দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না: মির্জা ফখরুল
Published: 10th, May 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা এখন মাঠে আছে কেবল তারা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সঠিকভাবে কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝেমধ্যেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তৃতা করেন তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছি। কারণ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তাদের প্রেতাত্মারা এখনো আছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে, বাংলাদেশ তাদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’ তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে নেওয়ার জন্য, তারা সঠিকভাবে এখনো কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝে মাঝেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এখানে সমাবেশ হচ্ছে, আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে। আরেকটি হচ্ছে ঢাকায়। দাবিটা কি? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, তাই না? আমরা মাঠে যারা আছি তারা শুধু নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চাই না। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। গণতন্ত্র ধ্বংস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।’
দেশে প্রথম সংস্কার শহীদ জিয়াউর রহমান করেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাতের নয় বছর পর আন্দোলন সংগ্রাম করে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ফিরে নিয়ে এসেছিলেন। কিছু কিছু মানুষ সব ভুলে যায়, ভুলিয়ে দিতে চায়। তারা মনে করে, সুন্দর সুন্দর মুখরোচক কথা বললেই জাতি বোধ হয় সব ভুলে যাবে।
তরুণেরা জেগে উঠেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রেখে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে। আধুনিক উপযোগী একটি বাংলাদেশ করার শিক্ষা দিচ্ছেন তারেক রহমান। এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে কোনোভাবেই কোনো কিছু করতে দেব না। আমাদের নেতা বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে যাবো, কারও উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। এটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। আমরা নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে চাই, সহনশীল থাকতে হবে সবাইকে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এখানে তামিম ইকবালকে দেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রামের তরুণেরা আজকে ছক্কা মেরে দিয়েছে। এই তরুণেরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা হটানোর মূল শক্তি। ওয়াসিম আকরামের (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে শহীদ ছাত্রদল নেতা) জীবন দিয়ে এ আন্দোলন সফল করেছে। সেদিন ছাত্রদল যুবদল বুক পেতে দিয়েছে গুলির সামনে। গণতন্ত্র ও মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তরুণেরা লড়াই করেছে, সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে।’
আমির খসরু বলেন, ‘আমরা ১৬-১৮ বছর আন্দোলন করেছি। মামলা, হামলা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছি। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে অনেক নেতা-কর্মীর। আমাদের নেতা-কর্মীরা যার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেই গণতন্ত্র যেন কেউ জিম্মি করতে না পারে।’ তিনি বলেন, কারও যদি দর্শন থাকে, ভাবনা থাকে, কর্মসূচি থাকে তাহলে তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। কিন্তু কারও স্বার্থের জন্য দেশকে জিম্মি করা যাবে না। মানুষের মধ্যে নতুন যে ভাবনা এসেছে তা বুঝতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনি, ৩১ দফার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা অনেক আগেই বলেছে বিএনপি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সমাবেশ সঞ্চালনা করেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেনসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল ইসল ম ষড়যন ত র গণতন ত র ছ ত রদল ব এনপ র ফখর ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি, দুঃখের সঙ্গে বলছি। কত রকমের সার্কাস। আমার কথাগুলো বলা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তবু বলছি, যারা বিনিয়োগ বোঝে, তারা জানে এই সার্কাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ হতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত, স্থিতিশীল সরকার থাকতে হবে। তখনই বিনিয়োগকারীরা সরকারের মানসিকতা, দায়বদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তারুণ্যের ভাবনা ও অধিকার নিয়ে চার বিভাগে বিএনপির কর্মসূচি শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের এই সেমিনারের মাধ্যমে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনতে হলে আগে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটা তখনই সম্ভব, যখন একটি প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকবে। আজকে কি বাংলাদেশে সেই অবস্থা আছে? আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়েছি, কিন্তু এখনো দেশে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার আসেনি।’
চাকরির সুযোগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের জন্য এক নম্বর অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার কী, আমি বলব বিনিয়োগ। দুই নম্বরও বিনিয়োগ, তিন নম্বরও বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া আত্মকর্মসংস্থান বা শিল্পায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছিলেন মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গণতন্ত্রায়ণের মাধ্যমে। আমরা সেই ধারাবাহিকতায় সবার জন্য অর্থনীতির কথা বলি, গণতন্ত্রায়ণের কথা বলি। এগুলো ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব নয়।’
বিএনপি আয়োজিত ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি একটি কমিউনিটি সেন্টারে