একচেটিয়া ব্যবসা নয়, দ্বন্দ্ব নিরসন হোক
Published: 9th, May 2025 GMT
নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীতে বিপণনকেন্দ্র ও ফুডকোর্ট ঘিরে নানা জটিলতা, দ্বন্দ্ব ও অব্যবস্থাপনার কারণে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে একচেটিয়া প্রভাবে স্টল বরাদ্দ পাওয়া উদ্যোক্তাদের কারণে নতুন উদ্যোক্তারাও সেখানে বঞ্চিত হচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে জয়িতার নতুন ভবনটি চালু করা যাচ্ছে না। ১২ তলার বিশাল ভবনটি তো এভাবে পড়ে থাকতে পারে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি শপিং কমপ্লেক্সে এখন জয়িতার বিপণনকেন্দ্র ও ফুডকোর্ট মিলিয়ে মোট ৯৪টি স্টল আছে। সমিতির অধীনে সেখানে স্টল বরাদ্দ নিতে হয় নারী উদ্যোক্তাদের। কিন্তু খাবারের খোঁজে জয়িতা ফুডকোর্টে ঢুকলেই গরমে নাজেহাল অবস্থা তৈরি হয়। এসি মাসের পর মাস অচল, বেসিন ভাঙা, শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযোগী। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মাসে ৪৮ হাজার টাকা খরচ করে স্ট্যান্ড ফ্যান ভাড়া করে তাঁরা নিজেরাই বাতাসের ব্যবস্থা করছেন। অথচ ফাউন্ডেশন বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান করছে না।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীনে ধানমন্ডি এলাকাতেই ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে সেটি উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু দুটি ফ্লোরে ফাউন্ডেশনের কার্যালয় চালু হয়েছে। উদ্যোক্তাদের যদি কোনো কাজেই না আসে, তাহলে এত বিশাল টাওয়ার বানানোর প্রয়োজনটা কী ছিল? কেন এতগুলো টাকা খরচ করা হলো?
মূলত জয়িতা টাওয়ার নির্মাণের পর থেকেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নতুন টাওয়ারে সরাসরি স্থানান্তর চান উদ্যোক্তারা। সরকার চায় নতুন উদ্যোক্তা নিতে। মন্ত্রণালয় ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, বিগত সরকারের আমলে একচেটিয়াভাবে বরাদ্দ পাওয়া উদ্যোক্তাদের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের কাছে সরকারের পাওনা টাকাও উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এসব উদ্যোক্তার অনেকের পণ্যের মানও ভালো নয়। তাঁরা কোনো প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েও যেতে চান না। এ জন্য নতুন উদ্যোক্তারা নতুন ভবনে স্টল বরাদ্দ পাক, সেটি তাঁরা চান না।
শপিং কমপ্লেক্স থেকে বিপণনকেন্দ্র ও ফুডকোর্ট ছেড়ে দেওয়া নিয়েও আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব ভবনটি দ্রুত চালু করলেই এ জটিলতার অবসান সম্ভব। পুরোনো ও নতুন উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে স্টল বরাদ্দ দিয়ে নতুন ভবনটি দ্রুত চালু করা হোক। অবশ্যই পণ্যের মান যাচাই এবং প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারও একচেটিয়া প্রভাব এখানে কাম্য নয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান, জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্রতি নারী উদ্যোক্তাদের আস্থাশীলতা অর্জনে সচেষ্ট হোন। কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা এ ফাউন্ডেশন গঠনের উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসক-স্থাপনা কিছুই নেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে
সখীপুর উপজেলায় ছয়টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর মধ্যে দুটিতে নেই কোনো স্থাপনা। চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটিতেই নেই চিকিৎসা কর্মকর্তা। স্থাপনাবিহীন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রেষণে রয়েছেন অন্য কর্মস্থলে। চলমান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রসূতিবিদ ও ফার্মাসিস্ট।
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যালয়ের বেহাল অবস্থা। দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত। তবুও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সেকমো) ও ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ জমিই দখল হয়ে গেছে। বাকি ২০ শতাংশেও নেই সীমানা প্রাচীর। আবাসিক ভবনটিও বসবাস অযোগ্য। চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই ৮-১০ বছর। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য-চিত্র পাওয়া গেছে।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে কাদা ও ময়লার স্তূপ জমে আছে। হাটের আবর্জনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আশপাশেই ফেলা হয়। ফলে স্থাপনার চারপাশেই দুর্গন্ধ। ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। দেয়াল ফেটে গেছে। টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। দরজা-জানালা ভাঙা। বৃষ্টি নামলেই ঘরের ভেতরে পানি জমে। ফলে কক্ষের ভেতর সংরক্ষণে রাখা কাগজ ও আসবাব ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। আবাসিক ভবনটিও এক যুগ ধরে বসবাসের অযোগ্য। ভেতরে পোকা-মাকড় বাসা বেঁধেছে। আশপাশ ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।
সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জামিনি আক্তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস প্রেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকায় কর্মরত। এ ছাড়া বহেড়াতৈল কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্থাপনাবিহীন যাদবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জান্নাত আরা জ্যোতি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ও স্থাপনাবিহীন হাতিবান্ধা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামীমা আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া বাঘেরবাড়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুল আলম নিজ কর্মস্থলেই কাজ করছেন।
সেবা নিতে আসা নুরভানু নামে এক হাঁপানি রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়তই এ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সখীপুর হাসপাতাল অথবা দূরে কোথাও যেতে হয়। গরিব হওয়ায় অন্যত্র যাওয়ার সামর্থ্য নেই।’
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জমির উদ্দিন জানান, জমিটি উদ্ধার করে সীমানা প্রাচীর ও ভবন নির্মাণের দাবি তাদের। তাঁর অভিযোগ, এ সেবা কেন্দ্রে গত ৮-১০ বছরে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার দেখা মেলেনি।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত সেকমো আবদুল মালেক সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, ‘ডাক্তার ও অফিস সহায়ক না থাকায় তাদের কাজ ফার্মাসিস্ট ও আমাকেই করতে হচ্ছে। আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত থাকায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, প্রতিদিন এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেহানা পারভীনের ভাষ্য, জমিটি উদ্ধারে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের সংযুক্তি বাতিল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর আশা, শিগগিরই বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হবে।