জুলাই আন্দোলনের পর নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন
Published: 12th, May 2025 GMT
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সে আন্দোলনের জন্য যে নারীদের প্রশংসা করা হতো, তারাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পাঁচ আগস্টের পরেই প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। সেই নারীদের এখন ঘরবন্দি করতে চায় একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী; তাদের শাহবাগী বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রতিনিয়ত নারী যোদ্ধাদের শিকার হতে হচ্ছে সাইবার বুলিংয়ের। হুমকি দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণ ও হত্যার।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘সংকট ও সম্ভাবনায় নারীর চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘কথা বলো নারী’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠন এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের তাগিদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, লক্ষণীয়ভাবে নারী কমিশনের প্রধানসহ সব সদস্যের প্রতি, তাদের সমর্থনে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এটা মোটেই ঠিক নয়। কমিশনের দেওয়া সুপারিশ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু গোটা কমিশন বাতিলের জন্য যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক নুসরাত হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড.
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘প্রতিটা আন্দোলনে নারীদের অবদান অনেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয় নিয়ে যখন নারী, পুরুষ উভয়েই ঘরে ফেরেন, তখন ছেলেদের বরণ করেছিল দেশের মানুষ। কিন্তু সে সময়ে মেয়েদের লুকিয়ে রাখা হয়। তাদের বিভিন্নভাবে অপবাদ দেওয়া হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে চব্বিশের আন্দোলনে। নারীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
নারীর প্রতি অবমাননা, সহিংসতা, হুমকি রুখতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সোশ্যাল ফোর্স গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা শারমিন। তিনি বলেন, ‘এই ফোর্স ভিকটিমদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। তাদের সমস্যা শুনবে এবং সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একটি ইউনিট গঠন করা হবে; যেখানে শত শত মেয়ে কাজ করবে।’
ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘নানা টালবাহানা শেষে ২০০৮ সালে নারীনীতি পাস হয়। তাতেও অনেক কিছু বাদ দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রের প্রধান ভূমিকায় নারী থাকলেও নারীর উন্নয়নের বিষয় ক্রমাগতভাবে কম্প্রোইজ করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর নারীকে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এবার আর নারী চুপ করে থাকবে না। যারা অবমাননা করে নারীকে পুরোনো অবস্থানেই রাখতে চান, সেটা সম্ভব না।’
মমতাজ আহমেদ বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মানুষের মানসিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মানসিকতা ঠিক না হলে কখনোই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।
সাইবার বুলিং প্রতিরোধ প্রসঙ্গে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘চব্বিশের আন্দোলনের পর নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাই নারীদের প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নিজেদেরই প্রথমে প্রতিরোধের বিষয়গুলো জানতে হবে।’
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘নারীর প্রতি যে সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা প্রতিরোধে প্রথমেই প্রয়োজন পুরুষদের মানুষ হিসেবে তৈরি করা। যেদিন একজন পুরুষ নিজেকে মানুষ ভাবতে পারবে এবং যে নারী পুরুষতান্ত্রিকতা ধারণ করে, সে যদি পুরুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারে, সেদিন থেকে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কমে আসবে। আমাদের চিন্তার প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে।’
মাহা মির্জা বলেন, ‘যেসব নারী শ্রমবাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, নারীকে এখনও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে নারীদের অবদান অনেক। খুলনায় পাটকল ও চিনিকল বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে সেখানকার নারী ও কন্যাশিশুর ওপর। সে অঞ্চলে বাল্যবিয়ে বেড়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মে আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরকে আমরা খুঁজছি: রাষ্ট্রপক্ষ
চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে করার’ অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ওই প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আর যাঁরা যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজছেন তাঁরা। এ সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনের জন্য নূরুল হুদাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে এক বিএনপি নেতার করা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। নতুন করে তাঁর আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। তাঁর সঙ্গে আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তাঁদের বক্তব্যে ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও অনিয়মের কথা উঠে আসে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে নূরুল হুদাকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা হাজতখানায় রাখার পর নূরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে বের করে আনে পুলিশ। তখন দেখা যায়, নূরুল হুদার মাথায় পুলিশের হেলমেট। তার দুই হাত পেছনে, দুই হাতেই হাতকড়া। মাথা নিচু করে নূরুল হুদাকে হাজতখানার ফটক থেকে আদালতের লিফটের কাছে আনা হয়। পরে তাঁকে লিফটে করে সিএমএম আদালতের নবম তলায় এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়। তখন সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট।
কাঠগড়ায় তোলার পর নূরুল হুদা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন পুলিশের একজন কনস্টেবল তাঁর দুই হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খুলে দেন। এরপর মাথার হেলমেটটিও খুলে দেন। তখন নূরুল হুদা কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম তাঁর কাছে এগিয়ে যান। তিনি কথা বলতে থাকেন। এর ১০ মিনিট পর বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ এজলাসে আসেন।
এ সময় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে পাঁচটি কারণ একে একে তুলে ধরতে শুরু করেন।
রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি দিল পুলিশ
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা আদালতকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর নূরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচনের অভিযোগসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে নূরুল হুদা অনেক তথ্য দিয়েছেন। নূরুল হুদার দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য তাঁকে আবারও দশ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘নূরুল হুদা যেসব তথ্য দিয়েছেন সেসব তথ্য নথি সংক্রান্ত বিষয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব নতি উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। নথি উদ্ধার করার জন্য তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালে একটি পাতানো নির্বাচন হয়। এটি ছিল দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। নূরুল হুদার নির্দেশে অন্যান্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে তখন একটি পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়েছে, সেই রহস্য উৎঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।’
পুলিশ কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করা জরুরি। এজন্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে