চলতি মাসের মাঝামাঝিতে খবরটি জানিয়েছিল ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তখন থেকে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন ২২ বছর বয়সী ফ্লোরিয়ান ভির্টৎস লিভারপুলে যোগ দিচ্ছেন। জার্মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে সই করানোর খবরটি গতকাল জানিয়েছে লিভারপুল। গতকাল ক্লাবটির অনুশীলন গ্রাউন্ডে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।

লেভারকুসেনকে থেকে ভির্টৎসকে আনতে নিজেদের ক্লাব রেকর্ড ভেঙেছে লিভারপুল। আগেই জানা গিয়েছে, মোট ১১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড খরচ করে তাঁকে কিনছে তারা। এর মধ্যে শুরুতে ১০ কোটি পাউন্ড দেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। বাকি ১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড দেওয়া হবে ‘অ্যাড-অনস’ হিসেবে। অর্থাৎ কিছু শর্ত পূরণের ভিত্তিতে।

আরও পড়ুনএবার চেলসিকে ধরাশায়ী করে ইতিহাস গড়ল আরেক ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ৩২ মিনিট আগে

লিভারপুলের ইতিহাসে এত দিন সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ছিলেন ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। ২০১৮ সালে সাউদাম্পটন থেকে তাঁকে ৭ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে কিনেছিল অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি। এই রেকর্ডটি তারা ভাঙল ভির্টৎসকে এনে। তাঁকে কিনতে শুরুতে ১০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার মধ্য দিয়েই নিজেদের ক্লাব রেকর্ড ভেঙেছে লিভারপুল। পরে ‘অ্যাড-অনস’–এর শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে ব্রিটিশ দলবদলের নতুন রেকর্ড গড়বেন ভির্টৎস। রেকর্ডটি আপাতত আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের দখলে। ২০২৩ সালে বেনফিকা থেকে তাঁকে ১০ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে কেনে চেলসি।

লেভারকুসেনের হয়ে ১৯৭ ম্যাচে ৫৭ গোল করার পাশাপাশি ৬৫ গোল বানানো ভির্টৎস এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে লিভারপুলের দ্বিতীয় বড় সাইনিং। লেভারকুসেন থেকেই গত মাসে ভির্টৎসের বন্ধু ও জাতীয় দল সতীর্থ ডাচ রাইটব্যাক জেরেমি ফ্রিমপংকে কিনেছে লিভারপুল। দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, ভির্টৎসের আগে আক্রমণভাগে সর্বশেষ ২০০৭ সালে ফার্নান্দো তোরেসকে কেনা নিয়ে এমন উত্তেজনায় ছিলেন সমর্থকেরা। পরে লুইস সুয়ারেজ, মোহাম্মদ সালাহরা এলেও তাঁরা লিভারপুলে এসে আলো ছড়িয়েছেন, কেউ ভির্টৎসের মতো আগেই এতটা আলোচনায় আসেননি।

আরও পড়ুনবয়স ৩০ হওয়ার আগেই শীর্ষ লিগে কোচ, তাঁর মতো আর কারা২ ঘণ্টা আগে

লিভারপুলের ওয়েবসাইটে ভির্টৎসের সইয়ের খবরটি নিশ্চিত করা হলেও কত দিনের চুক্তি, তা জানানো হয়নি। বিবিসি ও ইএসপিএন জানিয়েছে, প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি পাঁচ বছরের। তাঁর জার্সি নম্বর পরে জানানো হবে।
সইয়ের পর ভির্টৎস বলেছেন, ‘প্রতিবছর আমি সবকিছু জিততে চাই। সবার আগে আমাদের নিজেদের কাজটা করতে হবে। গত মৌসুমে তারা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, তাই এটা আবারও জেতা আমার লক্ষ্য এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে যতটা সম্ভব এগিয়ে যেতে চাই। আমি সত্যিই উচ্চাভিলাষী।’

২০২০ সালের মে মাসে লেভারকুসেনের হয়ে ১৭ বছর বয়সে শীর্ষ লিগে অভিষেক ভির্টৎসের। এর ১৯ দিন পর বুন্দেসলিগার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড গড়েন, যেটা অবশ্য পরে ভেঙেছে। বুন্দেসলিগায় অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৪টি গোল বানিয়েছেন। তাঁর অভিষেকের সময় থেকে হিসাব করলে জার্মানির শীর্ষ লিগে গোল বানানোর ভির্টৎস তৃতীয়। পার্থক্য হলো, শীর্ষ পাঁচে অন্যদের বয়স ২৯ কিংবা তার বেশি। বিবিসি জানিয়েছে, গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় সবচেয়ে কার্যকর ড্রিবলারও ছিলেন ভির্টৎস। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বুন্দেসলিগার মৌসুমসেরাও হন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ভ রক স ন ল খ প উন ড র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্তাক্ত মহাসড়ক’, সাত ঘণ্টায় ৬০ জনকে হত্যা

মহাসড়কের ১ কিলোমিটার অংশ। সেখানে মাত্র সাত ঘণ্টায় হত্যা করা হয় অন্তত ৬০ জন মানুষকে। তাঁদের মধ্যে ৫৬ জন শহীদ হন প্রাণঘাতী গুলিতে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দিন যাত্রাবাড়ী থানাকেন্দ্রিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ও প্রমাণ উঠে এসেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে। উল্লেখ্য, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অন্তত মোট ১১৭ জন শহীদ হয়েছেন বলে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্র গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। দর্শকেরা প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে এটি দেখতে পারছেন।

আরও পড়ুনআমার ধারণা, শেখ হাসিনার শেষ দিন ভারতেই কাটবে : আসিফ নজরুল১৮ ঘণ্টা আগেযাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান।ডেভিড বার্গম্যান, সাংবাদিক

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে প্রামাণ্যচিত্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পলায়নরত, নিরস্ত্র, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন—এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাঁকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, পুলিশকে যিনি এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন, তিনি কত বড় অমানুষ?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ (ভিডিও) আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে (মান) বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার চার থেকে পাঁচ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি।’

জুলাই হত্যাযজ্ঞের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার শেষ হলেও তাঁকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, তাঁর শেষ দিন ভারতেই কাটবে।’

৩৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র

প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি প্রায় ৩৫ মিনিটের। তবে এটি তৈরি করতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে পাঁচ মাস ধরে। শত শত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড ধরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড যেখানে হয়েছে, সেখানে একই সময়ে ধারণ করা বিভিন্ন ফুটেজ ফ্রেম ধরে এবং গুলির শব্দ শুনে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এভাবে কয়েকটি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করানো হয়েছে। এমনকি কোন ভবন থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বের করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞের মতামত।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরিতে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির পাশাপাশি আন্দোলনে যুক্ত অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে শুধু ঘটনা বোঝার জন্য। এর বাইরে সেদিন শহীদ হওয়া ৬০ জনের প্রত্যেকের পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নিহত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলের ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, মৃত্যুসনদ বিশ্লেষণ করে তাঁর মৃত্যুর কারণ খোঁজা হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করেছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কনটেন্ট ক্রিয়েটর আব্দুল্লাহ আল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন একটি দল।

আরও পড়ুনযাত্রাবাড়ী হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিত্র২১ ঘণ্টা আগে‘একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান’

প্রদর্শনী শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। একটি গল্প কীভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি এমনই একটি অনুসন্ধান।

প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ দেখা গেছে, কপালে পতাকা বেঁধে ঘুরছেন—এমন একজনের কপালে গুলি করা হয়েছে। সেই কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কোনো কথা বের হয় না। এর চেয়ে ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে!

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জীব দ্রং, সাইটসেভার্সের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর খোন্দকার সোহেল রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক মনজুর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রথম আলোর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, তখন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল, এসব তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। প্রথম আলো সাহসিকতার সঙ্গে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মৃত্যুর হিসাব রেখেছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম আলো তা প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর চেষ্টা ছিল সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও প্রথম আলো নানা উদ্যোগ নিয়ে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে।

আরও পড়ুন৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এল বিবিসির অনুসন্ধানে০৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ