নাফি নিহান ইভার পাশে ঈশ্বরগঞ্জের সুহৃদ
Published: 16th, June 2025 GMT
সম্প্রতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বাসচাপায় প্রাণ হারান ৩৬ বছর বয়সী সবুজ মিয়া। একই সঙ্গে মারা যান ষাটোর্ধ্ব বাবা আব্দুস ছোবানও। প্রতিদিনই সন্তানদের জন্য কাজ শেষে কোনো না কোনো খাবার নিয়ে ফিরতেন সবুজ মিয়া। সেদিন রাতেও তাঁর তিন সন্তান অপেক্ষায় ছিল বাবার জন্য। গরম ভাত-তরকারি নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন তাদের মা আকলিমা আক্তারও। তাদের অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাবে না কোনোদিন। পরিবারটিতে কর্মক্ষম মানুষ ছিলেন এ দু’জনই।
এমন পরিস্থিতিতে সবুজের অসহায় তিন সন্তান নাফি, নিহান, ইভার পাশে দাঁড়ায় ঈশ্বরগঞ্জ সমকাল সুহৃদ সমাবেশ। সবুজের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সুহৃদের উদ্যোগে কিনে দেওয়া হয় শাহিওয়াল জাতের একটি বকনা গরু এবং ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী ও পোশাক।
৪ জুন দুপুরে গরুটি নিহত সবুজের পরিবারের হাতে তুলে দিতে তাঁর বাড়ি উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামে যান সুহৃদরা। এ সময় নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের প্রত্যেকের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন তারা। উপহার হিসেবে ছিল নিহত সবুজের স্ত্রী ও মায়ের জন্য শাড়ি এবং মেয়ে, ছোটবোন ও দুই ছেলের জন্য নতুন পোশাক। পাশাপাশি ২০ ধরনের খাদ্যসামগ্রীসহ নগদ ৪ হাজার টাকা সবুজের স্ত্রী ও মায়ের হাতে তুলে দেন ঈশ্বরগঞ্জ সুহৃদরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ সুহৃদের উপদেষ্টা ফেরদৌস কোরাইশী টিটু, আহ্বায়ক মুহাম্মদ আব্দুল হান্নান, সদস্য সচিব আমজাদ হোসেন সোহেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিলকিস জাহান সেতু, সুহৃদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বায়েজিদ, মনির উদ্দিন, পারভেজ মিয়া, জিল্লুর রহমান সোহাগ, মাসুম আহমেদ ও সাংবাদিক রেজাউল করিম রাজু। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সমকালের ঈশ্বরগঞ্জের সংবাদদাতা মহিউদ্দিন রানা।
এর আগে সুহৃদ সদস্যরা অসহায় পরিবারটির জন্য সহায়তার উদ্যোগ নিয়ে একটি ফান্ড গঠন করেন। সেখানে নিজেদের পাশাপাশি পরিচিতজনদের কাছ থেকেও সহায়তা চান। মানবিক দিক বিবেচনায় অনেকেই এই আহ্বানে সাড়া দেন। এতে ৩৬ হাজার টাকা, শাড়ি, থ্রি পিস, শিশুদের কাপড় পাওয়া যায়; যা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন সুহৃদ সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, বাসচাপায় নিহত আব্দুস ছোবানের একমাত্র ছেলে সবুজ। তাঁর ছোট পাঁচ বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সীমা আক্তার থাকে মা নাছিমা আক্তারকে নিয়ে। স্বামী ও একমাত্র ছেলে হারিয়ে নাছিমা পাগলপ্রায়। সবুজের মেয়ে সানজিদা ইভার বয়স ১২ বছর। একটি মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ৯ বছরের ছেলে নাফিউল মাদ্রাসার ছাত্র। ছোট ছেলে ইফতিয়ার হাসান নিহানের বয়স চার। সে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। তবে বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় অপলক তাকিয়ে থাকে পথের দিকে। যদিও এই অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে না কোনোদিনও।
উপহার প্রদান শেষে বাবা-ছেলের কবর জিয়ারত করে প্রয়োজনে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেন সুহৃদ সদস্যরা। v
সমন্বয়ক
সুহৃদ সমাবেশ ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ সব জ র র জন য পর ব র উপহ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
চোখে আলো ফেলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে কৃষককে হত্যা
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় চোখে টর্চলাইটের আলো পড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ছুরিকাঘাতে এরশাদ আলী (৩৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত এরশাদ আলী উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে মানিক মিয়ার মুদিদোকানে যান এরশাদ আলী। এ সময় এরশাদ আলীর চোখে টর্চলাইটের আলো ফেলে বিরক্ত করেন একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সাকিব মিয়া। এ নিয়ে দুজন বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালে স্থানীয় লোকজন মিটমাট করে দেন। পরে এরশাদ আলীসহ সবাই যে যার মতো বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে এরশাদ আলীকে ডেকে নিয়ে আবার কথা-কাটাকাটি ও মারামারিতে জড়ান সাকিব ও তাঁর সঙ্গে আসা কয়েকজন। একপর্যায়ে এরশাদ আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয় লোকজন আহত এরশাদ আলীকে উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে অভিযুক্ত সাকিব মিয়াসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন সরকার বলেন, পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। নিহত এরশাদ আলীর শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।