শিবপুরে অপহরণের শিকার সাইফুল ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় অপহরণ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শিবপুর থানার পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে শিবপুর উপজেলার খড়িয়া এলাকা থেকে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অপহরণের শিকার সাইফুল ইসলাম রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ এলাকার বাইতুল মুকাদ্দাসের ছেলে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন– পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বাড়ারচর এলাকার ইফতিয়ার, চরনগরদি এলাকার সিজান এবং শিবপুর উপজেলার খড়িয়া গ্রামের নাঈম।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে টিউশনির বিজ্ঞাপন দিয়ে অপহরণ করে আসছিল একটি চক্র। প্রথমে চক্রটি বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে টিচার প্রয়োজন বিজ্ঞাপন দিত।
বিজ্ঞাপন দেখে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার বিকেলে এলএলবি প্রথম বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলামকে টিউশনির কথা বলে শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের বন্যার বাজার যেতে বলে চক্রটি। পরে সেখানে গেলে ইফতিয়ার, সিজার ও নাঈম মিলে তাঁকে শিবপুরের গোবিন্দি ও খড়িয়ার মধ্যবর্তী নির্জন খালপারে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে এবং তাঁর কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে সাইফুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তাঁর বাবা-ভাইয়ের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সাইফুলের বাবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানান। সাইফুলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শিবপুর উপজেলার খড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে উদ্ধার করাসহ অপহরণকারী তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে একটি ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সাইফুলের মা শিবপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। থানার ওসি আফজাল হোসাইন বলেন, শুক্রবার রাতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে অপহরণের শিকার সাইফুলকে উদ্ধারে নামেন তারা। পরে রাতেই তাঁকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।