জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বেলতলী বাসস্ট্যান্ড। দুপুরে পাওয়া গেল না কোনো যাত্রী। দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাত্র একটি বাস এখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। আর রাতে ছাড়ে ১০টি। হাতে গোনা এসব বাসের টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রীদের। রেলস্টেশনে গিয়ে ঢাকাগামী দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন পাওয়া যায়। বগির ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেককে ছাদে উঠে বসে থাকতে দেখা যায়। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মও যাত্রীতে ভরা। গত রবি ও সোমবার বাসস্ট্যান্ড এবং রেলস্টেশন ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে সীমিত বাস সার্ভিস ও ট্রেনে আসন স্বল্পতার কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকার মানুষ। ঈদের ছুটি শেষে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকা ফিরতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তাতেও স্বস্তি নেই তাদের। ঈদের পর দশম দিনেও ভোগান্তি কমেনি তাদের।
বিকল্প পথে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ইজিবাইক বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে অনেক যাত্রী জামালপুর গিয়ে সেখান থেকে বাসে করে ঢাকায় ফিরছেন। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি ব্যয় করতে হচ্ছে বেশি অর্থ। দেওয়ানগঞ্জ থেকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া হাতে গোনা কয়েকটি বাস চলে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
দিনে বাস না থাকায় ট্রেনের টিকিটের জন্য চেষ্টা করেন বাহাদুরাবাদের যাত্রী নজরুল ইসলাম। কিন্তু পাননি। ট্রেনেও ভিড় থাকায় শেষে বাড়তি খরচ করে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সানন্দবাড়ীর হাফিজুর রহমান বলেন, ট্রেনে টিকিট করেও আসন পাননি। বাধ্য হয়ে ছাদে ওঠেন। তাঁর মতো শত শত যাত্রী কষ্ট মেনে নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। 
জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ থেকে দিনে চারটি এবং রাতে ১০টি বাস ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ছেড়ে যায়। যাত্রীসেবাও উন্নত নয়। অধিকাংশ বাস রাতে চলায় ট্রেনে আগ্রহ বেশি যাত্রীর। আর এলাকার শেষ স্টেশন হওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন দিয়ে বকশীগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর, গাইবান্ধার ফুলছড়ির যাত্রীরা ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করেন। এ স্টেশন থেকে আন্তঃনগর তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এবং দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর কমিউটার নামে দুইটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা ট্রেন যাতায়াত করে। এগুলোয় আসন কম হলেও যাত্রীর চাপ থাকে কয়েক গুণ।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের দশম দিনেও যাত্রীর ভিড় কমেনি। আন্তঃনগর ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। আর যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি ঈদে এমন অবস্থা হলেও প্রতিকার মিলছে না। অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।  ফেরদৌস হাসানের ভাষ্য, কমিউটার ট্রেনের টিকিট পেয়ে উঠে দেখেন উপচে পড়া ভিড়। 
সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডেও যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। তারা জানান, দেওয়ানগঞ্জ থেকে ইজিবাইক ও অটোরিকশায় জামালপুর যাবেন। সেখান থেকে বাসে যাবেন ঢাকায়। এতে বেশি অর্থ খরচ হলেও কর্মস্থলে ঠিক সময়ে পৌঁছানো যাবে। সবুজপুরের যাত্রী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকার বাসগুলো রাতে চলাচল করায় যাতায়াত সুবিধাজনক নয়। ট্রেনে টিকিট পাওয়া যায় না। অটোরিকশা ও ইজিবাইকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন চালক। 
ঈদ উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ ট্রেন দিয়েছিল জানিয়ে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, শনিবার থেকে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদের ১০ দিনেও যাত্রীর চাপ কমেনি। ট্রেনের ছাদে উঠতে যাত্রীদের নিষেধ করা হচ্ছে, সচেতন করা হচ্ছে। তবুও ছাদে উঠছে। চাপ কমাতে গেলে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু এবং আসন বৃদ্ধি করতে হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ