ডিসেম্বর থেকে জুন ডেডলাইনে সরকার অনড় কেন?
Published: 29th, May 2025 GMT
জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সৃষ্টি হলেও এর পেছনে ’৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার স্বৈরাচারী মানসিকতা ভূমিকা রেখেছিল। আবার স্বাধীন বাংলাদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে শুরু থেকেই আমাদের ক্ষমতাসীনরা অপারগতা প্রদর্শন করে আসছে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অপারগতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই সরকার ব্যবস্থা ছিল একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে যে সর্বগ্রাসী দলীয়করণ শুরু হয়েছিল, তাতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং আমরা টানা তিনটি ব্যর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি। আরেকটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির লক্ষ্যে যখন পরবর্তী সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে, সেই সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ দাবির প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না বর্তমানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে, জাতীয় নির্বাচনে আপনারা ভোট দিয়ে আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন’ (সমকাল, ২৯ মে, ২০২৫)।
‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ নামে আয়োজন স্পষ্টত এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করাই ছিল দলটির অন্যতম লক্ষ্য। সমাবেশে প্রধান অতিথিসহ সব বক্তাই নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের যে সমালোচনা করলেন, এর মধ্য দিয়েও দলটির উদ্দেশ্য বোঝা যায়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ায় বিএনপি মনে করছে, সরকার নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে। সংস্কারের আবর্তে সবাই ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটির সরাসরি অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। পেছনে তাকালেও দেখা যাবে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাস পার হয়েছে ইতোমধ্যে। শুরু থেকেই কয়েকটি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত ছিল– জুলাই-আগস্টে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, শহীদদের সঠিক তালিকা প্রকাশ, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। পরিতাপের বিষয়, এখনও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। পাওয়া যায়নি শহীদের তালিকা। বিচারের ধীরগতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে এখনই প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ নিরাপদে পালিয়ে গেছে। এদের বিচারের আওতায় আনা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সংস্কার নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় হলেও কোনো ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করার গরজ দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ, নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। সরকারে থাকা কোনো কোনো উপদেষ্টার মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, তারা ক্ষমতা উপভোগ করছেন, নানা অজুহাতে যা দীর্ঘায়িত করতে চান।
স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে সরকারের ভেতরে-বাইরে কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে কিনা? ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অনড় অবস্থানকে নির্বাচন বিলম্বের কৌশল হিসেবে যদি কেউ দেখতে চায়, এর সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচন বিষয়ে সরাসরি ঘোষণা আশা করেছিল বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে বিগত আমলে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যারা শরিক হয়েছিল, তাদেরও একই মত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর হতাশা বেড়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সন্দেহ ও সংশয়। তৈরি হয়েছে অবিশ্বাস।
রাজনৈতিক দলগুলোর সন্দেহ ঘিরে কিছু যৌক্তিক কারণ আছে বৈকি। সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নে কয়েকজন উপদেষ্টা ঘিরে অভিযোগ এলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছে না কারা? বিচার একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। এটি সম্পন্ন হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এখন সরকারঘনিষ্ঠ কোনো দলের নেতা কিংবা সরকারে থাকা কোনো উপদেষ্টা যদি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন হবে না– তাহলে সেটি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার নামান্তর।
এত আলোচনা, সমালোচনা ও দাবির পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নয়; কেন সেটি প্রাকৃতিক বৈরী মৌসুম জুন পর্যন্ত নিতে হবে– সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জনসাধারণের। এই সংশয় ও সন্দেহ তৈরি করার পেছনে সরকারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে জল্পনা ভেসে বেড়াচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে নির্বাচনের জন্য জুন মাসের সময়সীমা দিলেও ভেতরে ভেতরে জাতীয় সরকারের আলোচনাও চলছে বলে নানা সূত্রে খবর আসছে। আবার নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়েও নানা কথা শোনা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে সেটি হলো, আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে চালিয়ে নিতে সমস্যা কোথায়? জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলকে অন্ধকারে রেখে সরকারের তরফে ঘোষিত জুন মাসের সীমারেখায় অনড় থাকার উদ্দেশ্য কী? এটা দেশবাসীকে নির্বাচনমুখী করার কৌশল, নাকি নির্বাচন বিমুখ করার?
এহ্সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক,
সমকাল; কথাসাহিত্যিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ব যবস থ অন ষ ঠ ত ড স ম বর উপদ ষ ট সরক র র লক ষ য আওয় ম দলট র ব এনপ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
১নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের উদ্যোগে স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া ও খাবার বিতরন করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ মে) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি তেরা মার্কেট এলাকায় এ আলোচনা সভা,দোয়া ও খাবার বিতরন করা হয়।
১নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের আহ্বায়ক আলীরাজের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এস,এম,আসলাম।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব শরীফ হোসেন, ১নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাদশা মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, মোশারফ হোসেন, মামুন, সুমন ও রুবেল প্রমূখ।