ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল সেনেগাল
Published: 11th, June 2025 GMT
অপ্রত্যাশিত নাটকীয়তা আর দুর্দান্ত ফুটবলের এক রাত। ঠিক এমনই এক স্মরণীয় সন্ধ্যায় ইংল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে সেনেগাল। মঙ্গলবার (১০ জুন) সিটি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে এই জয়ের মধ্য দিয়ে আফ্রিকার কোনো দেশ প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারালো। যা ২২ ম্যাচের মধ্যে একেবারেই অভূতপূর্ব ঘটনা।
ম্যাচের শুরুটা ছিল ইংল্যান্ডের জন্য স্বপ্নের মতো। ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই অধিনায়ক হ্যারি কেইনের গোলে এগিয়ে যায় থ্রি লায়নসরা। দর্শকদের মধ্যে তখন জয়ের স্বপ্ন বোনা শুরু হয়ে গেছে। তবে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল ছিল সেই স্বপ্নভঙ্গের জন্য প্রস্তুত।
ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনেগাল। ৪০তম মিনিটে নিকোলাস জ্যাকসনের নিখুঁত ক্রসে গোল করেন ইসমাইলা সার। নতুন কোচ থমাস টুখেলের অধীনে এটিই ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা প্রথম গোল। যা টিমের রক্ষণভাগে দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
আরো পড়ুন:
দারুণ জয়ে বিশ্বকাপে ব্রাজিল
কলম্বিয়ার সঙ্গে ১০ জনের আর্জেন্টিনার নাটকীয় ড্র
এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে আসার মরিয়া চেষ্টা চালায় ইংল্যান্ড। পিছিয়ে থাকার সময় জুদ বেলিংহ্যাম বল জালে পাঠালেও ভিএআর রিপ্লেতে আগের মুহূর্তে হ্যান্ডবলের প্রমাণ মেলায় তা বাতিল হয়ে যায়। ফলে হতাশা আরও বেড়ে যায় স্বাগতিক শিবিরে।
৬২তম মিনিটে সেনেগালকে এগিয়ে দেন হাবিব দিয়ারা। আর ম্যাচের যোগ করা সময়ে বদলি খেলোয়াড় চেইখ সাবালি গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন ৩-১-এ। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ইংলিশ দর্শকদের অসন্তোষ ধ্বনিতে ভরে ওঠে গোটা গ্যালারি।
এই জয়ের ফলে টানা ২৪ ম্যাচে অপরাজিত রইল সেনেগাল। যা তাদের ধারাবাহিকতা এবং দলীয় সংহতির এক উজ্জ্বল প্রমাণ। অন্যদিকে, টুখেলের অধীনে প্রথম হার নিয়েই ইংল্যান্ডে কোচিং অধ্যায় শুরু হলো, যা ভক্তদের মুখে হাসি নয়, বরং ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে।
এই ঐতিহাসিক জয় শুধু সেনেগালের ফুটবল ইতিহাসে একটি সোনালি অধ্যায় হিসেবেই যুক্ত হলো না, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফ্রিকান ফুটবলের ক্রমবর্ধমান শক্তির স্পষ্ট বার্তাও দিল বিশ্বকে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।