Prothomalo:
2025-09-18@04:57:25 GMT

ভিউয়ের দৌড়ে মূল্যবোধের পতন

Published: 22nd, May 2025 GMT

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এটি যেমন মানুষের ভাবনার আদান-প্রদানের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে আত্মপ্রকাশ ও বিনোদনের এক নতুন ক্ষেত্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্ল্যাটফর্মেই দিনে দিনে বাড়ছে অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট আর সামাজিক অনৈতিকতার চর্চা। ভিউ, লাইক, ফলোয়ার বা ভাইরাল হওয়ার আশায় অনেকেই এখন মূল্যবোধ, শালীনতা আর নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছেন। যার ফলে ফেসবুকের মতো শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার।

একটা সময় ছিল, যখন কেউ কিছু পোস্ট করলেই তা দিয়ে তার চিন্তা-চেতনার পরিচয় মিলতো। কিন্তু এখন অনেকেই কনটেন্ট তৈরি করছেন শুধুমাত্র ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য। যেন এটাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র লক্ষ। অর্ধনগ্ন ভিডিও, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ভুয়া প্রেম-ভাঙন নাটক কিংবা আপত্তিকর প্র্যাংক—এসবই যেন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে কিছু তথাকথিত ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-এর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব কনটেন্টে দেখা যায় হাজার হাজার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। সমাজের নানা স্তরের মানুষ—বিশেষত তরুণ প্রজন্ম—এসব দেখছে, শিখছে এবং অনুকরণ করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক সংকট।

‎এই সমস্যা শুধু কিছু ব্যক্তি বা কনটেন্ট নির্মাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর দায়ভার সমাজ ও দর্শককেও নিতে হবে। কারণ দর্শকই এসব কনটেন্টকে ভাইরাল করে তোলে। দর্শকদের অসংযমী কৌতূহল, অপ্রয়োজনীয় বিনোদনের তৃষ্ণা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই এসব অশ্লীল কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা যারা ‘দর্শক’, তারা যদি এসব কনটেন্ট এড়িয়ে চলতাম, প্রতিবাদ করতাম বা রিপোর্ট করতাম—তাহলে এমন অবস্থা হতো না।

‎এখানে একটি প্রশ্ন উঠে আসে—ভিউ কি আদতেই জীবনের একমাত্র সফলতার মানদণ্ড? কেবল জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নিজেকে, সমাজকে, এমনকি আগামী প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ধ্বংস করে দেওয়া কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য? ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের যেমন সুযোগ দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহার আমাদের জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এসব অশ্লীলতা দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে, নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে, তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথ রুদ্ধ হচ্ছে।

‎এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। ফেসবুকে আমরা যারা সক্রিয়, আমাদের দায়িত্ব এসব কনটেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবাদ জানানো এবং সুন্দর-শালীন কনটেন্টকে উৎসাহ দেওয়া। সরকার, সামাজিক সংগঠন, এবং পরিবারকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরও কঠোর মনিটরিং ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের।

‎অশ্লীলতা কিংবা ভিউয়ের পেছনে ছোটা কোনো সৃজনশীলতা নয়। বরং এই প্রবণতা আমাদের সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং আত্মিক শুদ্ধতার ওপর এক গভীর আঘাত। আমরা চাই একটি সুস্থ, নিরাপদ ও শালীন ভার্চুয়াল জগৎ—যেখানে মানুষ বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিবাচকতার আলোয় আলোকিত হবে।

‎ভিউ নয়, গঠনমূলক চিন্তা হোক আমাদের লক্ষ। ভাইরাল নয়, নৈতিকতা হোক আমাদের অহংকার। দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব একটি সুস্থ ও মানবিক ফেসবুক গড়ে তোলা। এখনই সময়—প্রতিবাদ গড়ে তোলার, নিজেকে বদলানোর এবং অন্যকেও সচেতন করার। নইলে ভিউয়ের দৌড়ে আমরা একদিন হারিয়ে ফেলব আমাদের মূল্যবান মানবতা, নৈতিকতা এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।

এস.

এম. রেদোয়ানুল হাসান রায়হান
আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ ‎বিভাগ
‎ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব কনট ন ট ব কনট ন ট ন ত কত আম দ র ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ