ফসলের খেতে পড়ে ছিল বিদ্যুতের তার, ভুট্টা তুলতে গিয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু
Published: 4th, June 2025 GMT
পঞ্চগড়ে খেতের ভুট্টা তুলতে গিয়ে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট বেংহারীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট-বেংহারীপাড়া এলাকার সপিজুল ইসলামের ছেলে জামিদুল ইসলাম (২২), লিয়াকত আলীর ছেলে শাহীন আলম (৪০) এবং শফিউল ইসলামের ছেলে গোলাম রাব্বানী (৩৫)।
এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ফকিরের হাট-বেংহারীপাড়া এলাকার সপিজুল ইসলামের ছেলে জয় ইসলাম (৩০)।
আহত ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফকিরের হাট-বেংহারীপাড়া এলাকায় রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষকের ভুট্টাখেতের ফসল তুলে দিতে চুক্তি নিয়েছিলেন ১৪ জন শ্রমিক। ওই ভুট্টাখেতের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন গেছে। সকালে তাঁরা ভুট্টাখেতে ভুট্টা তুলতে গিয়ে দেখেন একটি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। তবে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। পরে শ্রমিকেরা ভুট্টা তোলার কাজ শুরু করার কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসে। এতে চারজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে অন্য শ্রমিকদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলেই জামিদুল ইসলাম (২২) মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই গোলাম রাব্বানী ও শাহীন আলমও মারা যান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয় ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রথমে দেখি একটা তার পড়ে আছে। পরে সেখান থেকে কিছুটা দূরে কাজ শুরু করি। কিছুক্ষণ পরে শুনি ভুট্টাগাছের পাতাগুলো পটপট শব্দ করে ফুটতেছে। এ সময় তারের কাছে আমার ভাই জামিদুল ছিল। ওকে কারেন্ট (বিদ্যুৎ) টেনে নিয়ে যায়। রব্বানী আর শাহীনও পড়ে গেল। আমি সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করি। আমার একটা পা কাদাপানির মধ্যে ঢুকে ঝিনঝিন করছিল। পরে কোনোমতে সেখান থেকে দূরে পড়ে যাই।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল কাশেম বলেন, হাসপাতালে যে তিনজনকে আনা হয়েছিল, তাঁর মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইনটি কোন প্রতিষ্ঠানের, পল্লী বিদ্যুৎ নাকি নেসকোর, জানা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ বছর ধরে খাইট্টা বেচেন শরীয়তপুরের আজিজ
আবদুল আজিজ ঢালীর বয়স ৭০ বছর। ৫০ বছর ধরে করছেন কাঠ-গাছের ব্যবসা। সেই সঙ্গে কোরবানি ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে মাংস প্রস্তুত করার কাঠের খাইট্টা বিক্রি করেন। তাঁর এ ব্যবসায় সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
আজিজের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায়। কোরবানি ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিভিন্ন হাটে তেঁতুলগাছের তৈরি খাইট্টা বিক্রি করেন। তাঁর খাইট্টা এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, আজিজ পাঁচ সন্তানের বাবা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে সংসার তাঁর। তরুণ বয়সে এলাকায় জ্বালানি কাঠ ও ফার্নিচার তৈরির কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। গ্রাম থেকে গাছ কিনে শ্রমিক দিয়ে ফার্নিচারের কাঠ ও জ্বালানি কাঠ প্রস্তুত করে বিক্রি করতেন। সেই সঙ্গে শুরু করেন ঈদের মৌসুমে মাংস প্রস্তুত করার কাজে ব্যবহৃত খাইট্টা। ওই আয়েই সংসার চলেছে। সন্তানদের পড়ালেখা, বিয়ে দেওয়া—সবই করেছেন ওই আয় দিয়ে। আজিজের তিন ছেলে এখন কর্মজীবী। বয়সের কারণে আজিজ এখন আর কাঠের ব্যবসাটি করেন না। তবে ঈদে মাংস প্রস্তুতকাজে ব্যবহৃত খাইট্টা তৈরি ও বিক্রির কাজটি ছাড়েননি।
ঈদের অন্তত তিন মাস আগে গ্রাম থেকে বিভিন্ন আকৃতির তেঁতুলগাছ কেনেন। তা দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির খাইট্টা তৈরি করে মজুত করেন। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে শরীয়তপুর সদরের মনোহার বাজার হাট, আংগারিয়া হাট, বুড়িরহাট, গোসাইরহাটসহ বিভিন্ন হাটে ওই খাইট্টা নিয়ে যান বিক্রির জন্য। আজিজের তৈরি প্রতিটি খাইট্টা বিক্রি করা হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে। এ বছর তিনি ৭০০টি খাইট্টা তৈরি করেছেন।
খাইট্টা নিয়ে সদরের মনোহর বাজার গরুর হাটের পাশে বসেছিলেন আবদুল আজিজ। অনেক ক্রেতা তা কিনে নিচ্ছিলেন। তেমনই একজন শরীয়তপুর পৌরসভার পালং এলাকার রুহুল আমীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে মনোহর বাজার গরুর হাট থেকে কোরবানির গরু কিনতেন। সেই সঙ্গে আজিজ চাচার তৈরি তেঁতুল কাঠের খাইট্টা কিনে নিয়ে যান।
আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসাটা ছাড়তে মন চায় না। তাই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই বয়সেও খাইট্টা নিয়ে হাটে যান তিনি। প্রতি মৌসুমে তাঁর অন্তত দুই লাখ টাকা লাভ হয়। এই টাকা খরচ করে তিনি আনন্দ পান।