নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাওন হত্যা মামলায় আসামি মৃত আ.লীগ নেতা
Published: 21st, June 2025 GMT
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের পুরান ঢাকার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রসন্ন পোদ্দার লেন ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মো. শাওন ওরফে শাওন মুফতি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে তার মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর গত ২৮ মে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সেখানে আসামি হিসেবে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের ৫৭ নেতার নাম রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০–১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আকবর বাবলার নামও রয়েছে। যিনি শাওনের মৃত্যুর সাড়ে চার মাস আগে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ মারা যান।
এদিকে শাওন সেই রাতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারা যান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তবে মামলায় বলা হয়েছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। যদিও মৃত্যু সনদে গুলির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার সমকালকে বলেন, প্রজ্ঞাপনে শহীদ হিসেবে শাওন মুফতির নাম রয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় করা মামলাটির তদন্ত চলছে। কোনো অসংগতি থাকলে তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তাঁতীবাজারের প্রসন্ন পোদ্দার লেনের ভাড়া বাসায় থেকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন মাকসুদা বেগম। তার ২৩ বছর বয়সী ছেলে শাওন ইসলামপুরের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ঘটনার রাতে তিনি আন্দোলনে অংশ নিয়ে তাঁতীবাজার মোড়ের ‘ফুলকলি’ দোকানের সামনে বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। এর দুই ঘণ্টা পর রাত দেড়টায় তাকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ পান মাকসুদা। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পূর্ব দরিয়াপুরে লাশ দাফন করা হয়।
মাকসুদা বেগম সমকালকে জানান, ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি মামলা করতে চাননি। পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে মামলা করার পরামর্শ দেন। নইলে তিনি কোনো সরকারি সহায়তা পাবেন না বলে জানানো হয়। তবে তাকে বলা হয়েছিল, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। তিনি শুধু একটি কাগজে স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনজন আসামির নাম দিয়েছেন তিনি। তারা হলেন– শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় আয়না বিক্রেতা মো.
বাবলার ভাগনে হুমায়ুন কবির জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কলকাতার একটি হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি হয় তার মামার। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। সেদিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক শোকবার্তায়ও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এদিকে শাওন ছাত্রলীগ করতেন বলে জানা নেই তার পরিবারের। নিহতের বোন মারিয়া আক্তার বলেন, এলাকার কেউ ডাকলে হয়তো মিছিলে গিয়ে থাকতে পারে শাওন। তবে সেভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। আবার সব খবর তো মা–বোনের কাছে আসেও না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর অনুমোদিত প্রসন্ন পোদ্দার লেন ইউনিট ছাত্রলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শাওনের নাম রয়েছে। সংগঠনের একাধিক নেতা শাওনের ছবি দেখে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংগঠনের ৭৬ বছর উপলক্ষে বের করা মিছিলে ব্যানারের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তার ছবিও পাওয়া গেছে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হলে বিচার অনিশ্চিত হয়ে পড়ে: ড. তৌহিদুল হক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সমকালকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহত–নিহতের ঘটনা ঘিরে কিছু মামলায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাজনৈতিক শত্রুতা বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অনেককে আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর রাজনৈতিক–সামাজিক পরিচয় যাই হোক না কেন, হতাহতের প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা সাজানো হলে ভুক্তভোগীর বিচার পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত ঘটনা একরকম, মামলায় বর্ণনা আরেক রকম, পরিবার বলছে অন্যরকম– এমন মামলা হলে সেগুলোর আইনগত ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। বিচারিক পর্যায়ে হয়তো মামলাগুলো টিকবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য র জন ত ব ষয়ট আওয় ম স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”
এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:
১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।
৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।
৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/রাসেল