চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর নাম প্রবীর চৌধুরী (৪৭)। তিনি উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং পেশায় পল্লিচিকিৎসক। গতকাল সোমবার রাতে চাম্বল ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ফেসবুকে ওই পোস্ট দেন প্রবীর চৌধুরী। এরপর বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে পড়লে তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। রাতে চাম্বল ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামসেদুল আলম, বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা জহিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। পরে রাতে প্রবীর চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে প্রবীর চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন’।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব র চ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোকে ভূমি ছাড়ার পরামর্শ দিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোর তাদের কিছু ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাকাবি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত ভূমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি জমি রয়েছে।’

‘তাহলে যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে এমন কারও (মুসলিম দেশ) থাকা দরকার, যে বলবে, ‘‘আমরা সেটা (ফিলিস্তিন রাষ্ট্র) আমাদের এখানে রাখতে চাই’”, বলেন মাইক হাকাবি।

কট্টর ইহুদিবাদী কূটনীতিক হাকাবি আগে থেকেই ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার প্রবল সমর্থক। তিনি দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের স্থায়ী কর্তৃত্ব চান এবং পশ্চিম তীরকে বর্ণনা করতে বাইবেলের ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ শব্দযুগল ব্যবহার করেন।

এই মার্কিন কূটনীতিকের কিছু বক্তব্য ইসরায়েলের অতিরাষ্ট্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মতোই, যারা দাবি করে, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে আরব বা মুসলিম দেশগুলোতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।

তবে এ রকম নীতি কার্যকর হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে মনে করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বারবার উসকানি দেওয়ায় ইসরায়েলের কট্টরপন্থী দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় হাকাবি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও কড়া সমালোচনা করেন।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বারবার উসকানি দেওয়ায় ইসরায়েলের কট্টরপন্থী দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় হাকাবি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও কড়া সমালোচনা করেন।

সাক্ষাৎকারে হাকাবি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপকভাবে সমর্থন পাওয়া দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাবকে ‘একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য’ হিসেবে আখ্যা দেন।

এই সমাধান অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম এবং এটি ইসরায়েলের পাশাপাশি অবস্থান করবে।

ব্লুমবার্গে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে হাকাবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে না।

পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, রাষ্ট্রদূত তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন, আর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মার্কিন নীতির দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের।

এ মাসের শেষ দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের কূটনীতিকেরা এক সম্মেলন আয়োজন করবেন। ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা নির্ণয় করা হবে এর লক্ষ্য।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেন ঠিক ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত জমিতেই গঠিত হতে হবে? আমি মনে করি, যাঁরা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের সবার কাছে এ প্রশ্ন তোলা উচিত।মাইক হাকাবি, ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যদিও হাকাবি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোথায় গঠিত হতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের চেষ্টাকে সমর্থন করবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেননি। তবে সম্মেলনটিকে ‘সময়োপযোগী ও যথাযথ নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘একটি যুদ্ধ চলার মধ্যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ভুল দৃষ্টিভঙ্গি।’ এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা আরও দুর্বল হবে বলে যুক্তি দেন তিনি।

বিবিসির নিউজআওয়ার অনুষ্ঠানে হাকাবি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেন ঠিক ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত জমিতেই গঠিত হতে হবে? আমি মনে করি, যাঁরা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের সবার কাছে এ প্রশ্ন তোলা উচিত।’

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা উচিত নয়—যুক্তরাষ্ট্র এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে কি না, জানতে চাইলে হাকাবি বলেন, ‘আমি বলছি না, কখনোই হবে না। আমি বলছি, এ নিয়ে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন ঘটতে হবে।’

আরও পড়ুনইসরায়েল কেন গাজায় অস্ত্রধারী গুন্ডা পোষে ৫ ঘণ্টা আগে

‘এ মুহূর্তে সেখানে এমন সংস্কৃতি রয়েছে, যেখানে ইহুদিদের হত্যা করা ন্যায়সংগত ভাবা হয় এবং তাতে পুরস্কৃতও করা হয়। এ সংস্কৃতি বদলাতে হবে’, বলেন হাকাবি।

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের সঙ্গে তার সংকটে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রত্যাখ্যান করে। তাদের মতে, চূড়ান্ত সমাধান অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কোনো পূর্বশর্ত হতে পারে না।

নিষেধাজ্ঞা ‘মর্মপীড়াদায়ক’

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের যৌথ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, এই দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা চরমপন্থী সহিংসতাকে উসকে দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন। তাই যুক্তরাজ্যে তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে তাঁদের সম্পদ থাকলে জব্দ করা হবে।

ইসরায়েল এ পদক্ষেপকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং হাকাবি একে ‘মর্মপীড়াদায়ক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হাকাবি বলেন, ‘এই দুই নির্বাচিত মন্ত্রীর ওপর দেশগুলো কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, আমি এখনো এমন কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ শুনিনি। দেশগুলোর উচিত ছিল, ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো এবং এটি বোঝা যে তাঁরা কোনো অপরাধ করেননি।’

আরও পড়ুনত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ দখলে নিয়েছে ইসরায়েল, আছেন গ্রেটাসহ ১২ মানবাধিকারকর্মী ০৯ জুন ২০২৫আরও পড়ুনআমেরিকানরা কেন ইসরায়েলিদের চেয়ে বেশি ইসরায়েলি০৯ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ