ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ পাঁচ কারণে জোড়া খুন
Published: 10th, May 2025 GMT
এক মাস আগে চট্টগ্রামে প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে দুজনকে খুনের নেপথ্যে পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে। এগুলো হলো পোশাক কারখানা থেকে ঝুট কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনের দলের শক্তি প্রদর্শন, সাজ্জাদের ‘রাজত্ব’ টিকিয়ে রাখা ও সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহযোগিতা করা।
জোড়া খুনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেওয়া কারাগারে থাকা সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানতে পারে। ৩ মে নোয়াখালীর হাতিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজির ১৩টি মামলা রয়েছে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় অর্ধশত ছোট-বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। বেশ কিছু বড় বড় পোশাক কারখানাও রয়েছে সেখানে। এসব কারখানা থেকে ঝুট কেনাবেচা নিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাজ্জাদ ও তাঁর অনুসারীরাই এগুলো নিজেদের কবজায় রাখতে চান। সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তাঁর অন্যতম সহযোগী মেহেদী হাসান তাঁদের প্রতিপক্ষ ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ও তাঁর লোকজনকে লক্ষ্য করে প্রাইভেট কারে গুলি চালান।
৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান সরোয়ার। একসময় সরোয়ার ও সাজ্জাদ দুজনই বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছিলেন। সরোয়ার বড় সাজ্জাদের কথামতো না চলায় বিরোধ বাঁধে। এরপর ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে বিদেশে বসে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন বড় সাজ্জাদ। জানতে চাইলে সরোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন কিছুর মধ্যে নেই। ছোটখাটো ব্যবসা করে চলি। আমাকে সরিয়ে ছোট সাজ্জাদ তাঁর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চান।’
জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ মার্চ রাতে। রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকেও মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে যায় গাড়িটি। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বখতিয়ার হোসেন (৩০) ও মো.
সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহত বখতিয়ারের মা ফিরোজা বেগম। মামলার বাকি পাঁচ আসামি হলেন মো. মেহেদী হাসান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। তাঁরা সবাই সাজ্জাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেন, মেহেদী হাসান, মো. সজীব, এহতেশাম রাফাত, মো. বেলাল ও মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সজীব ঘটনার আগে বায়েজিদ বোস্তামী কয়লার ঘর এলাকায় চার ঘণ্টা হাসানের নেতৃত্বে বৈঠক করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে পুরো ঘটনার পরিকল্পনা ও খুনের বর্ণনার বিস্তারিত উঠে এসেছে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, মেহেদী হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। জোড়া খুনের ঘটনার সময় পিস্তল হাতে, কালো গেঞ্জি ও সাদা কেডস পরে ছিলেন হাসান। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে।
আট খুনের মামলার আসামি বিদেশে পলাতক ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদই ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করেন। ছোট সাজ্জাদকে বড় সাজ্জাদের উপহার হিসেবে অস্ত্রও দেওয়ার তথ্যও পেয়েছেন বলে জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদ তাঁর কাছে থাকা অস্ত্রগুলো হাতবদল করে ফেলেন, যার কারণে রিমান্ডে সাজ্জাদ অস্ত্রগুলোর তথ্য দিলেও সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীদের অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বড় স জ জ দ খ ন র ঘটন র অন স র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস উপলক্ষে গ্রীন ভয়েসের ছাত্র-যুব সমাবেশ
‘প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ছাত্র-যুব সমাবেশ ও র্যালির আয়োজন করে।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গ্রীন ভয়েসের সহসমন্বয়ক আরিফুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর কবির।
সমাবেশে বিশেষ বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাপার নির্বাহী সদস্য জাভেদ জাহান, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাংবাদিক ও গবেষক আনিস রায়হান প্রমুখ।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, উন্নয়নের নামে গাছ কাটা এখন যেন রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল বা মতের বিভেদ নয়, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশবান্ধব আন্দোলনে নামতে হবে।
গ্রীন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, অক্সিজেন ছাড়া জীবন অসম্ভব। অথচ এই অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছগুলোই উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থ, ধর্মীয় উসকানি বা ভ্রান্ত ধারণায় যারা পরিবেশ ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজকের সমাবেশে ঢাকা শহরের অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে একটি সচেতনতামূলক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।