রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ২৪ দাবি আদায়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। রবিবার (২২ জুন) সকালে তারা দাবি আদায়ে নগরীর লালবাগ রেলগেট এলাকায় অবস্থান নেন। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারীরা। 

জনদুর্ভোগ বিবেচনায় কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার জন্য অবরোধ স্থগিত করে সড়ক থেকে সরে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা। আবাসন সংকট নিরসন, শ্রেণিকক্ষ বর্ধিতকরণ, ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলাদা পুলিশ মোতায়েনসহ ২৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। 

আরো পড়ুন:

অ্যাকাউন্টিং ছাড়া কিছুই কল্পনা করা যায় না: যবিপ্রবি উপাচার্য

সিকৃবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আল মাহামুদ আসাদ বলেন, ‍“এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি আমাদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা চাই একটি আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ।”

শিক্ষার্থী শিমলা আক্তার বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। দাবি পূরণ না হলে কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম জানান, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি রয়েছে, তার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে যেগুলো নিয়ে কাজ করা যায় সেগুলো বাস্তবায়ন খুব শিগগিরি শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে জেলা প্রশাসন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবে। 

তিনি আরো জানান, সড়কে জনদুর্ভোগ এড়াতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলা হয়েছিল। দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। 

ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গানে–আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা

জমিদারির কাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। পদ্মায় বোটে করে ভাসতে ভাসতে দেখেছেন বাংলার সজল সবুজ প্রকৃতি। নদীর দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রা। বাউল, ভাটিয়ালি গানের সুরে মোহিত হয়েছে কবির চিত্ত। কবি সেই সব দেখা ও শোনার অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভব প্রকাশ করেছেন গানে, কবিতায়, গল্পে আর ‘ছিন্নপত্র’ নামের চিঠিতে। কবির প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে সেই রচনা থেকে পাঠ আর গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল ছায়ানট।

গতকাল বুধবার ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ‘অন্তরতর হে-বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সন্ধ্যা সাতটায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ গানটি দিয়ে। পরে ইফফাত বিনতে নাজি গেয়েছেন ‘চিত্ত পিপাসিতরে গীত সুধার তরে’। গানের ফাঁকে ফাাঁকে পদ্মাপারের জীবনযাত্রা নিয়ে কবির লেখা থেকে পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সুমনা বিশ্বাস ও জহিরুল হক খান। এরপর আবার সম্মেলক কণ্ঠের গান ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’।

একদা পদ্মাঘাটে লেগেছিল কবির বোট। পাশেই গ্রামের কোনো এক বধূকে বিদায় দিতে সমবেত হয়েছিল তাঁর বিভিন্ন বয়সী আত্মীয়স্বজন। নানা কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। কবি সেই বর্ণনা লিখেছিলেন তাঁর অনন্য কাব্যময় ভাষায়। সেটি পাঠ করা হলো। তারপর দুটি একক কণ্ঠের গান। ‘ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই’ গানটি গেয়ে শোনালেন মাসকুরা আখতার। অমেয়া প্রতীতি পরিবেশন করলেন ‘তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখো না মনে’।

এবার এক ধবল জ্যোৎস্নার বর্ণনা। পদ্মার জনমানবহীন, বৃক্ষ–তৃণশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালুচর। কোজাগর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাস্নাত সেই চর দেখে কবির মন ভরে উঠেছিল ভাবাবেগে। তাঁর রচনা থেকে সে রাতের বর্ণনা পাঠের পর অভয়া দত্ত গেয়ে শোনালেন ‘আজি যে রজনী যায়’। দীপ্র নিশান্ত শোনালেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার সাধের সাধনা।’

অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল পাঠ আবৃত্তি আর গানে গানে। গান নির্বাচন করা হয়েছিল পাঠ ও আবৃত্তির বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। ‘দুই পাখি’ কবিতাটি আবৃত্তির পরে কবিতাটির গান পরিবেশন করেন তাহমিদ ওয়াসীফ। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ গেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

পূর্ব বাংলায় এসে বাউলগানের সুর, মরমি ভাবধারায় কবি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে কথা তিনি লিখেছেনও নানা রচনা ও চিঠিতে। তার খানিকটা পাঠ করে শোনানো হলো শ্রোতাদের। তারপর ‘আমি কান পেতে রই’ গানটি পরিবেশন করলেন অভিজিৎ দাস।

কবির অন্তরের যে আধ্যাত্মিক ভাব ও ভাবনা, সেসব নিয়েই তিনি নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচনা করছিলেন। এই কবিতাগুলো নিয়ে তখন স্তুতি ও সমালোচনা, চারপাশের নানা রকম কোলাহল। সেসবের কোনো কিছুতেই তিনি বিচলিত বোধ করছিলেন না। বন্ধু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে তাঁর ভাব–ভাবনার কথা জানিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন কবি। পত্র থেকে পাঠ করা হলো। পরে ‘কোলাহল তো বারণ হলো’ গানটি গাইলেন মনীষা সরকার। আজিজুর রহমান তুহিন শোনালেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। শেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ পরিবেশনা। আর সমাপ্তি হলো বরাবরের মতোই জাতীয় সংগীত দিয়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ