পল্লবীতে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, সৌদিপ্রবাসী যুবক গ্রেপ্তার
Published: 28th, May 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় এক দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে পল্লবী থানার মিরপুর-১১ নম্বরের বি ব্লকের পাঁচতলা একটি বাসার পঞ্চম তলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই সৌদিপ্রবাসী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুন হওয়া দুজন হলেন দোলনা আক্তার দোলা (২৯) ও তাঁর স্বামী পাপ্পু (৩৬)। গ্রেপ্তার যুবকের নাম গাউস মিয়া।
পুলিশ বলছে, গাউস মিয়ার সঙ্গে দোলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দোলার বিয়ে হয়েছে, সেটি তিনি আগে জানতেন না। আজ সকালে গাউস মিয়া বিষয়টি জানতে পারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দোলা ও তাঁর স্বামীকে গাউস মিয়া কুপিয়ে হত্যা করেন।
পুলিশের পল্লবী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সালেহ মুহম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দোলনা আক্তার উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে এলএলএম করছেন। তিনি মিরপুর-১১ নম্বরে একটি ভবনের পাঁচতলায় ‘সাবলেট’ থাকতেন। তাঁর স্বামী পাপ্পু বরগুনায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এ কারণে তিনি বরগুনাতে থাকতেন। তিনি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতেন। দুই দিন আগে তিনি বরগুনা থেকে ঢাকায় আসেন।
খুনের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ মুহম্মদ জাকারিয়া বলেন, গ্রেপ্তার গাউস মিয়া সৌদিপ্রবাসী। গাউস মিয়ার সঙ্গে দোলার ফেসবুকে পরিচয় হয়। সেই সূত্রে দোলার সঙ্গে গাউস মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত জানুয়ারিতে গাউস মিয়া দেশে ফিরে মিরপুরের একটি বাসায় ওঠেন। তারপর বিভিন্ন সময় দোলার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। দোলার বিয়ে হয়েছে, সেটি গাউস মিয়া জানতেন না। আজ সকালে বাসার বাইরে একটি খাবার হোটেলে নাশতা করতে গিয়েছিলেন দোলা ও তাঁর স্বামী পাপ্পু। গাউস মিয়া তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে অনুসরণ করতে থাকেন। দোলা ও পাপ্পুকে একসঙ্গে বাসায় উঠতেও দেখেন তিনি। বিষয়টির খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন, দোলা আগেই বিয়ে করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে দুটি ছুরি নিয়ে দোলার বাসায় যান গাউস। পরে দোলা ও তাঁর স্বামী পাপ্পুকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
গাউস মিয়া পুরো ঘটনা অকপটে স্বীকার করেছেন বলে জানান এডিসি সালেহ মুহম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, দোলার স্বামী আছে, সেটি জানতে পেরেই গাউস উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না। আর তখনই তিনি দোলা ও তাঁর স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে বাতি নিভিয়ে ৬৫ জনকে ফেরত নিল বিএসএফ
লালমনিরহাটের তিন উপজেলার ছয় সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৬৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বুধবার এ নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তা ও উত্তেজনার পর রাত ৯টার দিকে সীমান্তের সব বাতি নিভিয়ে ৬৫ জন ভারতীয় নাগরিককে নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে বিএসএফ। এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে একসঙ্গে এসব মানুষকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দিকে ঠেলে দেয় তারা। কিন্তু বিজিবি ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বাধায় ৬৫ জনের কেউ বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি।
ওই দিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ৬৫ নারী-পুরুষ-শিশু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে খোলা জায়গায় অবস্থান করছিল। এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলার চওড়াটারি সীমান্তে ঠেলে দেওয়া ১৩ জনের দলে মরিয়ম নামে আট মাস বয়সী একটি শিশুও ছিল। স্থানীয়রা তাদের দুধ, কলা ও পানি দিয়ে সহায়তা করে। সীমান্তের লোকজন জানায়, আটকে পড়া ওই ৬৫ জন ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা।
জানা গেছে, আদিতমারী সীমান্তে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে নিতে বুধবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে দুই দফা পতাকা বৈঠক হয়। প্রথমে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে ও পরে হয় ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে বৈঠক। কিন্তু কোনো বৈঠকেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বিএসএফ। বৈঠকে বিজিবি সাফ জানিয়ে দেয়, আটকে পড়া এসব মানুষ আসাম রাজ্যের বাসিন্দা। বাংলাদেশ তাদের কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। পরে সীমান্তের লাইট পোস্টগুলোর বাতি একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। এর এক ফাঁকে রাতের অন্ধকারে বিএসএফ তাদের নাগরিকদের ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, বিএসএফ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করল, তারা সীমান্তে অযাথা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
মঙ্গলবার রাতে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন, হাতীবান্ধা উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে ২৪ জন, পাটগ্রাম উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে ২৮ জনকে তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
এদিকে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৩ জনকে বাংলাদেশ অংশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আজ দুপুরে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ সর্বোচ্চ ২১ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৯৪৭ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
এদিন দুপুরে মুড়িয়া সীমান্ত থেকে বিএসএফের ঠেলে দেওয়া ২১ জনকে আটক করে বিজিবি বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করেছে। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেহেদি হাসান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা সবাই বাংলাদেশি প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের সবার বাড়ি নড়াইল জেলায়।
আগের রাতে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর সীমান্তে ১৩ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। বিজিবি তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। নাম ও পরিচয় যাচাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মঈন হুসেন।
একই রাতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। কাশিপুর ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা তাদের আটক করে। গতকাল দুপুরে আটকদের ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়। আটকদের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার বজরেরখামার এলাকায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, ৯ জনকে ঠেলে দেওয়ার ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বজনদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য)