চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলার আসামি হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে মামলার বাদী থানায় এসে জানিয়ে দেন, তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন না। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে। পুলিশ সূত্রে জানা য়ায়  গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানা কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুঠোফোন হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে থানায় এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর নামে চাঁদাবাজির একটি মামলা এজাহারে ছিল।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা থানায় জড়ো হন। আজ সকাল থেকে সংগঠনের সহযোগী সংগঠন যুব আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও থানার সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মামলার বাদী মো.

শিপন থানায় এসে বলেন, তিনি হাবিবুর রহমানকে চেনেন না। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে হাবিবুরকে তাঁর জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।

চান্দগাঁও থানার ওই মামলায় বাদী গত বুধবার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করেন। তাতে হাবিবুর রহমানের নাম ছিল ৫ নম্বরে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পাঁচলাইশ অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘যে ভিডিওর ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে, সেখানে হাবিবুর রহমানের চেহারা দেখা যায়নি। বাদীও থানায় এসে বলেছে, সে হাবিবকে চেনে না। এ কারণে তাঁকে বাদীর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

আজ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানার মূল ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা হাবিবুর রহমানকে আদালতে পাঠানোর বিরোধিতা করেন। তাঁদের দাবি, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় কেউ থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পরে আসতে বলা হয়। তখন কয়েকজন নেতা থানার ভেতরে ওসির কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

বাইরে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের কয়েকজন বলেন, গত এপ্রিলে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সমাবেশ করেন। এরপর চাঁদাবাজির ঘটনা বন্ধ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত একটি পক্ষ’ হাবিবুর রহমানকে জড়িয়ে মামলা করে। তাঁদের দাবি, মামলার বাদী পক্ষই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

বেলা ১টার দিকে মামলার বাদী ও দুই সাক্ষী থানায় আসেন। সাংবাদিকেরা কথা বলার চেষ্টা করলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করেননি।

চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মনিরুল করিম বলেন, ‘মামলায় হাবিবুর রহমানের নাম ছিল। তবে বাদী থানায় এসে জানিয়েছেন, তিনি তাঁকে চেনেন না। তাই বাদীর জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর রহমান ছাড়া বাকি পাঁচজনকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. নয়ন (৩৫), মো. লোকমান (২৮), মো. ফয়সাল হোসেন (৩২), মো. শাহীন (২১) ও সনজিত নাথ (৪৯)। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বিকেল ৫টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে হাবিবুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ ঘটনায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক ও আইনজীবী আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি কেউ নিরপরাধ হয়, তা প্রমাণ হওয়ার জায়গা আদালত। থানা ঘেরাও করে কাউকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি ভুল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে অন্য মামলার আসামিরাও সুযোগ নিতে পারে।’

আখতার কবীর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারের পর কাউকে থানা থেকে ছাড়া হলে এর পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে হয়, যেমন গুরুতর অসুস্থতা বা আদালতের নির্দেশ। একজনকে ছেড়ে দিলে বাকি পাঁচজনকে কেন আদালতে পাঠানো হলো, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। একই সঙ্গে ভুল এজাহার দেওয়ার জন্য বাদীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ব ব র রহম ন গ র প ত র কর থ ন য় এস অবস থ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জয়পুরহাটে ৩ থানা ওসি শূন্য

জয়পুরহাটে ঘন ঘন বদলি ও প্রত্যাহারের কারণে প্রায় এক মাস ধরে জেলার তিন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেই। সদর, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) পদে থাকা কর্মকর্তারা ওসির দায়িত্ব পালন করছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর একযোগে এ জেলার পাঁচ থানার ওসির বদলি করা হয়। এর দুই দিন পর ১ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের স্বাক্ষরিত এক আদেশে সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হয়। ওই চিঠিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি শাহেদ আল মামুনকে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাওসার আলীকে পাঁচবিবি থানার ওসি, জেলা ওআর হেডকোয়াটার্সের পরিদর্শক মশিউর রহমানকে ক্ষেতলাল থানার ওসি, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে কালাই থানার ওসি এবং সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল ইসলামকে আক্কেলপুর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

যোগদানের ৩ মাস ১২ দিনের মাথায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আক্কেলপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার ওসি মশিউর রহমানের বদলি হয়। এরপর পুলিশ পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। এক মাসের মধ্যে আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করলে মাহবুবুর রহমান সরকার ওসির দায়িত্ব পান।

আরো পড়ুন:

মেহেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু

শরীয়তপুরে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল মামুন ও পাঁচবিবি থানার ওসি কাওসার আলীকে বদলি করা হয়। আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুল ইসলামকে আবার পাঁচবিবি থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। অক্টোবরে যোগদানের পর একটানা শুধু কালাই থানায় জাহিদ হোসেন ওসির দায়িত্বে রয়েছেন।

ওসি শাহেদ আল মামুন বদলির পর সদর থানার দায়িত্ব পান নূর আলম সিদ্দিক। তাকেও বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৫ মে ক্ষেতলাল থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করা খন্দকার ফরিদ হোসেনকে এক মাস না যেতে তাকে সদর থানায় বদলি করা হয়। কিন্তু ২২ দিন পর তাকেও প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। তিন দিনের ছুটি শেষে এ বছরের গত ৪ জুলাই তাকে থানায় যোগদানের কথা ছিল। তবে তিনি সেদিন যোগদান করেননি। এদিকে ৫ জুলাই জয়পুরহাট জেলায় আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন দুপুরের দিকে খন্দকার ফরিদ হোসেন কর্মস্থলে হাজির হন। এরপর ওই দিনই প্রশাসনিক কারণের কথা উল্লেখ করে এসপি তাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করে অফিস আদেশ জারি করেন।

একইভাবে, আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুলের পর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমানও প্রত্যাহার হন। এরপর দায়িত্ব পান পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা। কিন্তু বিভাগীয় মামলায় পদাবনতি দিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) করে থানার দায়িত্ব থেকে গত ২৩ জুন তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।

গত ১৩ জুন হাসমত আলী ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে জয়পুরহাট থানার এসআই থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মিছিল লাঠিচার্জ করেন। এ সময় গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। পুরাতন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর ২৬ জুন সকালে ওসি হাসমত আলী থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে গোপনে থানা ছেড়ে চলে যান। পরে অবশ্য তাকে থানায় প্রত্যাহার দেখানো হয়।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর থানা, আক্কেলপুর থানা ও ক্ষেতলাল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদায়ন করা হয়নি। জয়পুরহাট সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) নাজমুল কাদের, আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেন এখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঘন ঘন ওসি বদলি ও প্রত্যাহারের ঘটনায় বাইরে থেকে এ জেলায় অভিজ্ঞ কোনো কর্মকর্তা ওসি হয়ে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ কারণে একমাস হলেও তিন থানায় ওসি পদায়ন করা যায়নি।

জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, জেলায় এখন এমন অভিজ্ঞ কেউ নেই। আর ওসি পদের জন্য শর্ত থাকে। শর্ত পূরণ হলে থানায় ওসি করা হয়। আর ঢাকা (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) থেকে কাউকে (অভিজ্ঞ পরিদর্শক) জেলায় এখনো দেয়া হয়নি। তবে শিগগিরই অভিজ্ঞ ওসি থানায় পদায়ন করা হবে। 

ঢাকা/বাকী/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন
  • এশিয়া কাপের প্রিলিমিনারি স্কোয়াডে সোহান-সৌম‌্য-সাইফ
  • হামলার পর সাঁওতালপাড়া ফাঁকা
  • নড়াইলে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও হেনস্তার অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
  • দমার চরের বিরল পানিকাটা
  • তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছে ওপেক প্লাস
  • রাবির সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগ
  • ‘আ. লীগ ক্ষমতায় এলে দেইখ্যা নেব’, ওসিকে ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি
  • সিরাজের ভুলের খেসারত কি দিতে হবে ভারতকে
  • জয়পুরহাটে ৩ থানা ওসি শূন্য