পরমাণু কর্মসূচি শিগগির চালু করবে ইরান
Published: 25th, June 2025 GMT
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ‘প্রয়োজনীয় উদ্যোগ’ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান সরকার। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং এই কর্মসূচি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামী। ইরানের আধাসরকারি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
মোহাম্মদ ইসলামী বলেন, উৎপাদন ও সেবাদান প্রক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, সেই পরিকল্পনাই নেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, তাদের সাম্প্রতিক বিস্তৃত হামলা ছিল ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে। তারা বলছে, ইরান যদি এসব অবকাঠামো ঠিক রাখে, তাহলে তা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফর্ডো, ইস্পাহান ও নাতাজের পরমাণু পরিশোধন স্থাপনায় হামলা চালায়। ট্রাম্প ওই হামলাকে ‘অসামান্য সামরিক সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধে ইরান এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১ হাজার ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলও ইরানের সামরিক-বেসামরিক বিপুল পরিমাণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির এক উপদেষ্টা জানান, দেশটির কাছে এখনও পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুত আছে। এখনও ‘খেলা শেষ হয়নি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে তারা এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যার কোনো শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নেই। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং নিজেদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও সম্প্রসারণ করেছে। ইসরায়েল বলছে, ইরান ইতোমধ্যে অস্ত্রায়নের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে।
গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্টকে দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ বলেন, ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে হবে।
ইরান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মাদ মারান্দি ইজাদি আলজাজিরাকে বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করেও কোনো লাভ হয়নি— এমন অভিযোগ তুলে এনপিটি থেকে সরে আসতে পারে ইরান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটির ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারে তারা। ইরান এই চুক্তির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অথচ এই সহযোগিতা কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। বরং ইরানের সেসব পারমাণবিক স্থাপনা ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির নেতা-কর্মীরা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হচ্ছেন: তরিকুল ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মীরা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের এনসিপির যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই মিডিয়া ট্রাইয়ালের শিকার হচ্ছেন।’
মিডিয়াকে ব্যবহার করে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য অনেক অপশক্তি বর্তমানে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তরিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তরিকুল ইসলাম এ কথা বলেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে জানান এনসিপির যুব সংগঠনের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এনসিপির নেতা–কর্মীদের বিতর্কিত করার জন্য এমন কোনো শক্তি নেই যে আজকে চেষ্টা অব্যাহত রাখছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তরুণেরা যখনই কিছু একটা করছে বা এনসিপি রিলেটেড (সম্পর্কিত) যখনই কিছু একটা আসছে, সেটা কিন্তু খবরের পাতার মধ্যে সাত দিন ধরে থাকে। কিন্তু সেই জিনিসটা অন্যদের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। অনেক গুরুতর অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলো কখনো মিডিয়ার মধ্যে আসছে না।’
এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, তাসনিম জারাসহ অন্যদের গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারে যাওয়া নিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের একটা ইস্যু সামনে এনে সেখানে মিথ্যাচার করা হলো। বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে (মূলধারার সংবাদমাধ্যম) প্রচার করা হলো, সেখানে একজন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির নেতৃবৃন্দ যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বৈঠক হয়েছে এবং সব জায়গায় প্রচার করা হলো। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে যে আসলে আমাদের এনসিপির যাঁরা নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাঁরা সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটা কিন্তু একটি ভিন্ন বার্তা দেয়, এটি অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।’
এনসিপির এই যুব নেতা বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের সব মিডিয়া থেকে শুরু করে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তারা যেন আমাদের প্রতি সেই সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করে। তারা যদি তরুণদেরকে রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস (বাদ) করার জন্য এ রকম উঠেপড়ে লাগে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। কারণ, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তরুণেরাই কিন্তু সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ কারণেই কিন্তু আমরা গত ১৬ বছরের যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ ছিল, সেটাকে ফেলে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।’
লিখিত বক্তব্যে তরিকুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো তাঁরা ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ আয়োজন করছেন। ১২ আগস্ট মঙ্গলবার ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এ এই সম্মেলন হবে।
সম্মেলনে যুব ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তরিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় যুবশক্তির মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, যুব উন্নয়নবিষয়ক সমন্বয়ক খালেদ মোস্তফা, সিনিয়র সংগঠক ইয়াসিন আরাফাতসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।