জাকিয়া বারী মম। নন্দিত অভিনেত্রী ও মডেল। সম্প্রতি লুৎফর হাসানের রচনা ও সোহেল রাজের পরিচালায় নির্মিত ‘স্কুলগেট’ নাটকে অভিনয় করে দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এ নাটকে অভিনয়ে অভিজ্ঞতা, কাজের বিষয়ে নিজস্ব ভাবনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

একই সময়ে বেশ কিছু নাটকের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। সেখান থেকে ‘স্কুলগেট’ নাটকটি বেছে নেওয়ার কারণ? 
এখনকার বেশির ভাগ নাটকের গল্প প্রায় একই ধাঁচের। সেসব গল্পে অভিনয়ের কতটুকু মূল্যায়ন হবে বলা কঠিন। এদিক থেকে ‘স্কুলগেট’ নাটকের কাহিনি কিছুটা সময়োপযোগী মনে হয়েছে। নাট্যকার লুৎফর হাসান যখন এই নাটকের গল্প শুনিয়েছিলেন, তখন মনে হয়েছিল, এর চরিত্রগুলো সহজেই দর্শকমনে নাড়া দেবে। এমন মনে হওয়ার কারণে ‘স্কুলেগেট’-এর গল্পে দেখা মেলে চেনা জীবন আর চরিত্রে আছে আমাদের চার পাশের মানুষগুলোর ছায়া। একই সঙ্গে এই বিষয়গুলো ভাবিয়ে তুলবে’ সন্তানদের আমরা কীভাবে মানুষ করছি, আমাদের পারিবারিক বন্ধন কেমন হওয়া উচিত। তাই অন্য যে কোনো কাজ হাতে নেওয়ার আগে অভিনয়ের জন্য এই নাটকটি বেছে নিয়েছি।   

নির্মাতা, নাট্যকার এমনকি সহশিল্পীদের অনেকেই তরুণ; যাদের সঙ্গে আগে সেভাবে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। সে হিসেবে গল্প পছন্দ হলেও নাটকের নির্মাণ যেমন কল্পনা করেছেন, তেমনই হয়েছে? 
নতুনদের মধ্যে যারা নিয়মিত অভিনয় করছেন, গল্প-চিত্রানাট্য লিখছেন, নাটক-সিনেমা-সিরিজ পরিচালনা করছেন তাদের সবার সঙ্গেই যে কাজ করা হয়েছে, তা নয়। কিন্তু অনেকের কাজ দেখেছি, বেশ কয়েকজনকে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। তাই নতুনদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে কখনও অনীহা ছিল না। যখন কোনো গল্প, চরিত্র ভালো লাগছে, নির্মাণ পরিকল্পনায় একটু আলাদা মনে হচ্ছে, সে কাজগুলো করছি। কাজের ফলাফলও আশাবাদী করে তুলেছে। যেমন পরিচালক সোহেল রাজের কথাই বলি, তিনিও নতুন। কিন্তু শুটিং করতে গিয়ে দেখেছি, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তিনি দারুণভাবে রপ্ত করেছেন। গল্প উপস্থাপনেও নিজস্ব ধরন আছে। তাই সোহেল রাজের মতো যে নির্মাতা কাজে নিজস্বয়তার ছাপ রাখতে পারছেন, তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করতেই পারি। এজন্য ‘স্কুলগেট’ ভালো কিছু হবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই অভিনয় করেছি।

একসময় রোমান্টিক গল্পে নাটকেই বেশি অভিনয় করতে দেখা গেছে। এখন কী আগের ভাবনা থেকে সরে এসেছেন?
‘সময়ের চাহিদা’ বলে একটা কথা আছে। এর মানে হলো সময়ই আপনাকে নির্ধারণ করে দেবে, কখন কী করতে হবে। একসময় রোমান্টিক গল্পের নাটকে বেশি কাজ করেছি, কারণ আমার কাছে দর্শকের প্রত্যাশা সেটাই ছিল। তারপরও যখন সুযোগ পেয়েছি, অভিনয়ে নিজেকে ভেঙে ভিন্ন রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এভাবে যতটুকু পেরেছি দর্শক প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি চেষ্টা করেছি নিজের শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে। কারণ অভিনয় শুধু তো পেশা নয়, ভালোবাসার একটা জায়গা।

নায়িকা ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে এখন কি যে কোনো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আপনি প্রস্তুত?
নায়িকা হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। অভিনয়ের মূল্যায়ন হবে– এমন যে কোনো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমি প্রস্তুত। আমি বারবারই কাজের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। ক্যারিয়ার নিয়ে কখনও হতাশ ছিলাম না; বরং প্রতিনিয়ত মনে করি, যখন যে অবস্থানে আছি, সেখান থেকেই শুরু হবে নতুন করে পথচলা। 

আপনি একজন পরীক্ষিত অভিনেত্রী। তারপরও যাদের জীবনযাপন, ভাবনার জগৎ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই, তাদের চরিত্র পর্দায় তুলে গেলে কি পরিচালকের ওপর নির্ভর করেন?
অভিনয়ের আগে যতটা পারি চরিত্রের যাপিত জীবন, ভাবনার জগৎ সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করি। পরিচালকের পরামর্শ নিয়েও কাজটা সহজ করে তোলার চেষ্টা করি। গল্প ও চরিত্র কীভাবে পর্দায় উপস্থাপন করা হবে, তা নিয়ে নির্মাতাদের নিজস্ব একটা পরিকল্পনা থাকে। এজন্য তাদের ওপরও অনেক সময় নির্ভর করতে হয়। তাই পরীক্ষিত অভিনেত্রী বললেও এটাই সত্যি, আমি এখনও অভিনয়ের পরীক্ষা দিয়েই চলেছি। এখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে নার্ভাস লাগে এই ভেবে যে, আমার কাছে নির্মাতার যে প্রত্যাশা, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তা পূরণ করতে পারব কিনা। 

এখন বেশির ভাগ নির্মাতা কাজের বিষয়ে নির্দিষ্ট একটা সময় বেঁধে দেন। এতে ভালো কিছু করে দেখার সুযোগ কতটুকু? 
ভালো কিছুর জন্য যথেষ্ট সময় নিতে হয়। কিন্তু ভালো কিছু তখনই হয়, যখন শেখানে মেধা আর নতুনধারার মিশ্রণ ঘটে। অবাক করা বিষয় হলো, এ দেশে নির্মাতাদের কাজের সুযোগসুবিধা কম। বাজেটও থাকে নির্দিষ্ট। এজন্য প্রতিটি কাজ একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হয়। অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে, মাত্র দুই-তিন দিন কাজ করেও অনেকে ভালো কিছু তুলে ধরতে পারছেন। সেই সব নির্মাতার প্রশংসা না করলেই নয়; যারা অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজের মধ্য দিয়ে সময়কে জয় করে চলেছেন। 

অনেক কথা হলো, এবার বলুন সামনে নতুন কোন আয়োজনে আপনাকে দেখা যাবে?
বেশ কিছু নাটক ও সিরিজ নিয়ে কথা হচ্ছে। তার মধ্যে সেগুলো ভিন্ন ধরনের মনে হবে, অভিনয়ের জন্য সেগুলো বেছে নেব। এর বাইরে ‘মাস্টার’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। এ বছরই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা আছে। আশা করছি, সেখানে দর্শক  আমাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করবেন।   
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ক য় ব র মম চর ত র ক জ কর পর চ ল ন টক র সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক বার্নার্ড জুলিয়েন আর নেই

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আবার হারালো তার এক সোনালি সন্তানকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্টাইলিশ অলরাউন্ডার বার্নার্ড জুলিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ট্রিনিদাদের ভ্যালসাইনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তার প্রস্থান যেন এক যুগের অবসান; সেই এক সময়ের, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ক্রিকেট খেলত না, ক্রিকেট অধিকার করত। আর সেই দাপুটে সূচনার গল্পে জুলিয়েন ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম।

আরো পড়ুন:

ভোট দেননি তামিম

বিসিবি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ

১৯৭৫, যে বছর ইতিহাস লিখেছিলেন জুলিয়েন:
বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৭৫ সাল। কেউ জানত না এই নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস রচনা করবে। কিন্তু বার্নার্ড জুলিয়েন জানতেন, এটি তার নিজের পরিচয় তুলে ধরার মঞ্চ। বাঁহাতি এই সিমার বলকে নাচাতে পারতেন দু’দিকেই, হাতে ছিল দারুণ ব্যাটিং সেন্স আর ফিল্ডিংয়ে ছিলেন একদম চঞ্চল।

গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান- ৪ উইকেট ২০ রানে। এরপর সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ভস্ম করে শিকার করেন ৪ উইকেট ২৭ রানে। দুটি ম্যাচই ছিল ক্লাইভ লয়েডের দলের ফাইনালে ওঠার ভিত্তি।

আর লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, জুলিয়েনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ২৬ রান, যা দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। সেদিনের জয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাম্রাজ্যের উত্থান। যে সাম্রাজ্যের প্রথম সৈনিকদের একজন ছিলেন বার্নার্ড জুলিয়েন।

ক্লাইভ লয়েডের আবেগঘন স্মৃতিচারণ:
সহযোদ্ধা ও অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড তাকে স্মরণ করলেন গভীর ভালোবাসায়, “ও সবসময় শতভাগ দিতো, দায়িত্ব থেকে কখনো পিছু হটেনি। ব্যাট হাতে বা বল হাতে আমি সবসময় তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। সে ছিল প্রকৃত অর্থেই এক সম্পূর্ণ ক্রিকেটার।”

লয়েড আরও বলেন, “ওর মধ্যে ছিল আনন্দ, ছিল বিনয়। লর্ডসে একবার টেস্ট জেতার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। সেই আনন্দে সবার আগে ছিল জুলিয়েন। মানুষ তাকে ভালোবাসতো, সম্মান করতো, যেখানেই গেছি।”

ক্ষণজীবী কিন্তু উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার:
জুলিয়েনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল মাত্র চার বছরের, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি খেলেছেন ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডে। টেস্টে ৮৬৬ রান ও ৫০ উইকেট, ওয়ানডেতে ৮৬ রান ও ১৮ উইকেট; সংখ্যায় হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু প্রভাব ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণের মতো।

তিনি ছিলেন সেই যুগের অংশ, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ছন্দ, সাহস আর গর্ব এক হয়ে উঠেছিল। যে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অপ্রতিরোধ্য প্রতীক।

শ্রদ্ধা জানাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড: 
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো বলেন, “বার্নার্ড জুলিয়েনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আমরা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, এক অধ্যায়ের প্রতিফলনকেও স্মরণ করছি। তার জীবন প্রমাণ করে, উদ্দেশ্যনিষ্ঠ জীবন কখনো শেষ হয় না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। জুলিয়েন আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন, যে উত্তরাধিকার কখনো ম্লান হবে না।”

এক উত্তরাধিকারের নাম- বার্নার্ড জুলিয়েন:
বার্নার্ড জুলিয়েনের গল্প কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়, এটি এক জাতির জেগে ওঠার গল্প। তিনি খেলেছিলেন এমন এক সময়, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট শিখছিল নিজের ছন্দে নাচতে। আর সেই সুরে তিনি ছিলেন প্রথম তালবাদক।

আজ তিনি নেই, কিন্তু তার বলের সুইং, ব্যাটের দৃঢ়তা, মাঠে ছুটে যাওয়া সেই প্রাণচঞ্চল হাসি; সবই রয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায়।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ