এবার হালদায় মিলেছে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম
Published: 31st, May 2025 GMT
হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবার পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভারী বৃষ্টিপাত আর আর পাহাড়ি ঢল নামায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা কার্প জাতীয় মাছগুলো। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রায় তিনশ’ নৌকা নিয়ে মাছ ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপড়ের মানুষ। এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা।
হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাহমান হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, অইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীরপাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার ডিম সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকেই ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.
বৃহস্পতিবার রাত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল পষর্ন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দুইপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে হালদা নদীর আমতুয়া অংশে প্রথমে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। পরবর্তীতে নদীর বিভিন্ন অংশে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।
জানা যায়, হালদার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দুইপাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম আহরণকারীরা এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।
হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিসসমকালকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত দুইটার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছি।’
ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে।’
হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দুইদফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।
জানা যায়, বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। অভিজ্ঞ এই লোকজন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় এসব ডিম থেকে রেনু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে সারাদেশের মাছ চাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি। তারপরও এসব রেণু সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তবে এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দন পর রেণু ফুটবে। নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে এখন। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে পোনা বিক্রি শুরু করা হবে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারি ও হ্যাচারি মালিকর।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ম স গ রহক র র র ড ম স গ রহক র র ড ম স গ রহ মৎস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।