‘বিগ বস’খ্যাত অভিনেত্রী সোনিয়া বানসাল। বেশ কিছু বলিউড ও তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরই মধ্যে যশ-খ্যাতি-অর্থ সবই পেয়েছেন ২৮ বছরের সোনিয়া। হঠাৎ অভিনয়কে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

টিভি বা চলচ্চিত্র কোনো মাধ্যমেই আর কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনিয়া। এ নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই আলাপচারিতায় অভিনয় ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। পাশাপাশি জীবন নিয়ে উপলদ্ধির কথাও জানিয়েছেন।  

সোনিয়া বানসাল বলেন, “আমরা অন্যদের জন্য সবকিছু করতে এতটাই ব্যস্ত যে, নিজেদেরই ভুলে যাই। আমি উপলদ্ধি করতে পেরেছি, আমার সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী, তা জানি না। নিখুঁত হওয়া, প্রাসঙ্গিক থাকা এবং আরো বেশি অর্থ উপার্জনের এই দৌড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি।”

অর্থ-যশ-খ্যাতি থাকলেও সোনিয়ার শান্তি ছিল না। তা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “টাকা, খ্যাতি, জনপ্রিয়তা— আমার এসবই ছিল। কিন্তু আমার যা ছিল না, তা হলো শান্তি। আপনি যদি শান্তিতে না থাকেন, তাহলে টাকা দিয়ে কী করবেন? আপনার বাহ্যিকভাবে সবকিছুই থাকতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ভেতরে শূন্য থাকেন, তাহলে এটি খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন।”

এই ইন্ডাস্ট্রি সোনিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু স্থিরতা দেয়নি। তা জানিয়ে সোনিয়া বলেন, “আমি জীবনে কী চাই, তা নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে চাই। এই ইন্ডাস্ট্রি আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু স্থিরতা দেয়নি। আমাকে প্রাণভরে শ্বাস নিতে দেয়নি। আমি আর ভান ধরে বাঁচতে চাই না। আমি নিজের জন্য খাঁটিভাবে বাঁচতে চাই। আমি জীবনের কোচ এবং আধ্যাত্মিক হিলার হতে চাই।”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সোনিয়া বানসাল বলেন, “আপনি জানেন না, কখন আপনার জীবন বদলে যাবে। আপনি জানেন না, মৃত্যু এসে কখন আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। আমরা যদি সৎভাবে জীবনযাপন না করি, তাহলে এই পুরো যাত্রার অর্থ কী?”

‘নটি গ্যাং’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে সোনিয়ার। ২০১৯ সালে মুক্তি পায় এটি। দুই বছরের বিরতি নিয়ে ‘ডুবকি’ সিনেমায় অভিনয় করেন। পরের বছরই ‘গেম ১০০ কোরর কা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০২২ সালে মুক্তি পায় এটি। এছাড়াও হিন্দি ও তেলেগু ভাষার বেশ কটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোনিয়া।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গানে–আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা

জমিদারির কাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। পদ্মায় বোটে করে ভাসতে ভাসতে দেখেছেন বাংলার সজল সবুজ প্রকৃতি। নদীর দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রা। বাউল, ভাটিয়ালি গানের সুরে মোহিত হয়েছে কবির চিত্ত। কবি সেই সব দেখা ও শোনার অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভব প্রকাশ করেছেন গানে, কবিতায়, গল্পে আর ‘ছিন্নপত্র’ নামের চিঠিতে। কবির প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে সেই রচনা থেকে পাঠ আর গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল ছায়ানট।

গতকাল বুধবার ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ‘অন্তরতর হে-বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সন্ধ্যা সাতটায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ গানটি দিয়ে। পরে ইফফাত বিনতে নাজি গেয়েছেন ‘চিত্ত পিপাসিতরে গীত সুধার তরে’। গানের ফাঁকে ফাাঁকে পদ্মাপারের জীবনযাত্রা নিয়ে কবির লেখা থেকে পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সুমনা বিশ্বাস ও জহিরুল হক খান। এরপর আবার সম্মেলক কণ্ঠের গান ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’।

একদা পদ্মাঘাটে লেগেছিল কবির বোট। পাশেই গ্রামের কোনো এক বধূকে বিদায় দিতে সমবেত হয়েছিল তাঁর বিভিন্ন বয়সী আত্মীয়স্বজন। নানা কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। কবি সেই বর্ণনা লিখেছিলেন তাঁর অনন্য কাব্যময় ভাষায়। সেটি পাঠ করা হলো। তারপর দুটি একক কণ্ঠের গান। ‘ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই’ গানটি গেয়ে শোনালেন মাসকুরা আখতার। অমেয়া প্রতীতি পরিবেশন করলেন ‘তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখো না মনে’।

এবার এক ধবল জ্যোৎস্নার বর্ণনা। পদ্মার জনমানবহীন, বৃক্ষ–তৃণশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালুচর। কোজাগর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাস্নাত সেই চর দেখে কবির মন ভরে উঠেছিল ভাবাবেগে। তাঁর রচনা থেকে সে রাতের বর্ণনা পাঠের পর অভয়া দত্ত গেয়ে শোনালেন ‘আজি যে রজনী যায়’। দীপ্র নিশান্ত শোনালেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার সাধের সাধনা।’

অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল পাঠ আবৃত্তি আর গানে গানে। গান নির্বাচন করা হয়েছিল পাঠ ও আবৃত্তির বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। ‘দুই পাখি’ কবিতাটি আবৃত্তির পরে কবিতাটির গান পরিবেশন করেন তাহমিদ ওয়াসীফ। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ গেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

পূর্ব বাংলায় এসে বাউলগানের সুর, মরমি ভাবধারায় কবি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে কথা তিনি লিখেছেনও নানা রচনা ও চিঠিতে। তার খানিকটা পাঠ করে শোনানো হলো শ্রোতাদের। তারপর ‘আমি কান পেতে রই’ গানটি পরিবেশন করলেন অভিজিৎ দাস।

কবির অন্তরের যে আধ্যাত্মিক ভাব ও ভাবনা, সেসব নিয়েই তিনি নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচনা করছিলেন। এই কবিতাগুলো নিয়ে তখন স্তুতি ও সমালোচনা, চারপাশের নানা রকম কোলাহল। সেসবের কোনো কিছুতেই তিনি বিচলিত বোধ করছিলেন না। বন্ধু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে তাঁর ভাব–ভাবনার কথা জানিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন কবি। পত্র থেকে পাঠ করা হলো। পরে ‘কোলাহল তো বারণ হলো’ গানটি গাইলেন মনীষা সরকার। আজিজুর রহমান তুহিন শোনালেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। শেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ পরিবেশনা। আর সমাপ্তি হলো বরাবরের মতোই জাতীয় সংগীত দিয়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ