ইয়াকুব ও রমজান। তারা আপন দুই ভাই। ইউনিয়নজুড়ে দৌরাত্ম্য তাদের, রয়েছে ৪০ জনের একটি বাহিনী। দুই ভাই অপরাধ সেরে নিরাপদে ঘুমানোর জন্য মাটির নিচে তৈরি করেছেন সুড়ঙ্গ। ইয়াকুব ও রমজান বারআউলিয়া এলাকার জহুরুল হকের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুই ভাই এলাকায় প্রকাশ্যে করেন ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। স্থানীয় শিল্পকারখানার হামলা চালিয়ে লুট করেন মালামাল। কথা না শুনলে মারধর করেন কারখানার কর্মকর্তাদের। ডাকাতি, অপহরণ ও ইয়াবার টাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস করছেন দুই ভাই। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা আরও বেশি বেপরোয়া।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পূর্বে সোনাইছড়ি এলাকায় দুই ভাই তৈরি করেছেন ছয় তলা ভবন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ছয় তলা ভবনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ছয় তলা ভবনের চারপাশে রয়েছে ত্রিপুরা বাসিন্দারা। তারা দুই ভাইয়ের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি রমজান ও ইয়াকুবের। গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা ওই এলাকার জহুরুল হকের ছেলে।
প্রথমে ইয়াকুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিতে আসেন তার ভাই রমজান। এ সময় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
মাটির নিচে সুড়ঙ্গ : এলাকার বাসিন্দা নুর উদ্দিন ও রাশেদ বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পূর্ব পাশে পাহাড়ের পাদদেশে ইয়াকুব আলী ও রমজানের বাড়ি। ছয় তলা ভবন থেকে কিছু দূরে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করেছেন তারা দুই ভাই। ডাকাতি ও ইয়াবা ব্যবসা শেষে সুড়ঙ্গ পথ পাড়ি দিয়ে অন্ধকার ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যান দুই ভাই।’
যেভাবে পুলিশের জালে : সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা থেকে চুরি করা স্ক্র্যাপ লোহা বারআউলিয়া থেকে ট্রাকে করে ডাকাতদল অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় কারখানার আনসার ও গার্ডরা ডাকাতদের বাধা দেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা এসময় তাদের মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের সামনে থেকে ট্রাক ভর্তি লোহা নিয়ে প্রকাশ্যে চলে যায় তারা। এসময় পুলিশ নীরব দর্শনের ভূমিকায় ছিল। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানায়। ওই কারখার আনসার ও কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে পুলিশ রাতে অভিযানে নামে, তাদের গ্রেপ্তার করে।
মাদক ব্যবসায়ীদের দুই দলে বিরোধ : সোনাইছড়ি ইউনিয়ন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও স্থানীয় শিল্প কারখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ইন্না-রাজ্জাক ডাকাত গ্রুপের সঙ্গে ইয়াকুক-রমজান ডাকাত গ্রুপের বিরোধ চলছে। কয়েক দফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে দুই পক্ষের মধ্যে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে চলত তাদের এই ব্যবসা। সরকার পরিবর্তনের পর ডাকাত গ্রুপ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে অব্যাহত রেখেছে তাদের অপরাধ।
স্থানীয় নাজমুল ও কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সোনাইছড়ি এলাকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ডাকাতি করত ইয়াকুব ও রমজান। ডাকাত দলে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। গত বুধবার ডাকাতির টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর কর মকর ত এল ক র এল ক য় সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ সেরে দুই ভাই ঘুমান সুড়ঙ্গে
ইয়াকুব ও রমজান। তারা আপন দুই ভাই। ইউনিয়নজুড়ে দৌরাত্ম্য তাদের, রয়েছে ৪০ জনের একটি বাহিনী। দুই ভাই অপরাধ সেরে নিরাপদে ঘুমানোর জন্য মাটির নিচে তৈরি করেছেন সুড়ঙ্গ। ইয়াকুব ও রমজান বারআউলিয়া এলাকার জহুরুল হকের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুই ভাই এলাকায় প্রকাশ্যে করেন ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। স্থানীয় শিল্পকারখানার হামলা চালিয়ে লুট করেন মালামাল। কথা না শুনলে মারধর করেন কারখানার কর্মকর্তাদের। ডাকাতি, অপহরণ ও ইয়াবার টাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস করছেন দুই ভাই। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা আরও বেশি বেপরোয়া।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পূর্বে সোনাইছড়ি এলাকায় দুই ভাই তৈরি করেছেন ছয় তলা ভবন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ছয় তলা ভবনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ছয় তলা ভবনের চারপাশে রয়েছে ত্রিপুরা বাসিন্দারা। তারা দুই ভাইয়ের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি রমজান ও ইয়াকুবের। গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা ওই এলাকার জহুরুল হকের ছেলে।
প্রথমে ইয়াকুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিতে আসেন তার ভাই রমজান। এ সময় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ইয়াকুব ও রমজান তারা দুই ভাই। ডাকাতি, মাদক, অপহরণসহ ইয়াকুবের বিরুদ্ধে ৭টি ও রমজানের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে থানায়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুই ভাই ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের রয়েছে এক ডাকাত বাহিনী। বাহিনীর সদস্যদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির মালামাল লুট ও স্থানীয় কারখানাগুলোয় চুরি-ডাকাতি করত তারা।’
মাটির নিচে সুড়ঙ্গ : এলাকার বাসিন্দা নুর উদ্দিন ও রাশেদ বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পূর্ব পাশে পাহাড়ের পাদদেশে ইয়াকুব আলী ও রমজানের বাড়ি। ছয় তলা ভবন থেকে কিছু দূরে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করেছেন তারা দুই ভাই। ডাকাতি ও ইয়াবা ব্যবসা শেষে সুড়ঙ্গ পথ পাড়ি দিয়ে অন্ধকার ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যান দুই ভাই।’
যেভাবে পুলিশের জালে : সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা থেকে চুরি করা স্ক্র্যাপ লোহা বারআউলিয়া থেকে ট্রাকে করে ডাকাতদল অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় কারখানার আনসার ও গার্ডরা ডাকাতদের বাধা দেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা এসময় তাদের মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের সামনে থেকে ট্রাক ভর্তি লোহা নিয়ে প্রকাশ্যে চলে যায় তারা। এসময় পুলিশ নীরব দর্শনের ভূমিকায় ছিল। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানায়। ওই কারখার আনসার ও কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে পুলিশ রাতে অভিযানে নামে, তাদের গ্রেপ্তার করে।
মাদক ব্যবসায়ীদের দুই দলে বিরোধ : সোনাইছড়ি ইউনিয়ন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও স্থানীয় শিল্প কারখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ইন্না-রাজ্জাক ডাকাত গ্রুপের সঙ্গে ইয়াকুক-রমজান ডাকাত গ্রুপের বিরোধ চলছে। কয়েক দফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে দুই পক্ষের মধ্যে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে চলত তাদের এই ব্যবসা। সরকার পরিবর্তনের পর ডাকাত গ্রুপ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে অব্যাহত রেখেছে তাদের অপরাধ।
স্থানীয় নাজমুল ও কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সোনাইছড়ি এলাকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ডাকাতি করত ইয়াকুব ও রমজান। ডাকাত দলে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। গত বুধবার ডাকাতির টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়।’