২৪ দাবিতে রংপুরে সড়ক ও রেলপথে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 22nd, June 2025 GMT
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ২৪ দাবি আদায়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। রবিবার (২২ জুন) সকালে তারা দাবি আদায়ে নগরীর লালবাগ রেলগেট এলাকায় অবস্থান নেন। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারীরা।
জনদুর্ভোগ বিবেচনায় কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার জন্য অবরোধ স্থগিত করে সড়ক থেকে সরে যান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা। আবাসন সংকট নিরসন, শ্রেণিকক্ষ বর্ধিতকরণ, ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলাদা পুলিশ মোতায়েনসহ ২৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
অ্যাকাউন্টিং ছাড়া কিছুই কল্পনা করা যায় না: যবিপ্রবি উপাচার্য
সিকৃবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আল মাহামুদ আসাদ বলেন, “এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি আমাদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা চাই একটি আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ।”
শিক্ষার্থী শিমলা আক্তার বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। দাবি পূরণ না হলে কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম জানান, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি রয়েছে, তার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে যেগুলো নিয়ে কাজ করা যায় সেগুলো বাস্তবায়ন খুব শিগগিরি শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে জেলা প্রশাসন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
তিনি আরো জানান, সড়কে জনদুর্ভোগ এড়াতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলা হয়েছিল। দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”
এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:
১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।
৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।
৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/রাসেল