প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সরকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”

সোমবার (২৬ মে) মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের চেয়ারম্যান স্টিফেন স্নেকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন ৩০ জুনের ওই পারে যাবে না, সবাই সন্তুষ্ট: প্রেস সচিব

বৈঠক শেষে মান্না: সরকারের মেয়াদ ‘স্পষ্ট’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের প্রসঙ্গে ড.

ইউনূস বলেন, “বাস্তব অবস্থা যাচাইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।”

তিনি বলেন, “যেকোনো সাংবাদিক যেকোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারেন। অভ্যুত্থানের পর অনেকে এখানে এসেছেন।”

অধ্যাপক ইউনূস জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুয়া তথ্য প্রচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, “দক্ষিণ এশিয়ার কিছু গণমাধ্যমসহ দেশের বাইরের উৎস থেকে ব্যাপকভাবে অভ্যুত্থানকে উগ্র ইসলামপন্থী আন্দোলন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করছি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যা দেশের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলছে।”

শ্নেক গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যক্রম এবং প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কে জানতে চান।

জবাবে ইউনূস জানান, সংবিধান সংশোধনের যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যালঘুরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতোই সমান অধিকার ভোগ করবেন।”

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের দীর্ঘদিনের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণে ইউএসসিআইআরএফের সহায়তা চান অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি জানান, তার আহ্বানে জাতিসংঘ সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে যাচ্ছে।

ড. ইউনূস বলেন, “এই সংকটের সমাধান দরকার। যত দ্রুত সম্ভব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম বড় হচ্ছে। তাদের আশা দিতে হবে।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত ইউন স ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের একজন রাজনৈতিক অভিভাবক দরকার

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের অবদমিত মানুষের প্রত্যাশায় বিরাট উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনার পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে মানুষের মধ্যে এমন আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়, যা শুধু ‘রূপকথায় সম্ভব’। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ‘আলাদিনের প্রদীপ’ নেই। বরং দুর্নীতিতে জেরবার ও খাদের কিনারে থাকা দেশের দায়িত্ব নেওয়াই ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সেটা জানতেন। সেই কারণেই হয়তো বিদেশ থেকে ফিরে দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, যদি দেখেন যে দায়িত্ব পালনে বাধা আসছে কিংবা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এক মুহূর্তও এই পদে থাকবেন না। 

এই বক্তব্যের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন যে শর্তসাপেক্ষ ও নীতিনির্ভর– সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন। এটাও বলেছিলেন, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ ‘শিক্ষার্থীদের আহ্বানের কারণেই’। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ তৈরি করেছিলেন; তখন সেটা দরকারও ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ‘অতি আশাবাদী’ মানুষের মোহভঙ্গও শুরু হয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে। উপদেষ্টাদের উল্লেখযোগ্য অংশ রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ শুধু নন; তাদের অদক্ষতাও স্পষ্ট। তবু জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শর্তহীন সমর্থন অব্যাহত রাখে। ওদিকে, ১৬ বছর ধরে সুবিধাভোগী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করতে থাকে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস না হলে এই চাপ মোকাবিলা করে সরকার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
দেশের অভ্যন্তরে রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে পড়ে। দাবির পর দাবি সামনে এনে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠী। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দেয় জুলাই অভ্যুত্থানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা বিএনপি ও জামায়াতের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপরতা। এত পক্ষ-বিপক্ষ এবং সুবিধাবাদী ও সুবিধাহারা লোকজনের অতি তৎপরতা সামলানোর মতো দক্ষতা দেশ পরিচালনা ও রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদের নেই। ফলে ইতোমধ্যে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠেছে বেকারত্ব বাড়ার কারণে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে বেকার বেড়েছে সোয়া ৩ লাখ। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৮ থেকে ১০ লাখ। অর্থনীতি সচল রাখা ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে দেশের অন্যতম দুটি খাত আবাসন ও গার্মেন্টস থেকে প্রায় পাঁচ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন; দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ধ হওয়াসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থায়ন কমে যাওয়ায় এনজিওতে প্রায় দুই লাখ মানুষ বেকার। সরকার পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা, আর্থিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা, কর্মসংস্থানে ধস, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কয়েকজন উপদেষ্টার ‘একান্ত কর্মচারীর’ দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রমাগত বিরোধিতা, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষের প্রশাসনিক ও আর্থিক সুবিধা লাভ, সর্বোপরি সরকারের দিক থেকে অবাধ তথ্য সরবরাহ না থাকায় নানা জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলেছে। 
প্রশ্ন হলো, গত আগস্ট থেকে দেশে যা কিছু ঘটেছে, সেগুলো কি খুবই অস্বাভাবিক? এর সহজ উত্তর– না। কিন্তু জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যাশার পারদ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে; পান থেকে চুন খসলেই মানুষ মেনে নিতে পারছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও সম্ভবত উপদেষ্টা পরিষদের নেই। 

এ কথা বলতেই হবে, ড. ইউনূসের যে আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও সমর্থন, সেটা এ মুহূর্তে কোনো জীবিত বাংলাদেশির নেই। তবে দেশের ভেতরে যে বিশৃঙ্খলা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে ও আগামীতে তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলোকে উপযুক্তভাবে মোকাবিলায় একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক অভিভাবক দরকার। যার ব্যাপারে কোনো পক্ষ থেকে আপত্তি আসবে না এবং যিনি রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে লক্ষ্য অর্জনে সর্বোত্তম সহযোগিতা করতে পারবেন। এ মুহূর্তে জীবিত রাজনীতিকদের মধ্যে এমন ব্যক্তি একজনই; একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মিতভাষী মানুষ। এমনকি যারা বিএনপির রাজনীতি করেন না, তারাও প্রতিপক্ষের উত্তেজনাময় বক্তৃতার বিপরীতে খালেদা জিয়ার ধীরস্থির ও শান্ত বক্তব্যকে প্রশংসা করেন। ২০১৩ সালে বাড়ির সামনে বালু ও ময়লাভর্তি ট্রাক রেখে তখনকার সরকার তাঁকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। পরে জেলে বন্দি করেছিল। আওয়ামী লীগ তো বটেই; শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবেও খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেছেন। এমনকি তাঁকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও এ ধরনের তীব্র মানসিক চাপ মোকাবিলা করেছেন। কিন্তু জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে মুক্ত হওয়ার পর একটাও বাজে শব্দ উচ্চারণ করেননি শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাঁর এই অবস্থান আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেও এসেছেন। এ মুহূর্তে খালেদা জিয়া সম্ভবত দেশের জীবিত রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক পরে যোগ দিলেও খালেদা জিয়া অনেক ঝানু রাজনীতিকের চেয়ে নিজেকে প্রজ্ঞাশীল প্রমাণ করেছেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। তিনি যে আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন, সেটা ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ‘মাইনাস টু থিওরি’ নস্যাতের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ যে সুখী-সমৃদ্ধ অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে; সে দেশ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎমুখী হবে; ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের নয়। সে বাংলাদেশ প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে, কিন্তু নতজানু হয়ে নয়। সেই বাংলাদেশ তৈরিতে জাতির ক্রান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, সেটাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ঐক্যের প্রতীক হয়ে দেশের রাজনীতিতে অভিভাবকের ভূমিকায় সহায়তা করতে পারেন খালেদা জিয়া। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের কাজগুলো সুন্দরভাবে সমাধান করতে তাঁর মতো সর্বজনগ্রাহ্য নেতার পরামর্শ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার। 

মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক;
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগীদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম
  • নির্বাচনের রোডম্যাপ না পেয়ে ‘হতাশ’ বিএনপি
  • জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় হতাশ বিএনপি
  • আমাদের একজন রাজনৈতিক অভিভাবক দরকার
  • লক্ষ্মীপুরে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের অনুদানের চেক বিতরণ 
  • ভর্তিতে জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দেবে ঢাবি 
  • জুলাই গণহত্যার বিচারের রায় এ সরকারের আমলেই: আইন উপদেষ্টা