Prothomalo:
2025-11-03@06:14:13 GMT

ভিউয়ের দৌড়ে মূল্যবোধের পতন

Published: 22nd, May 2025 GMT

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এটি যেমন মানুষের ভাবনার আদান-প্রদানের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে আত্মপ্রকাশ ও বিনোদনের এক নতুন ক্ষেত্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্ল্যাটফর্মেই দিনে দিনে বাড়ছে অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট আর সামাজিক অনৈতিকতার চর্চা। ভিউ, লাইক, ফলোয়ার বা ভাইরাল হওয়ার আশায় অনেকেই এখন মূল্যবোধ, শালীনতা আর নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছেন। যার ফলে ফেসবুকের মতো শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার।

একটা সময় ছিল, যখন কেউ কিছু পোস্ট করলেই তা দিয়ে তার চিন্তা-চেতনার পরিচয় মিলতো। কিন্তু এখন অনেকেই কনটেন্ট তৈরি করছেন শুধুমাত্র ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য। যেন এটাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র লক্ষ। অর্ধনগ্ন ভিডিও, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ভুয়া প্রেম-ভাঙন নাটক কিংবা আপত্তিকর প্র্যাংক—এসবই যেন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে কিছু তথাকথিত ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-এর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব কনটেন্টে দেখা যায় হাজার হাজার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। সমাজের নানা স্তরের মানুষ—বিশেষত তরুণ প্রজন্ম—এসব দেখছে, শিখছে এবং অনুকরণ করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক সংকট।

‎এই সমস্যা শুধু কিছু ব্যক্তি বা কনটেন্ট নির্মাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর দায়ভার সমাজ ও দর্শককেও নিতে হবে। কারণ দর্শকই এসব কনটেন্টকে ভাইরাল করে তোলে। দর্শকদের অসংযমী কৌতূহল, অপ্রয়োজনীয় বিনোদনের তৃষ্ণা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই এসব অশ্লীল কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা যারা ‘দর্শক’, তারা যদি এসব কনটেন্ট এড়িয়ে চলতাম, প্রতিবাদ করতাম বা রিপোর্ট করতাম—তাহলে এমন অবস্থা হতো না।

‎এখানে একটি প্রশ্ন উঠে আসে—ভিউ কি আদতেই জীবনের একমাত্র সফলতার মানদণ্ড? কেবল জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নিজেকে, সমাজকে, এমনকি আগামী প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ধ্বংস করে দেওয়া কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য? ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের যেমন সুযোগ দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহার আমাদের জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এসব অশ্লীলতা দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে, নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে, তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথ রুদ্ধ হচ্ছে।

‎এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। ফেসবুকে আমরা যারা সক্রিয়, আমাদের দায়িত্ব এসব কনটেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবাদ জানানো এবং সুন্দর-শালীন কনটেন্টকে উৎসাহ দেওয়া। সরকার, সামাজিক সংগঠন, এবং পরিবারকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরও কঠোর মনিটরিং ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের।

‎অশ্লীলতা কিংবা ভিউয়ের পেছনে ছোটা কোনো সৃজনশীলতা নয়। বরং এই প্রবণতা আমাদের সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং আত্মিক শুদ্ধতার ওপর এক গভীর আঘাত। আমরা চাই একটি সুস্থ, নিরাপদ ও শালীন ভার্চুয়াল জগৎ—যেখানে মানুষ বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিবাচকতার আলোয় আলোকিত হবে।

‎ভিউ নয়, গঠনমূলক চিন্তা হোক আমাদের লক্ষ। ভাইরাল নয়, নৈতিকতা হোক আমাদের অহংকার। দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব একটি সুস্থ ও মানবিক ফেসবুক গড়ে তোলা। এখনই সময়—প্রতিবাদ গড়ে তোলার, নিজেকে বদলানোর এবং অন্যকেও সচেতন করার। নইলে ভিউয়ের দৌড়ে আমরা একদিন হারিয়ে ফেলব আমাদের মূল্যবান মানবতা, নৈতিকতা এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।

এস.

এম. রেদোয়ানুল হাসান রায়হান
আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ ‎বিভাগ
‎ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব কনট ন ট ব কনট ন ট ন ত কত আম দ র ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ