ইরান–ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা টানা আট দিন ধরে চলছে। সংঘাতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্রও। এতে সংকট আরও গভীর হওয়ার শঙ্কা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এরই অংশ হিসেবে জেনেভায় ইরানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আলোচনা চালিয়ে যেতে একমত হয়েছেন তাঁরা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

শান্তি ফেরাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে গতকাল শুক্রবারও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। এদিন ও আগের রাতে ইসরায়েল তেহরানের একটি হাসপাতালসহ শহরটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। জবাবে ইসরায়েলের বিরসেবা ও হাইফা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল-ব্যারট, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডফুল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। বৈঠকে ইউরোপীয় দেশগুলোর মন্ত্রীদের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানকে পরমাণু আলোচনায় ফেরানো।

জেনেভায় একটি হোটেলে বৈঠক শেষে ডেভিড ল্যামি সাংবাদিকদের বলেন, গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। ইউরোপের নেতারা একটি বিষয়ে একমত যে ইরানকে কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না। তবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ইরানসহ তাঁরা সবাই।

আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন জ্যঁ নোয়েল–ব্যারটও। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পরমাণু প্রকল্প—আরও বড় পরিসরে বলতে গেলে সব বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি সাংবাদিকের বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হলে ইরান আবারও কূটনীতির কথা বিবেচনা করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইইউর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। শিগগিরই আবার এ আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত আমরা।’ তবে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরমাণু স্থাপনায় হামলার নিন্দা না জানানোয় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন আরাগচি।

জেনেভা শহরে ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে—এমন শঙ্কা থেকে ওই চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে পশ্চিমা দেশগুলো। ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে আবার ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে তৎপর হন তিনি। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়। তবে ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েল হামলার শুরুর পর আলোচনা স্থগিত করে তেহরান।

মূলত ওই আলোচনায় ইরানকে ফেরাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন ট্রাম্পও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে চলমান সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। তার ওপর ভিত্তি করে ইরানে মার্কিন হামলার বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন তিনি।

সংঘাত বন্ধের আহ্বান গুতেরেসের

ইরান–ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশন হয়। অধিবেশনে সংঘাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সব পক্ষকে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘এ সংঘাত বৃদ্ধির ফলে এমন আগুন লাগতে পারে, যা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আমরা তা হতে দিতে পারি না।’

নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি ও ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এ সময় ইরানে হামলা চালিয়ে বেসামরিক মানুষকে হত্যার জন্য ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানান ইরাভানি। আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তবে ড্যানি ড্যানন সাফ জানিয়ে দেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলার জন্য ক্ষমা চাইবে না তাঁর দেশ। অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এককাট্টা সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। আর রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া অভিযোগ করে বলেন, চলমান সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছে ইসরায়েল।

এদিকে গতকাল জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে সেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সেখানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, পরমাণু প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ আগ্রাসন জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।

ইরানের আরেক হাসপাতালে হামলা

গত আট দিনে ইরানের সামরিক ও সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি বেসামরিক স্থাপনায়ও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকালও তেহরানের একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে দেশটির তিনটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইরানের ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি চিকিৎসাকেন্দ্র ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তেহরানের গিশা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলা হয় বলে জানিয়েছে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, গতকাল ইরানের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময় সেখানে থাকা এক সামরিক কমান্ডারও নিহত হন। হামলায় ইরানের আরও একজন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম কান।

তেহরানের বাসিন্দা সৈয়েদ ওয়াহিদ আল-জাজিরাকে বলেন, তাঁর ভবনের কাছের একটি ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে নিহত সবাই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে এক নারীর হাত বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তিনি মারা যান। গত সোমবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, সেদিন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ২২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ৬০টির বেশি যুদ্ধবিমান ইরানে হামলা চালায় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ হামলার মধ্যে গতকাল ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, তেহরানে ইরান সরকারের প্রতিটি স্থাপনায় হামলা বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের একাধিক শহরে ইরানের হামলা

গতকাল ইসরায়েলের বিরসেবা, জেরুজালেম, তেল আবিব ও হাইফা শহরে একাধিক হামলা চালায় ইরান। হামলায় বিরসেবার একটি আইটি পার্ক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ভবনে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের কার্যালয় রয়েছে। হামলাস্থলের কাছেই রয়েছে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি শাখা কার্যালয়। এতে কয়েকজন আহত হন।

বিরসেবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ইরানের হামলার পর শহরটির রেলস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। হামলার স্থানের আশপাশ থেকে সরে যেতে বলা হয় বাসিন্দাদের। পরে হাইফা শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)।

সোমবার ইসরায়েলের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইরানের হামলায় দেশটিতে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলে আট হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের গণমাধ্যম। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলিরা দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৩০ হাজার ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন।

হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে বৃহস্পতিবার লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নাইম কাসেম বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসন’ মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা। এরপর গতকাল গোষ্ঠীটিকে সতর্ক করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের’ শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না। এদিন দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হিজবুল্লাহ। চলমান সংঘাতে এখনো যুক্ত হয়নি তারা। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে গোষ্ঠীটি। যদিও সংঘাত শুরুর পরপরই তেহরানপন্থী প্রথম গোষ্ঠী হিসেবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করে ইয়েমেনের হুতি। ইয়েমেন থেকে কয়েক দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হওয়ার কথা জানায় ইসরায়েলও।

তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে লেবানন জড়াবে না বলে গতকাল জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বারি। তিনি লেবাননের একজন শীর্ষস্থানীয় শিয়া রাজনীতিক ও হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমটিভি নিউজকে নাবিহ বারি বলেন, ‘আমি ২০০ শতাংশ নিশ্চিত, এ সংঘাতে লেবানন যুক্ত হবে না। কারণ, এ নিয়ে দেশটির কোনো আগ্রহ নেই।’

ইরান-ইরাকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে গতকাল তেহরান, শিরাজ, তাবরিজ, মাশহাদ, কোম, গিলান, ইয়াজদ, ইস্পাহানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে বড় বিক্ষোভ হয়। ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানাতে মহাসড়কে নামেন লাখ লাখ মানুষ। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র জুমার নামাজের পর বড় জমায়েত হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল ইরান, ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর পতাকা।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, তেহরানে পবিত্র জুমার নামাজের পর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিশাল মিছিল করা হয়। এ মিছিলে অংশ নেন ইরানের প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেই মোশেইনি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফরিসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও ইরানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার।

ইরানের সমর্থনে গতকাল ইরাকেও বড় সমাবেশ হয়েছে। জুমার নামাজের পর রাজধানী বাগদাদের সদর এলাকায় জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। এ ছাড়া গতকাল লেবানন, ইয়েমেন, তুরস্ক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ইরানের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং দেশটিতে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র ব ইসর য় ল র প য় ইসর য় ল ত হয় ছ ন ক টন ত ক ইউর প য় প রকল প চলম ন স মন ত র দ শট র ল ব নন র জন য ব রস ব পরম ণ র একট এ সময় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

তেহরানে রুদ্ধশ্বাস ৪ দিনের অভিজ্ঞতা শোনালেন বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী

বিকট শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। কিসের শব্দ বুঝতে পারলাম না। মুঠোফোনে দেখি, রাত সাড়ে তিনটা। একটু আগে ফজরের আজান হয়েছে, তেহরানে এ সময় ফজরের আজান হয়ে যায়। হোস্টেলের অন্য কক্ষগুলোয় অনেকে উঠেও গেছে। এর মধ্যেই আবার কানফাটানো আওয়াজ। এ কি মেঘের গর্জন? বারান্দায় গিয়ে দেখি, আকাশ পরিষ্কার, একবিন্দু মেঘও নেই। তাহলে কিসের শব্দ?

ততক্ষণে হইচই, চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। চারতলার বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি, অনেকেই মাঠে বেরিয়ে এসেছেন। তখনই তৃতীয়বারের মতো আবার শব্দ। এবার পরিষ্কার; এটা বিস্ফোরণের শব্দ। দূরে তাকিয়ে দেখি, আগুন জ্বলছে। যে এলাকায় আগুন জ্বলছে, সেটা আবাসিক এলাকা। অনেকটা আমাদের গুলশানের মতো ভিআইপি এলাকা। সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ নানা পেশার শীর্ষ পদের মানুষদের বসবাস। দিনের আলো পরিষ্কার হওয়ার পর সেখান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেল।

এর মধ্যে চারতলা থেকে নিচে নেমে এসেছি। হোস্টেলের লোকজন বললেন, ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও পরে ইসরায়েলি হামলার কথা জানানো হলো। সেই ভোরে কেউ আর ঘুমাতে পারলাম না।

ইরানে ইসরায়েলি হামলার খবর আমাদের রাজশাহীর বাড়িতেও পৌঁছে গেছে। তটস্থ হয়ে কল দিলেন মা, তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ। সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তেহরানের তিন নম্বর অঞ্চলে। এখানে রাষ্ট্রীয় টিভি স্টেশন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। হোস্টেলের পাশেই কোরীয় দূতাবাস। তাই এখানে হামলার আশঙ্কা নেই।

১৩ জুন দিনটা এভাবেই শুরু হলো।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে তেহরানের একটি তেল শোধনাগার, ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ