ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
Published: 9th, May 2025 GMT
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানকে দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংলাপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদা ফোনালাপে তিনি এ আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতের শেষভাগে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু শহর নতুন করে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে। ভারতীয় সামরিক সূত্রগুলোর ধারণা, এটি সম্ভবত পাকিস্তানের চালানো ড্রোন হামলা।
এই বিস্ফোরণগুলো ঘটার আগেই, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।’
ট্যামি ব্রুস আরও বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি সংলাপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন রুবিও। যোগাযোগ বাড়ানোর চলমান প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করেছেন তিনি।
ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা থামবে বলে তিনি আশা করেন। সংকট নিরসনে সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত আছেন। তবে উত্তেজনা নিরসনে ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়নি।
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমছে না। দুদেশের মধ্যে এ উত্তেজনার শুরু ২২ এপ্রিল। সেদিন পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারত। ওই রাতেই দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করে পাকিস্তান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের দৃশ্যত উন্নতি এবং ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের অবনতি নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উদ্দীপনার পাটাতন কি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সেটি কত দিন টিকবে? কিছু বিশ্লেষক এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিবর্তনকে ‘জোটের পুনর্বিন্যাস’ এবং ‘দিক পরিবর্তন’ বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু এই জোটের ‘পুনর্বিন্যাস’ অর্থ যদি হয় চীনের কাছ থেকে পাকিস্তানের সরে আসা, তাহলে আমার মনে হয়, এই বিশ্লেষকেরা সম্ভবত ঠিক বলছেন না।
এর কারণ হলো, চীন পাকিস্তানের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও মিত্র। পাকিস্তান অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পাকিস্তান।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ক্রমে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা অব্যাহতভাবে তাদের সাম্প্রদায়িক সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব উসকে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ঠেকাতে হলে পারমাণবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থার সঙ্গে সামরিক সরঞ্জামও প্রয়োজন।
এটা বলতেই হবে যে পাকিস্তানের জন্য কিছু সুযোগ এসেছে, যেটা জিরো সাম গেমের বা একজন জিতলে আরেকজন হারবে, এমন খেলার অংশ নয়। যুক্তরাষ্ট্র যেমন পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ‘হয় আমার পক্ষে, না হয় আমার বিরুদ্ধে’ এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে, চীন এ রকমভাবে দেখে না; বরং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও বাস্তববাদী। এর কারণ হলো চীন এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যকে মূল মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছে।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো প্রায়ই চীনের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে; কিন্তু চীন মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে কীভাবে ৮০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনল, এ বিষয়টিতে তারা নীরব থাকে। আমরা এখন দেখছি যে গাজায় যে জাতিগত নির্মূল যজ্ঞ চলছে, তাতে প্রায় সমগ্র পশ্চিমা ‘গণতন্ত্র’ ইসরায়েলের দুষ্কর্মের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
এখনকার বাস্তবতায় দুটি বিষয় পাকিস্তানের পক্ষে গেছে। প্রথমত, ইসলামাবাদ সঠিকভাবে ট্রাম্পের আত্মমুগ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রাম্পের নাম শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরের ‘অ্যাবি গেট’ বোমা হামলার একজন অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করেছে। এতে ‘কঠোর নেতা’ হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন তড়িঘড়ি করে কাবুল ত্যাগ করছিল, তখন ওই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা এবং ২০০ আফগান নিহত হয়েছিলেন।
চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত এখন কোয়াডেরও সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই জোটের অন্য দুই সদস্য হলো অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এ কারণেই ব্রিকসে ভারতের সদস্যপদকে এশিয়ায় পশ্চিমা কৌশলগত কাঠামোর সঙ্গে অসাঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে, যেখানে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ভারতকে এখন এক পক্ষ বেছে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।এরপর গত বছরের মে মাসে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায়। মার্কিন সূত্র জানায়, ইসলামাবাদ দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আত্মমুগ্ধ নেতা ট্রাম্পকে একটি ‘জয়’ উপহার দেয়। ট্রাম্প নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করতে কখনো ক্লান্ত হন না। এ ঘটনায় তাঁর অহং ব্যাপকভাবে তৃপ্ত করেছিল।
অন্যদিকে মনে করা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন দুটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা ট্রাম্পকে রাগিয়ে তোলে। প্রথমটি হলো, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন, তখন মোদি তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক বাতিল করেছিলেন। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্পের যে বিশাল অহংবোধ তাতে নিশ্চিতভাবেই আঘাত করবে।
ভারতের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের সময়। সংঘাত যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তার জন্য মার্কিন নেতারা টেলিফোনে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ হোয়াইট হাউসকে জানায়, তারা উত্তেজনা প্রশমন করবে; কিন্তু ভারত থামেনি।
পাকিস্তান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই সংযম দেখিয়েছে