রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা তৃতীয় দিনের মতো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে গত বুধবার থেকে এ অচলাবস্থা শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও জরুরি বিভাগসহ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসা মেলেনি। কবে নাগাদ এ সংকটের অবসান হবে, তা কেউই বলতে পারছেন না।
গতকাল হাসপাতালজুড়ে ছিল নীরবতা। চিকিৎসক-নার্স ছাড়া পরিবেশে দিশেহারা রোগীদের ছিল হাহাকার। হাসপাতালটির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সংঘর্ষের পরপরই অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যান। কেউ কেউ চিকিৎসার মাঝপথে আটকে পড়ায় রয়ে গেছেন। তাদেরই একজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কোরবান হোসাইন। ছয় মাস ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাঁর ডান চোখ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। গত বুধবারের সংঘর্ষে বাঁ চোখ জখম হয়।
তিনি বলেন, ডান চোখের পর এখন বাঁ চোখও ঝুঁকিতে। তিন দিন ধরে হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ, খাবার বা চিকিৎসা পাচ্ছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমাদের চিকিৎসা আর হবে না। আমাদের থাকার কারণেই নাকি ডাক্তার-কর্মচারীরা সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না। তাই তারা আমাদের সরাতে চান।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী গাউসুল আজম এক চোখ হারিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে। বৃহস্পতিবার চিকিৎসা নিতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে দেখেন হাসপাতাল কার্যত বন্ধ। বেসরকারি হাসপাতালে অনেক খরচ। চক্ষু হাসপাতাল ছাড়া কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়।
নারায়ণগঞ্জের কাউসার আহাম্মেদ কয়েকদিন আগে এখানে চোখের অপারেশন করিয়েছেন। মঙ্গলবার ফের চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হলেও বুধবার থেকে সেবা বন্ধ। তিন দিন ধরে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। চোখের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার পর্যন্ত ৫৫ জন জুলাই যোদ্ধা ছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতালে অন্য কারও প্রবেশের পরিবেশও নেই।
চিকিৎসক, স্টাফ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তারা কয়েক ভাগে বিভক্ত। কেউ চায় আরেকটু সন্তুষ্টির জন্য তাদের ইউরোপ বা আমেরিকায় পাঠানো হোক। আবার কেউ বলে, যা হারানোর তা তো হারিয়েছি, সরকার আমাদের কিছু করে দিক। কর্ম-ব্যবসা বা ঘরবাড়ি, একেকজনের একেকটা প্রয়োজন– সেগুলো করে দিলেই হয়।
অচলাবস্থা কাটাতে শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা.
হাসপাতালে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা জানান, বুধবারের সংঘর্ষের পর থেকে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। তবে পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকায় তারা দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা জানান, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক মঈনুল আহসান সমকালকে বলেন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম কবে চালু হবে, এ বিষয়ে এখন কিছুই বলা যাবে না। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, হাসপাতালে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা কীভাবে চালু করা যায়, চেষ্টা হচ্ছে। আহতদের বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া এবং পুনর্বাসনের দাবির বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। আমরা চেষ্টা করছি, যাদের বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন, যাবে। এ জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পুনর্বাসন তাদের ‘কমন’ দাবি। কিন্তু একেকজনের একেকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে, কাজটা সহজ নয়। আমরা চেষ্টা করছি।
গত ২৫ মে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী বিষপান করলে প্রথম উত্তেজনার সূত্রপাত। বুধবার হাসপাতালে ভর্তি আন্দোলনকারী, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত চ ক ৎসক স ঘর ষ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।