কিশোর বয়স। এই বয়সে হাতে বইখাতা থাকার কথা, সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকার কথা, কিন্তু না, পেটের দায়ে এই সময়ে ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ছাড়তে হয়েছে পড়ালেখা।
দুই সহোদর আরমান (১৪) ও রাফাত (১২)। বুঝ হওয়ার আগেই মারা যান তাদের বাবা নূর নবী। মা আবার বিয়ে করলেও সৎবাবার সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তাদের। পেটের দায়ে দু’জনই কাজ করে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় হোটেল শ্রমিক হিসেবে।
রুবেল মিয়া (১৬) ও মো.
শুধু এই ক’জনই নয়, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন হোটেল, মুদি দোকান, শাকসবজির দোকান, মুরগির দোকান, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকের আসনে অসংখ্য শিশু-কিশোরের দেখা মেলে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের অসচ্ছলতা ও দৈন্যর কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর সুযোগ হয়নি এসব শিশু-কিশোরের। তাদেরই একজন আলমগীর মিয়া (১৩)। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। আলমগীরের বাবা কামাল মিয়া পেশায় দিনমজুর। অভাবের কারণে দুই বছর আগে তাঁকে একটি মুরগির দোকানে কাজে দেওয়া হয়।
আলাপকালে আলমগীর বলে, ‘আব্বা মাইনষের কাম কইরা যে ট্যাহা (টাকা) পায়, এইডি দিয়া তো সবার খাওয়ন-দাওয়নই অয় না, আমরারে পড়ালেহা করাইবো কেমনে?’
হোটেল শ্রমিক রুবেল মিয়া জানায়, সংসারে অভাব-অনটনের জন্য তার বাবা তাকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। বাবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হওয়ায় পাঁচ বছর আগে এই পেশায় যোগ দেয় সে। তখন প্রতিদিন কাজ করলে বেতন পেত ১৫০ টাকা। বাবা মারা যাওয়ার পর ভেবেছিল ছোট ভাই সুজনকে অন্তত এসএসসি পাস করাবে। কিন্তু সংসারে দৈন্যদশা, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা খরচ জোগাতে বাধ্য হয়ে ছোট ভাইকেও কাজে নেয়। এখন প্রতিদিন কাজ করে সে পায় ৪০০ টাকা, ছোট ভাই পায় ২০০ টাকা। বর্তমান বাজারে মা-বোন নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছে বলে জানায় রুবেল।
কথা হয় হোটেল শ্রমিক মনির মিয়ার (১৩) বাবা উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গে। উজ্জ্বল মিয়া চা বিক্রেতা। আলাপকালে তিনি বলেন, পোলাডারে পড়ালেহা করানির ইচ্ছা তো আছিনেই, তয় কি করবাম সাঙ্গেস্তা (সামর্থ্য) তো নাই। এর লাইগ্যাই হোটেলে দিয়া দিছি কাম শিইক্কয়া (শিখে) বড় হউক।’
ভিন্নকথা বললেন রিকশাচালক ইয়াছিনের (১৪) বাবা বাচ্চু মিয়া। তাঁর ভাষ্য, তাদের মতো দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা করে কী হবে। শ্রমিকের সন্তান শ্রমিক হবে, এটাই সত্য কথা।
এ প্রসঙ্গে দুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদ্দাম হোসেন রানা জানান, একটি শিশুর
মানসিক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা।
গরিব কিংবা ধনী– প্রতিটা বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অধিকতর সচেতন হওয়া।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তালুকদারের ভাষ্য, পরিবারে আর্থিক দৈন্যের কারণে এই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের বেশির ভাগ সন্তানই প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ছে। শিশু বয়সেই যুক্ত হচ্ছে দিনমজুরিসহ বিভিন্ন পেশায়। সরকারের কাছে দাবি, ওইসব নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা আরও সমৃদ্ধ করা হোক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহম্মেদ সমকালকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে আগে থেকেই শিক্ষকদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হচ্ছে। তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে। তাঁর দাবি, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য সরকারও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন দুপুরে মিড ডে মিল চালু, পঞ্চম শ্রেণিতে ফের বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ব্যবস্থা। এগুলো চালু হয়ে গেলে ঝরে পড়ার প্রবণতা কমে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ দেশে যা কিছু ভালো, সবকিছু দিয়েছে বিএনপি। তাই নানা নির্যাতন-নিপীড়ন করেও দলটিকে কেউ বিলীন করতে পারেনি। এই দল ফিনিক্স পাখির মতো। একে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। বরং ষড়যন্ত্রকারীরাই পালিয়ে গেছে। বিএনপি সেই দল, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেনি।
আজ শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের পুরোনো স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে এই নেতা বলেন, বর্তমানে দেশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে এবং মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বিএনপিকে। যাদের কাল জন্ম হয়েছে এবং যারা একাত্তর সালে ভিন্ন অবস্থানে কিংবা ভিন্ন জায়গায় ছিল—তারাও বিএনপিকে নিয়ে নানা কথা বলে। যা কিছু ভালো, তার সবকিছু বাংলাদেশে দিয়েছে এই বিএনপি। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিএনপি এই পর্যায়ে এসেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে যে সুযোগ এসেছে এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে—তা কাজে লাগাতে হবে। বিএনপি এ জন্য প্রস্তুত।
দেশ গঠনে বিএনপির অবদান তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র চারটি পত্রিকা চালু রেখে সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেন। তরুণদের এ কথাটা জানা দরকার। শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে ও মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ, কোষাধ্যক্ষ এম রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী ও আরেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ।