার পদত্যাগ করেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল। গত বছরের এপ্রিলে ৩ বছরের জন্য তিনি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগ দেন। তবে ১৫ মাসের মাথায় এসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

জানতে চাইলে কাজী আহ্সান খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পর্ষদ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আমাকে ছুটিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নিজেই পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলেই আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।’

চলতি বছরের মার্চে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারধারী পরিচালকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁদের দুজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ