ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠন, আইন প্রণয়ন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে দুইটি ছাত্র সংগঠন।

বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে পৃথকভাবে এ স্মারকলিপি প্রদান করে তারা এসব দাবি জানান।

সংগঠন দুইটির স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম। 

আরো পড়ুন:

পদ্মায় গোসলে নেমে ২ কলেজ ছাত্রের মৃত্যু

র‍্যাগিং প্রতিরোধে জবির সব বিভাগে কমিটি

ইবি শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ১০ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এ সময় সংগঠনটির শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাব্বির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেয়ামাতুল্লাহ ফারিস, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল তাকবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, একাডেমিক এলাকায় নানাবিধ সমস্যা ও অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি এবং নীতিগত কিছু পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মানসিক-শারীরিক স্বস্তি ও সামাজিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।

তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অনতিবিলম্বে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটা ব্যতীত অন্যান্য অযৌক্তিক সব কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে; কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কার করার জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে; মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্য দাবিগুলো হলো- সেশনজট নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে; শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে ভর্তি ফি কমিয়ে আনতে হবে; সুন্দর ক্যাম্পাস বিনির্মাণে ইকসু আইন প্রণয়ন ও ইকসু রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে; শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিটি ভবনে আধুনিক ও কার্যকর পানির ফিল্টার স্থাপন করতে হবে। 

এছাড়া কর্মচারীদের দায়িত্বে তদারকি করতে মনিটরিং সেল তৈরিসহ একাডেমিক শাখায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসন, নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হলগুলোতে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করে হাইজিন সামগ্রী ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে উন্নত সেবা প্রদানের দাবি জানান সংগঠনটি।

৩ দফা দাবিতে ইবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)

অন্যদিকে, ইকসু আইন প্রণয়ন ও গঠন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় অযৌক্তিক কোটা বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে উপচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ইবি প্রতিনিধিরা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের আদর্শের ধারক ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, জুলাই আদর্শের আলোকে ছাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা ও বৈষম্যহীন শিক্ষাঙ্গণ তৈরিতে সচেষ্ট। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের নির্দেশনায় উপর্যুক্ত লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে বাধ্য হবে।

তাদের দাবিগুলো হলো- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পুনর্বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের অনুমোদনের মাধ্যমে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনে ইকসু আইন প্রণয়ন ও নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ভর্তি প্রক্রিয়ায় বৈষম্যমূলক পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলসহ অন্যান্য কোটা ব্যবহারের সুযোগ হ্রাস করা; জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারীদের বিচারের লক্ষ্যে যে তদন্ত কমিটি গ্রহণ করেছে তার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

‎স্মারকলিপির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ বলেন, “তাদের শিক্ষার্থীবান্ধব দাবিগুলোর ব্যাপারে আমরা একমত। তবে ইকসু গঠনের ব্যাপারে কিছু আইনি জটিলতা আছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ইকসুর ব্যাপারটা অন্তর্ভুক্ত নেই। বেশ কয়েকটি দাবির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন ইতোমধ্যেই কাজ করছে, বাকিগুলোও বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন প রণয়ন গণত ন ত র ক র স ম রকল প উপ চ র য পদক ষ প ইসল ম গ রহণ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা

দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।

তিনি বলেন, “অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।”

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, “গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।”

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।”


তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।”
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।

পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।

ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন কত হওয়া উচিত, জানাতে পারবেন নাগরিকেরা
  • এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও কি ফাঁকা বুলি থাকবে
  • রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা