আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া ও দেশীয় অস্ত্রের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট। আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি এ দাবি জানান। 

দাবিগুলো হলো- শিক্ষার মান উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষাসহ বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা; গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধি করা; প্রাথমিক শিক্ষাসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বেকারত্ব দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; আইন হাতে তুলে না নেওয়া ও দেশীয় অস্ত্রের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধ করা।

রবিউল ইসলাম রবি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রথমেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের দুই নিবেদিত কর্মী শহীদ ফারহান ফাইয়াজ ও জুয়েলসহ সকল বীর শহীদদের আত্মত্যাগ গভীরভাবে স্মরণ করছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল স্বরূপ আমরা যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি তাদের মাধ্যমে প্রত্যাশিত বৈষম্য আসলে কতটুকু দূরীকরণ হয়েছে তা প্রশ্নই থেকে যায়।

তিনি আর বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সংগ্রামী সৈনিক জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান আফাজ বিশ বছরের বেশি সময় ধরে জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের সক্রিয় কর্মী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের ন্যায় স্থানীয় মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ফলে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে প্ররোচিত হয়ে চলতি বছরের ৫ মে গভীর রাতে বিনা নোটিশে বাসা থেকে তুলে নিয়ে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে- আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী দেখিয়ে তাকে ২০১৩ সালের বিএনপির মিছিলে হামলা সংশ্লিষ্ট মামলায় আসামি করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। অথচ অতীতে তার নমে থানায় কোনো মামলাই ছিল না। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

রবিউল ইসলাম রবি আরও বলেন, ‘একজন ইমামকে হত্যা করা হয়েছে। তার জন্য বিচার চাওয়া এই দেশের কোনো আইনে অপরাধ? যদি অপরাধ হয়েই থাকে তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এ দেশে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার দূরের কথা নাগরিক অধিকারও নেই।’

জাকের পার্টি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল একসঙ্গে একই দিনে ২০০ এর অধিক আসনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে। জাকের পার্টি কখনোই সংঘাত বা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই জাকের পার্টিকে নিয়ে কিছু কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। 

এ সময় তিনি জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান আফাজকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল হাসানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুরা নাস: বাংলা অর্থসহ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা নাস কুরআনের ১১৪তম এবং শেষ সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ বলে মাক্কী সুরা নামে পরিচিত। এতে মোট ৬টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাটি মানুষকে শয়তানের প্রতারণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শেখায়। এটি ‘মু’আওয়িযাতাইন’ (দুটি আশ্রয়প্রার্থী সুরা: সুরা ফালাক ও সুরা নাস)–এর একটি।

সুরা নাসের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো।

বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

উচ্চারণ: কুল আউজু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন নাস। ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। আল্লাজি ইউওয়াসউইসু ফি সুদুরিন নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি মানুষের রবের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের উপাস্যের কাছে। মন্দ প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা থেকে, যে পিছনে লুকায়। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।

আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা নাসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা নাস মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেয়। এই সুরায় আল্লাহকে তিনটি গুণে সম্বোধন করা হয়েছে:

রব্বিন নাস (মানুষের রব): আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।

মালিকিন নাস (মানুষের অধিপতি): তিনি মানুষের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

ইলাহিন নাস (মানুষের উপাস্য): তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য।

সুরাটি শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রার্থনায় জোর দেয়। কেননা, শয়তান ‘ওয়াসওয়াস’ (কুমন্ত্রণা) দেয় এবং ‘খান্নাস’ (পিছনে লুকিয়ে থাকে)। এই কুমন্ত্রণা জিন ও মানুষ উভয়ের থেকে আসতে পারে, যা মানুষের অন্তরে মন্দ চিন্তা ও পাপের প্রতি প্ররোচিত করে।

হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়তেন, হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে মুছে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)

বোঝা যায়, সুরা নাস পড়া শয়তানের প্রভাব ও অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।

আরও পড়ুনসুরা কাহাফের ৪ কাহিনিতে সফলতার ৪ শিক্ষা২০ জুলাই ২০২৫সুরা নাসের ফজিলত

সুরা নাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.)–কে যখন জাদু করা হয়, তখন সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয় এবং তিনি এই দুই সুরা পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আরোগ্য লাভ করেন। (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৩৭)

এই সুরা পড়া শয়তানের কুমন্ত্রণা, জাদু, হিংসা এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, “সুরা নাস মানুষকে শয়তানের মানসিক ও আধ্যাত্মিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।” (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৮/৫৩৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)।

সুরা নাস একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুরা, যা মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আধুনিক জীবনে, যখন আমরা প্রতিনিয়ত নানা প্রলোভন ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হই, তখন এই সুরা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে পারে। এই সুরা নিয়মিত পাঠ, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে, মুমিনের জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসে।

আরও পড়ুনসুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত০৮ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ