হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
Published: 28th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে তিনি এ দাবি করেছেন।
হামাস এখনো মোহাম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের শীর্ষনেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই। চলমান গাজা যুদ্ধে ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর গত বছর মোহাম্মদ সিনওয়ার হামাসের শীর্ষ নেতা হন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা মোহাম্মদ দেইফ, (ইসমাইল) হানিয়াহ, ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং মোহাম্মদ সিনওয়ারকে নির্মূল করেছি।”
তিনি বলেছেন, “গত দুই দিনে আমরা হামাসের সম্পূর্ণ পরাজয়ের দিকে নাটকীয় মোড় নিয়ে এসেছি।”
ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ বিতরণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনছে উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা খাদ্য বিতরণের নিয়ন্ত্রণও নিচ্ছি।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের ১২১ প্রস্তাব বাস্তবায়নে ধীরগতি
উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়াই যে ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ ঘোষণা করেছিল, গত আড়াই মাসেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে উপদেষ্টা পরিষদ এই সুপারিশগুলো নিজেরা সরাসরি বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করে। কিন্তু এ নিয়ে দীর্ঘদিন আর কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। সংস্কার-নির্বাচন বিতর্ক এখন জাতীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ১২১টি সুপারিশের বাইরের বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা শেষ করেছে। সেখানে মৌলিক কিছু বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। শিগগির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
কিন্তু সরকার নিজেরা যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি কেমন? সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সুপারিশগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে কিছু দিকনির্দশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই সুপারিশগুলো আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, বাস্তবায়নযোগ্য হলে বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময়সীমা, বাস্তবায়নের প্রভাব কী হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মতামত নিতে হবে। এর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তা আবার উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করবে।
প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আড়াই মাস পর এই নির্দেশনা এসেছে। এখন সব বিভাগ, মন্ত্রণালয় থেকে মতামত পেতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে। কারণ, তাদের এ-সংক্রান্ত আইন, বিধি ও প্রশাসনিক কাঠামো সুপারিশের আলোকে পর্যালোচনা করতে হবে। তার পর তা উপস্থাপন করা হবে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, ‘এখন আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যালোচনার কাজ শুরু করব। এর পর উপদেষ্টা পরিষদের সেগুলো উপস্থাপন করা হবে।’ কবে এ কাজ শেষ হতে পারে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলতে পারছি না। শেষ হলে জানা যাবে। তবে রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই স্বল্প সময়ে যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’
উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচন, পুলিশ, বিচার, দুদক ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের মধ্য থেকে ১২১টি সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ মনে করছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার ৯, বিচার বিভাগের ৩৮, দুদক সংস্কারের ৪৩, পুলিশ সংস্কারের ১৩ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব রয়েছে ১৮টি।
গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এসব প্রস্তাব চিহ্নিত করে আইন উপদেষ্টা পাঠান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ নির্ধারিত ছকে প্রস্তাব পাঠাতে ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয়। এর পর সচিবরা গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মতামত দেন। ২২ মে এলো উপদেষ্টা পরিষদের নির্দশনা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করেছি। আরপিওসহ অনেকগুলো অধ্যাদেশের খসড়া করে দিয়েছি। প্রতিবেদন জমার পরই এগুলো বাস্তবায়ন করা যেত। কিন্তু কেন বিলম্ব হচ্ছে, জানি না। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে দেরি হলে অন্যান্য বিষয় ঝুলে যাবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক কাজ। কিছু প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে রাজনৈতিক মতামত ছাড়া বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুদক কমিশনের প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এর পর ৫ ফেব্রুয়ারি বিচার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। সে জন্য আমি চাইব সংস্কার কমিশন আশু করণীয় বা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়– এমন সুপারিশ দ্রুত আলাদাভাবে পেশ করুক।’
এর পর মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা পেয়ে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে মতামত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেন সংশ্লিষ্ট সচিবরা। ১২১ প্রস্তাবের বেশির ভাগ আইন, বিধি ও নীতিমালা সংশোধন-সংক্রান্ত। কয়েকটি প্রস্তাব প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ইচ্ছে করলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনসহ অতি জরুরি সংস্কার সুপারিশ যেমন– আরপিও এবং আইনবিধি সংশোধন করতে পারে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা যায়। অন্যগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা যেত।
দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে ইসি, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ৯টি হলো– গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন), নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক) পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী), পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা এবং শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ইসির বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয়েছে। তবে এরপর আইন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাড়া পাইনি। আমরা অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করতে পারব না। কারণ, ইসির সবগুলো বিষয় আইন সংশোধন বা প্রণয়ন-সংক্রান্ত।’
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের বিষয় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর পরও কেন বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে না, তা জানি না। বিচার-সংক্রান্ত ৩৮ প্রস্তাবের কয়েকটি আটকে আছে।’
এ ব্যাপারে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়েছে। তারপর পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
অবশ্য ১২১ প্রস্তাব চিহ্নিত করার আগে সরকার অন্তত চারটি সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে গত বছরের ২০ নভেম্বর ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে খসড়া অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় দ্বিতীয় দফায় এ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না– গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এমন সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ২১ জানুয়ারি স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি হয়।
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের ২৫ দিনের মধ্যে সর্বশেষ গত ১৩ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি হয়। তবে এ নিয়ে এখনও জটিলতা চলছে।