আ’লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হবে না
Published: 3rd, May 2025 GMT
বিচারের আগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সারাদেশে জেলা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বিচার, সংস্কার এবং শহীদ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন না করে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি’তে সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। তারা আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, শাহবাগে সমাবেশ করবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, দক্ষিণ গেটে হবে কর্মসূচি।
বহু বছর ধরে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সভা-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। আর নয়াপল্টনে কর্মসূচি করে বিএনপি। উত্তর গেটে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো। আওয়ামী লীগের এলাকায় কর্মসূচি করার চিন্তা থেকে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা এসসিপি।
সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তৃতা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার কমিশন সুস্পষ্টভাবে সুপারিশ করেছে–
গণহত্যা, লুটপাটকারী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িতরা কোনোভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তাবে সম্মত হচ্ছে না। আমরা সন্দেহ করছি, এই নির্বাচন কমিশন দলটির স্বার্থ দেখবে। তিনি বলেন, জাতি আমাদের ওপর ৫ আগস্ট আস্থা রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের দিকে এখনও তাকিয়ে আছে। এনসিপি দ্রুত সময়ে সুসংগঠিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে যাব; প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব।
পাড়া-মহল্লায় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় প্রস্তুত হোন, আমরা আসছি। দ্রুত সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। পাড়া-মহল্লায় আমরা জনতার আদালত তৈরি করব। সরকার যদি বিচার করতে ব্যর্থ হয়, জনতার আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে।
নৌকাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে– মন্তব্য করে সমাবেশে সভাপতিত্ব করা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটা ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো প্রশ্ন থাকে না। বিচার হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
নাহিদ আরও বলেন, যারা বলছেন– হাসিনার গণহত্যা প্রমাণিত নয়; তাদের বলব, আপনারা সাংবাদিক নন। আপনারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর। শুধু বাংলাদেশে নয়; জাতিসংঘের রিপোর্টে স্পষ্ট প্রমাণ হয়েছে– জুলাইয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের নির্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, নতুন সংবিধানের দাবি এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
ঢাকা মহানগর এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন সমাবেশস্থলে। দক্ষিণ গেট থেকে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেন।
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত এনসিপির সমাবেশে অংশ নেন চব্বিশের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা। তারা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করেন। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ৫ আগস্ট রক্ত দিয়ে মানুষ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে– আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে দায় শুধু জাতীয় নাগরিক পার্টির নয়। এই দায় বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি পক্ষের। আমরা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একযোগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এই প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টি। তারা নব্বইয়ে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখন তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক দোসর– সুশীল সমাজের কেউ, সাংবাদিক কিংবা বিচারপতিও, যারা দলটিকে রাজনীতিতে ন্যূনতম স্পেস দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দুর্গ গড়ে তুলবে।
সামান্তা শারমিন বলেন, যেখানে যখনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে দেখবেন, মিছিল দেখবেন, তখনই প্রতিবাদ করবেন এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করবেন। এ দেশে আর কোনো দিন আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাজনূভা জাবীন, আশরাফ মাহদী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম র র জন ত র জন ত ক এনস প র মহল ল য় গণহত য দলট র আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
খামেনির ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পর ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মঙ্গলবার রাতে ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি ‘কোনো দয়া না দেখানোর’ আহ্বান জানানোর পর, ইরান ইসরায়েলে দুই দফা ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২:৪০ টার কিছু পরেই ইসরায়েলের বিশাল অংশ জুড়ে প্রথম হামলায় সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং প্রায় ১৫টি প্রজেক্টাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৪০ মিনিট পরে প্রায় ১০টি রকেটের পরবর্তী হামলা শুরু হয় এবং মধ্য ইসরায়েলি সম্প্রদায় ও পশ্চিম তীরের বেশ কয়েকটি বসতিতে সতর্কতা জারি করে।
হামলার কয়েক মিনিট আগে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে এবং আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন খামেনি
২৪ ঘণ্টায় ২৮টি ‘শত্রু বিমান’ ভূপাতিত করার দাবি ইরানের
ইরানের পরপর হামলায় কোনো আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মধ্য ইসরায়েলের একটি পার্কিং লটে বিস্ফোরণে অসংখ্য গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ফলে লেগেছে নাকি ইসরায়েলি বাধার ফলে ধ্বংসাবশেষের কারণে লেগেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) পরবর্তীতে ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দাবি করেছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে, “ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে গর্বিত অপারেশন অনেস্ট প্রমিজ ৩-এর ১১তম ঢেউ’ চালানো হয়েছে। আরআরজিসি আরো দাবি করেছে যে, ইরানি বাহিনী ‘অধিকৃত অঞ্চলের আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে।’
বুধবার ভোরে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর খামেনি তার ইংরেজি ভাষার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার প্রতি কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।”
খামেনি ফারসি ভাষায় একটি শিয়া-থিমযুক্ত পোস্টও জারি করেছেন, যেখানে ‘যুদ্ধ শুরু হচ্ছে’ ও খায়বারে ফিরে আসার দাবি করা হয়েছে, যেখানে ৭ম শতাব্দীতে মুসলিম বাহিনী কর্তৃক ইহুদি অধিবাসীদের জয় করা হয়েছিল এমন একটি শহরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পোস্টটিতে একটি ব্যক্তির তরবারি হাতে দুর্গের মতো একটি গেটে প্রবেশের ছবি দেখানো হয়েছে, যার উপরে আকাশে আগুনের রেখা রয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বুধবার তেহরানের ১৮ নম্বর জেলার বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করে বলেছে, ইসরায়েল সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে এলাকায় পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
কিছুক্ষণ পরে, আইডিএফ জানায়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের রাজধানীতে নতুন করে হামলা শুরু করেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি।
তেহরানে হামলার পাশাপাশি, ইরানি সংবাদ সংস্থাগুলো রাজধানীর কাছে খোজির ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং কারাজ শহরে বিস্ফোরণের খবর জানিয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ফের অভিযান শুরু করেছে।
ইসরায়েল বলছে, ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পরমাণু বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর তাদের ব্যাপক আক্রমণ তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে তেহরান তার প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলে ৩৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ