চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সে আন্দোলনের জন্য যে নারীদের প্রশংসা করা হতো, তারাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পাঁচ আগস্টের পরেই প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। সেই নারীদের এখন ঘরবন্দি করতে চায় একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী; তাদের শাহবাগী বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রতিনিয়ত নারী যোদ্ধাদের শিকার হতে হচ্ছে সাইবার বুলিংয়ের। হুমকি দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণ ও হত্যার। 

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘সংকট ও সম্ভাবনায় নারীর চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘কথা বলো নারী’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠন এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।  

সভায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের তাগিদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, লক্ষণীয়ভাবে নারী কমিশনের প্রধানসহ সব সদস্যের প্রতি, তাদের সমর্থনে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এটা মোটেই ঠিক নয়। কমিশনের দেওয়া সুপারিশ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু গোটা কমিশন বাতিলের জন্য যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়। 

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক নুসরাত হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড.

গীতি আরা নাসরীন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, নারী সংহতি কেন্দ্রের সদস্য রেপোনা সুমি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার রাইটসের ফ্যাসিলিটেটর অরুন্ধতী রানী, শিক্ষক ও পরিবেশবিদ সানজিদা রহমান, ফোকাস স্কুলের চেয়ারম্যান নুরজাহান মুক্তা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস শিক্ষার্থী শ্যামলী সুলতানা জেদনী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মাহমুদা সুলতানা রিমি, সিনথিয়া জাহীন আয়েশা প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘প্রতিটা আন্দোলনে নারীদের অবদান অনেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয় নিয়ে যখন নারী, পুরুষ উভয়েই ঘরে ফেরেন, তখন ছেলেদের বরণ করেছিল দেশের মানুষ। কিন্তু সে সময়ে মেয়েদের লুকিয়ে রাখা হয়। তাদের বিভিন্নভাবে অপবাদ দেওয়া হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে চব্বিশের আন্দোলনে। নারীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’ 

নারীর প্রতি অবমাননা, সহিংসতা, হুমকি রুখতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সোশ্যাল ফোর্স গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা শারমিন। তিনি বলেন, ‘এই ফোর্স ভিকটিমদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। তাদের সমস্যা শুনবে এবং সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একটি ইউনিট গঠন করা হবে; যেখানে শত শত মেয়ে কাজ করবে।’ 

ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘নানা টালবাহানা শেষে ২০০৮ সালে নারীনীতি পাস হয়। তাতেও অনেক কিছু বাদ দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রের প্রধান ভূমিকায় নারী থাকলেও নারীর উন্নয়নের বিষয় ক্রমাগতভাবে কম্প্রোইজ করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর নারীকে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এবার আর নারী চুপ করে থাকবে না। যারা অবমাননা করে নারীকে পুরোনো অবস্থানেই রাখতে চান, সেটা সম্ভব না।’ 

মমতাজ আহমেদ বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মানুষের মানসিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মানসিকতা ঠিক না হলে কখনোই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।
সাইবার বুলিং প্রতিরোধ প্রসঙ্গে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘চব্বিশের আন্দোলনের পর নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাই নারীদের প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নিজেদেরই প্রথমে প্রতিরোধের বিষয়গুলো জানতে হবে।’ 

ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘নারীর প্রতি যে সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা প্রতিরোধে প্রথমেই প্রয়োজন পুরুষদের মানুষ হিসেবে তৈরি করা। যেদিন একজন পুরুষ নিজেকে মানুষ ভাবতে পারবে এবং যে নারী পুরুষতান্ত্রিকতা ধারণ করে, সে যদি পুরুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারে, সেদিন থেকে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কমে আসবে। আমাদের চিন্তার প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে।’

মাহা মির্জা বলেন, ‘যেসব নারী শ্রমবাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, নারীকে এখনও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে নারীদের অবদান অনেক। খুলনায় পাটকল ও চিনিকল বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে সেখানকার নারী ও কন্যাশিশুর ওপর। সে অঞ্চলে বাল্যবিয়ে বেড়েছে।’  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আ’লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে শহরে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ

আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও মানবাধিকার অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি।

‎এসময়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্লোগান দেয়, “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই” খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই, শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকল্পিত করে তোলে পুরো শহর।

‎সোমবার ( ১৭ নভেম্বর) সকাল এগারোটায় শহরের মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দুই নম্বর নগরভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

‎এদিকে বিএনপির মিছিলকে সফল করতে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন সদর থানা, বন্দর থানা, বন্দর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ওলামাদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার- ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতির সামনে এসে জড়ো হয়।

‎এছাড়াও মানবাধিকার অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ফাঁসিকে শহরে যাতে করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কোন অগ্নিসংযোগ বা কোন নাশকতা করতে না পারে তার জন্য শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন।

‎এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম , নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ রেজা রিপন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এড. রফিক আহমেদ, ডা. মজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান, বরকত উল্লাহ, ফারুক হোসেন, বন্দর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন,বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, শেখ সেলিম, নাজমুল হক, চঞ্চল মাহমুদ,সাইফুল ইসলাম বাবু, হিরা সরদার, ইকবাল হোসেন, সোহেল খান বাবু, মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না, গোগনগর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজী, আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঃ রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ, ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহেন শাহ্ মিঠু, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাজাদা আলম রতন, মহানগর ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ শিবলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ