বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ফিরোজা’য় পৌঁছানোর পর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাসায় ঢুকেছেন। এ সময় তাঁর দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান তাঁকে ধরে রাখেন এবং হাঁটতে সাহায্য করেন। তখন সেখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্লোগান দিতে থাকেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী কাতারের আমিরের বিশেষ ফ্লাইট।
দীর্ঘদিন পর দলনেত্রীর আগমনে আবেগাপ্লুত বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনতা সকাল থেকেই বিমানবন্দরের আশপাশে জড়ো হন। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে হাতে পতাকা নিয়ে আর কণ্ঠের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বিমানবন্দর এলাকার সড়কপথ।
বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তায় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা, ব্যানার ও খালেদা জিয়ার ছবি হাতে অবস্থান নেন। নিরাপত্তা ও যানজট মোকাবিলায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে, তার বাসার সামনেও নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই অবস্থান করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনুন
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে কূটনীতিকসহ ইরানে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁরা ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকিতে আছে। বিবিসি বাংলার খবরে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশের একজন কূটনীতিকের বাসভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনিসহ তেহরান দূতাবাসের ৪০ জন কর্মীকে নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু গোটা ইরানই যখন ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু, তখন সেটা কতটা নিরাপদ, তা ভেবে দেখার বিষয়।
মঙ্গলবার ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
কিন্তু ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কোনো কোনো সূত্র বলেছে, আরও বেশি। উল্লেখসংখ্যক বাংলাদেশি ইরানিদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁরা হয়তো ইরানি সমাজে মিশে যেতে পারবেন। কিন্তু যেসব বাংলাদেশি সমুদ্র অঞ্চলে মাছ ধরাসহ ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় আছেন। অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। আবার কিছু বাংলাদেশি ইরানের ডিটেনশন সেন্টারে (আটককেন্দ্র) আছেন। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি আছেন পেশাজীবী, যাঁরা গণমাধ্যম ও চিকিৎসাসেবা খাতে কাজ করছেন।
রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকসহ দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের নির্ধারিত বাসভবন ছেড়ে গেছেন। পররাষ্ট্রসচিব যতই বলুন সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ইরানে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে নিরাপদ স্থানে যাওয়া মোটেই সহজ নয়। ইরানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। এ অবস্থায় ইরান ত্যাগ করা কঠিন। স্থলপথে তুরস্ক, পাকিস্তান হয়তো যাওয়া গেলেও সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়সাপেক্ষ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তার ভাষ্যে জানা যাচ্ছে, ইরানে অবস্থিত সব বাংলাদেশি এখনো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সে ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরই উচিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। প্রয়োজনে ইরান সরকারের সহায়তা নিতে হবে। তবে এ সময় তারা কতটা সহায়তা দিতে পারবে, সেই প্রশ্নও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তেহরান শহর খালি করার কথা বলেন, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয় বটে। ইরানে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁদের বৈধ কাগজপত্র থাকুক আর না-ই থাকুক বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য হবে তাঁদের জীবন বাঁচানো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে জানা যাচ্ছে, এরই মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের ইরান থেকে সরিয়ে আনছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকে আমাদের নাগরিকদের ইরান থেকে সরিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিতে হবে। যেকোনোভাবেই বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে হবে।
আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। কিন্তু সেটি যদি না হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে; যা কারও কাম্য নয়। যুদ্ধ প্রলম্বিত ও বিস্তৃত হলে ইসরায়েলের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয়ও যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।