Prothomalo:
2025-08-01@09:13:53 GMT

শার্পনার

Published: 25th, May 2025 GMT

সকালটা ছিল যেন ঠিক আগের দিনের পুনরাবৃত্তি। মেট্রোরেল ঠিক সময়েই এসেছে। ছেলেটা প্রতিদিনের মতোই মিরপুর ১২ থেকে উঠেছে। আজ একটু ভাগ্য সহায়—উঠেই জানালার ধারে একটা সিট পেয়ে গেল। চোখে একরাশ ক্লান্তি। গন্তব্য ফার্মগেট, প্রতিদিনের অফিস।

দুই স্টেশন পর, মিরপুর ১০-এ দরজা খুলতেই হালকা আলো এসে পড়ল বগির ভেতর। ভিড় বাড়ল। মেয়েটি উঠল—চোখে অস্থিরতা। একটু ফাঁকা খুঁজে পেয়ে ছেলেটার সিটের পাশেই দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রথমেই চোখাচোখি দুজনের—অসম্পূর্ণ কথোপকথনের মতো চাহনি।

ছেলেটা একটু নড়েচড়ে বসল। কয়েক সেকেন্ডের দ্বিধা। তারপর যেন হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিল। উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি চাইলে বসতে পারেন।’

মেয়েটা একটু আমতা আমতা করল, যেন এভাবে সদয় হওয়ার অভ্যাস নেই তার চারপাশে। তারপর ধীরে মাথা নেড়ে বসল। ছেলেটা দাঁড়িয়ে রইল—হাতে ধরা ব্যাগটা হাঁটুতে।

ট্রেন ছুটে চলল।

দুই

মিরপুর ১২ নম্বরের একটা পাঁচতলা বাসার তিনতলার পেছনের ঘরে থাকে ইরাজ। ঘরটায় ঢুকলেই একটা গুমোট ভাব লাগে—দেয়ালে পেলিং অফ রং, টেবিলের ওপর অগোছালো কাগজপত্র আর একটা নীল কাপে আধখাওয়া বিস্কুট। সেই ঘরেই প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কাজের ব্যস্ততা নামিয়ে রেখে কিছুক্ষণের জন্য হাঁপ ছাড়ে সে।

ছেলেটা খুব সাধারণ। ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাঝারি গোছের পদে চাকরি করে—সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা। জীবন তার এক সোজা সরু রাস্তায় এগোচ্ছে, যেখানে আশার চেয়ে অভ্যস্ততাই বেশি।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ হলো, কিছু একটা বদলে গেছে।

রাতগুলো ইরাজের কাছে ধীর; ঘুম আসে না। শরীর ক্লান্ত হলেও চোখ দুটো খোলা থাকে—চোখের পাতা একে অন্যকে ছুঁতেই চায় না। ফ্যানের ঘূর্ণিতে বাতাস আসে, কিন্তু তার ওই আওয়াজ সহ্য হয় না। বিছানায় শুয়ে সে শরীরটা ধরে বোঝার চেষ্টা করে—ঠিক আছে সব? কিন্তু কেন এই শূন্যতা?

এক রাতে, ইরাজ হঠাৎ করেই বুঝতে পারে—তার শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। সেই অচেনা অনুভবটা তাকে প্রথমে বিভ্রান্ত করে, পরে ভয় দেখায়। কিছু একটা ভুল হচ্ছে তার মধ্যে। পরদিন সকালে ঠিকই উঠে পড়ে। পাউরুটি আর ডিমভাজি খেয়ে ব্যাগ কাঁধে অফিসের দিকে বেরিয়ে পড়ে। বাসে লোকের ভিড়, ধাক্কাধাক্কি, ধুলার গন্ধ—সবকিছুই আগের মতো, শুধু ইরাজ আগের মতো নয়।

অফিসে সে ফাইল গুছিয়ে, বসের মুখ দেখে মেপে মেপে কথা বলে, কলিগদের হালকা ঠাট্টা হাসিতে মেশে—কিন্তু ভেতরে তার একটানা একটা হাহাকার কাজ করে। মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ করে সে শ্বাস নেয়, যেন নিজের শরীরের ভেতরটা শুনতে চায়। বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে এখন প্রায়ই নিজেকে দেখে—কোনো কিছুর সন্ধানে, অথচ কোনো ভাষা নেই সেই প্রশ্নের।

তিন

ইরাজ ভাবত, জীবন একবারে ভেঙে পড়ে না—ধীরে ধীরে ভাঙে। একদিনে সব বদলায় না, কিন্তু একদিন হঠাৎ মনে হয়, কিছুই আর আগের মতো নেই। তিন বছর ধরে এই চাকরিটা করছে সে। প্রতিদিন একটাই ডেস্ক, একটাই মনিটর, আর সেই একই অভ্যর্থনার মেয়েটির কৃত্রিম হাসি। অফিসে ঢুকেই কাজের তালিকা মাথায় গেঁথে নেয়—বিল ভাউচার ঠিক করা, সাপ্লায়ারদের সঙ্গে ফলোআপ, বসের মুখের কুঞ্চিত ভ্রু দেখে নীরবে কাজ বুঝে ফেলা। আর সহ্য করতে না পারা ছোট ছোট অপমানগুলো।

সেই সব কথা চেপে বসে বুকের ভেতর।

প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় ইরাজ বাসে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। চারপাশে যান্ত্রিক শহর, অথচ তার নিজের মাথার ভেতরটা আরও বেশি যন্ত্র হয়ে উঠছে।

মানসিক চাপ কীভাবে শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়ে, সেটা সে আগে বোঝেনি। এখন বুঝতে পারছে—দিন শেষে তার শরীর ক্লান্ত, কিন্তু ঘুম নেই। খাবার মুখে তুললেও স্বাদ নেই। এমনকি কিছু একটা ভালো লাগলেও সেই ভালো লাগাটা মনের গহিন ছুঁয়ে আর ফেরে না।

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটা—সে কাঁদতেও পারছে না। চোখে জল আসে না। গলা চেপে ধরা কান্না আটকে থাকে বুকের নিচে, ফুসফুসের আশপাশে। মাঝেমধ্যে ছাদে উঠে দাঁড়িয়ে থাকে সে—ছাদের রেলিংয়ের পাশে, যেখানে বাতাসটা একটু বেশি বয়। তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে। মনে হয়, এক ঝাঁপ দিলে যদি কিছু থেমে যায়। কিন্তু পরমুহূর্তেই হোঁচট খায় সেই ভাবনায়। মা ফোন করবে আজ রাতেও—‘খেয়েছিস? শরীর ঠিক আছে?’ ইরাজ বোঝে, এই অদৃশ্য চাপ, এই অব্যক্ত ব্যর্থতার বুদ্‌বুদের নামই বোধ হয় ডিপ্রেশন। অফিসের সহকর্মীদের কেউ সেটা বুঝবে না। বন্ধুদের সঙ্গে এখন আর আগের মতো খোলাখুলি গল্প হয় না। মনের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলো কখন যে পাথর হয়ে গেছে, সে নিজেই জানে না। তবে একটা জিনিস সে জানে—নিজের শরীর তাকে যা বলছে, সেটা অস্বীকার করে আর টিকে থাকা যাবে না।

চার

তিনটা বেজে গেছে।

ঘড়ির কাঁটা যেন শব্দ করে জানান দিচ্ছে—এই রাতে ঘুম আসবে না। চোখের নিচে কালচে ছায়া, মাথায় ভার, বুকের ভেতরটা থমথমে। ইরাজ জানে, আজও সে জেগে থাকবে। কিন্তু কখন যেন সেই জেগে থাকাটাও স্বপ্নে পরিণত হয়। ঠিক কোন মুহূর্তে ঘুম এসে তার ওপর ছায়া ফেলল, টেরই পায় না।

সে হেঁটে যাচ্ছে একটা অচেনা রাস্তা ধরে। রাস্তাটা ফাঁকা, নীরব, যেন সব শব্দ গিলে খেয়েছে। বাতাস নেই, শুধু কেমন একটা থমকে থাকা সময়। হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পায় ঘেউ ঘেউ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে—একটা কুকুর! সাধারণ কুকুর নয়, চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে, আর দাঁত বার করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ইরাজ দৌড়াতে চায়, কিন্তু পা যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে। কুকুরটা ছুটে আসছে তার দিকে, ক্রমশ দ্রুত, ভয়াবহ!

ঠিক সেই মুহূর্তে, হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটা মেয়ে এগিয়ে আসে—চুল হালকা উড়ছে বাতাসে, চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। সে কোনো ভয় পায় না, কোনো প্রশ্ন করে না। মেয়েটি ধীরে গিয়ে কুকুরটাকে কোলে তুলে নেয়। কুকুরটা হঠাৎই শান্ত হয়ে যায়, যেন তার রাগ, তার ভয়—সবকিছু মিলিয়ে উবে গেছে একটিমাত্র স্পর্শে। ইরাজ দাঁড়িয়ে থাকে স্তব্ধ। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে। মেয়েটি একবার তার দিকে চায়—চোখে রহস্যময় কোমলতা, একধরনের মায়া।

তারপর বলে, ‘ভয় পাও না.

..ও কিছু না।’

তারপর ধীরে ধীরে সব আবছা হয়ে যায়।

ঘুম ভেঙে উঠে বসে। বুক ধড়ফড় করছে, কপাল ঘামছে ইরাজের।

পাঁচ

সকালটা অন্য রকম লাগছিল ইরাজের। ইদানীং মিরপুর ১২ থেকে প্রতিদিনই সে মেট্রো ধরে ফার্মগেট যায়, কিন্তু আজ যেন একটা অদ্ভুত উত্তেজনা বুকে কাজ করছিল। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই ইরাজ এক দৌড়ে উঠে পড়ল। সৌভাগ্যক্রমে জানালার ধারে একটা সিটও পেয়ে গেল।

দুই স্টেশন পর, মিরপুর ১০। দরজা খুলল। একঝলক আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল ইরাজের। এরপরই সে মেয়েটিকে দেখল। বুক ধক করে উঠল তার। এ তো সেই মেয়ে! একই চোখ, একই মুখাবয়ব, শুধু এবার বাস্তবে।

মেয়েটি ট্রেনে উঠে ভিড়ের ভেতর একটু ধাক্কা খেয়ে এসে ঠিক ইরাজের সিটের পাশে দাঁড়াল। চোখে চোখ পড়ল। ইরাজ চমকে গেল, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল, ‘আপনি চাইলে বসতে পারেন।’

মেয়েটা প্রথমে দ্বিধায় পড়ে গেল, তারপর কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে ধীরে বসে পড়ল।

ইরাজ কিছু বলল না, স্বপ্নের কথা একটুও বুঝতে দিল না মেয়েটিকে।

‘আমি মীম’ মেয়েটা হঠাৎ বলল।

ইরাজ একটু হাসল, ‘আমি ইরাজ।’

মেট্রোর গতি অবিরাম, কিন্তু ইরাজের সময় যেন থমকে গেল ওই এক নামেই।

মেট্রোর সিটে বসে থাকলেও মীমের মন ছিল সম্পূর্ণ অন্যখানে। চারপাশে এত ভিড়, শব্দ, আলো—কিন্তু তার ভেতরটা নিঃসাড়। একটা লড়াই সে প্রতিদিন লড়ছে, অগোচরে। আজকে এই অপরিচিত ছেলেটার সৌজন্যে বসার সুযোগ হলেও, তার কাঁধে যে ভার—তা কিছুতেই নামিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

ইরাজ তার পাশে দাঁড়িয়ে, হয়তো তাকিয়েও আছে তার দিকে, কিন্তু মীম জানে—এই মুহূর্তে কেউই তাকে ছুঁতে পারবে না। একা এক সংগ্রামে সে।

মাত্র ২১ বছর বয়সে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় হঠাৎ এক সকালে বাবাকে হারায়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে মা শুধু বলেছিলেন, ‘তোর আব্বা উঠছে না…’ হার্ট অ্যাটাক—চোখের পলকে সব শেষ। সেদিন থেকেই জীবনের ইমোজি বদলে গিয়েছিল মীমের। আশ্রয় বলতে যেটুকু ছিল, সেটুকুও নেই হয়ে গিয়েছিল। এরপর শুরু হয় চলার মতো একটা চাকরি দিয়ে। অফিস আর বাসা—এই নিয়েই দিন। তবে বাসা বললেই ভুল হবে—ওটা যেন একটা ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র। মা, ক্যানসার আক্রান্ত। ডাক্তারের ভাষ্যমতে, সময় খুব বেশি নেই।

এর মধ্যেই আরেকটি মৃত্যু অপেক্ষা করছে। তার সবচেয়ে কাছের—পোষা কুকুরটি, রকি। এগারো বছর ধরে একই বিছানায় ঘুমানো, একসঙ্গে খাওয়া, হাসা-কান্না—সবকিছু। এখন রকি অসুস্থ। পশু হাসপাতাল থেকে বারবার বলা হয়েছে, সময় খুব কম। তবু হাল ছাড়ে না মীম।

এই দুই মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে মীম ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছিল ভেতরে ভেতরে। আজ, ঠিক এমন একটা সময়েই এই অপরিচিত ছেলেটা—ইরাজ। নামটা উচ্চারণ করেই যেন একটু হালকা লাগল। অদ্ভুত এক শান্ত ভাব আছে ছেলেটার চোখে, অথচ সে কিছু জানে না মীমের ভেতরের ঝড়ের কথা। হয়তো জানার দরকারও নেই।

মেট্রোর গতি তখনো থেমে নেই। কিন্তু মীম জানে—তার জীবনের গতি আজ একটু বদলেছে। খুব সামান্যই, কিন্তু অনুভবযোগ্য।

ইরাজ দাঁড়িয়ে আছে, ট্রেনের হালকা দুলুনিতে সে খানিকটা দোল খাচ্ছে, কিন্তু ভেতরটা তার হঠাৎ যেন আরও বেশি কাঁপতে শুরু করেছে।

কিছু একটা হচ্ছে, যা গত ছয় মাসে হয়নি।

সে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না। কিছু একটা কাঁটার মতো খচখচ করছে বুকের ভেতর। বুকের মাঝখানে যেন অজানা তাপ জমা হচ্ছে, ঘামটাও একটু বেড়ে গেছে। মাথার ভেতর থেকে চোখে এসে জমছে অদ্ভুত এক অনুভূতি। উত্তেজনা?

‘না, এটা তো হয় না এখন, অনেক দিন হলো এমন কিছু অনুভব করিনি।’ ইরাজ মনে মনে বলে। গত ছয় মাস ধরে সে এক অদ্ভুত অবসাদের মধ্যে আছে। শরীরটা কেমন নিস্তেজ, অনুভূতিগুলো থমকে যাওয়া। ডাক্তার দেখানোর কথা ভাবছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। শরীরে কোথাও যেন অনুভব নেই, আগ্রহ নেই।

কিন্তু এখন, মীমকে দেখে কেন যেন তার শরীর সাড়া দিচ্ছে।

এটা কি সত্যিই মীমকে দেখে? নাকি সেই পারফিউমের ঘ্রাণ?

মেয়েটার গায়ে হালকা, কিন্তু মাতানো একটা ঘ্রাণ লেগে আছে—ফুল নয়, যেন রেণুর, যেন কোনো পুরোনো দিনের আবেশ তার।

ইরাজ কনফিউজড হয়ে যায়। সে নিজেকে প্রশ্ন করে—‘আমি কি মেয়েটাকে অনুভব করছি? নাকি ঘ্রাণটা? নাকি দুটোই?’

তার চোখ চলে যায় মীমের দিকে। মেয়েটা তখন বাইরে তাকিয়ে আছে, জানালার কাচে মুখটা হালকা ভেঙে যাচ্ছে আলোছায়ার খেলায়। কোনো অলংকার নেই, সাজগোজও না, কিন্তু চাহনিতে কী যেন আছে। একধরনের ক্লান্তি, একধরনের গভীরতা, যা সোজা এসে লাগে ইরাজের মগজে।

সে হঠাৎ চমকে ওঠে।

এই আকর্ষণটা যদি কেবল শরীরী হয়, তবে তার মানে কী?

আর যদি মনের গভীর থেকে হয়, তবে এত দ্রুত কেন?

নিজের শরীর আর মন—দুটোরই মধ্যে যেন একটা দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।

মীম কিছুই জানে না এসব নিয়ে, অথচ ইরাজ জানে—তার ভেতর কিছু খুলে যাচ্ছে, মুছে যাচ্ছে আগের জড়তা। আর সে নিজে এখন কী চায়।

মেট্রোর ভেতরে বাতাস বইছে, অথচ মীমের বুকের ভেতরটা ধীরে ধীরে গরম হয়ে উঠছে। ইরাজ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, চুপচাপ। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেই চুপচাপ থেকেও একটা উপস্থিতি ছড়িয়ে আছে মীমের চারপাশে—যেন জানা-অজানা।

সে লক্ষ করছে, ইরাজ তাকে মাঝেমধ্যে দেখছে। খুব খেয়াল করে না, কিন্তু সেই চাহনি গায়ে লাগে। মীম নিজেও বুঝে উঠতে পারছিল না—এই অপরিচিত ছেলেটার প্রতি সে কেন এতটা মনোযোগী হয়ে উঠছে?

‘আমি কি আসলে তাকে পছন্দ করছি?’

‘নাকি আমি জানি, আমার জীবন থেকে দুইটা প্রাণ চলে যাবে শিগগিরই; আর সেই শূন্যতার ভাগ দিতে আগেভাগেই কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাইছি?’

ইরাজের মধ্যে একটা অদ্ভুত কোমলতা আছে। সে চাইলেই বসে থাকতে পারত, কিন্তু সে উঠে দাঁড়িয়েছিল। অথচ অনেকেই তা করত না।

সে ভাবে, ‘এই ছেলেটা কী এমন, যার সামনে ভেঙে পড়া যাবে? নিঃশর্তভাবে? কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে?’ রকি আর মা অপেক্ষা করছে। দুজনেই চলে যাবে শিগগিরই। রকি চিকিৎসা নিচ্ছে, কিন্তু শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। আর মা—তার চোখের নিচের কালি দিন দিন গাঢ় হচ্ছে, কণ্ঠ নিস্তেজ, হাড্ডিসার শরীর। ডাক্তার শেষ কথা বলে দিয়েছে।

তাহলে এই ইরাজ? এই নাম না জানা অনুভব?

এটা ভালো লাগা?

নাকি আসন্ন মৃত্যুশোকের ভার প্রদানের অবচেতন প্রয়াস?

মীম বুঝে উঠতে পারে না।

সে শুধু জানে—তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে। হয়তো কাঁধে মাথা রাখতে। হয়তো শুধু একবার বলতে, ‘আমাকে একা ছেড়ে যেয়ো না।’

কিন্তু সে চুপ করে থাকে। যেভাবে এত বছর ধরে থেকে এসেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ভ তরট য ন একট র একট ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ