ডায়াবেটিসের শুরুতেই রোগের লক্ষণ হিসেবে অনেকের ঝাপসা দৃষ্টি থাকতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সিকিভাগের বেশি রোগীর রোগ নির্ণয়ের সময় জটিলতা থাকে। এসব জটিলতার মধ্যে চোখের জটিলতা তথা রেটিনোপ্যাথি সবচেয়ে বেশি। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলেও ঝাপসা দৃষ্টি তৈরি হতে পারে।
দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, সোজা রেখা বাঁকা দেখা, দৃষ্টিসীমানার ভেতরে কালো কালো দাগ দেখা, আকস্মিক অন্ধত্ব– এগুলো সব হতে পারে রেটিনার ব্যাধিতে। মাঝেমধ্যে দৃষ্টিশক্তির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে রক্তে গ্লুকোজের তারতম্যের কারণে।
চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর হচ্ছে রেটিনা। ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনও রেটিনায় ঘটে রক্তক্ষরণ। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে রেটিনা বিচ্ছিন্ন পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় রেটিনা ও অক্ষিগোলকের জেলিসদৃশ পদার্থের ভেতর নতুন নতুন রক্তনালি তৈরি হতে থাকে। এসব গজিয়ে ওঠা নবীন রক্তনালি থাকে ভঙ্গুর। এখান থেকে হতে পারে রক্তক্ষরণ। এমনটি ঘটলে দৃষ্টিশক্তি চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীদের অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ ছানি পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্লুকোমা বা চোখের চাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।
ডায়াবেটিসের ধরন, সময়কাল, ব্যক্তির বয়স, গ্লুকোজের মাত্রা, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির উপস্থিতি রেটিনার ব্যাধি সৃষ্টির জন্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
চোখের জটিলতা কমাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শরীরচর্চা, ওষুধ এবং প্রয়োজন বোধে ইনসুলিনের চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে হবে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কেমন।
প্রতিবছর অন্তত একবার চক্ষু চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে চোখের জটিলতা নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নির্ণিত হওয়ার পর প্রতিবছর চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছর পর থেকে প্রতিবছর এমনটি করতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রেটিনার এসব রোগের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন। কখনও এর জন্য প্রয়োজন হতে পারে লেজারথেরাপি কিংবা কখনও চোখের ভেতরে ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এসব নির্ভর করে রেটিনার অবস্থার ওপর।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে দুই চীনা নাগরিক আটক, ব্যবসায়ী পরিচয়ে নিয়েছিলেন বাসা ভাড়া
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার একটি আবাসিক ভবন থেকে দুই চীনা নাগরিককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পৌরসভার বাজার এলাকার আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
ওই দুই নাগরিক হলেন জিয়াং ছেংথং (২৬) ও টেং তংগু (৩১)। আটকের সময় তাঁদের থেকে মুঠোফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি যন্ত্র জব্দ করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র যায়, তাঁরা দুজনই গত বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত একটি অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানির ফোরম্যান মো. রোকন উদ্দিনের মাধ্যমে রামগড় উপজেলায় আসেন। পরে কোনো নথিপত্র ছাড়াই ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেন। বাড়ির মালিককে এ সময় তাঁরা ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছিলেন। ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানি-রপ্তানি করতে খাগড়াছড়িতে এসেছেন—এমনটা বাসার মালিককে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে তাঁরা দুজন বাংলাদেশে আসেন। শুরুতে তাঁরা চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় ছিলেন। সেখান থেকেই খাগড়াছড়িতে যান। তাঁরা পুলিশকেও ব্যবসায়িক কাজে খাগড়াছড়িতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। কারণ, রামগড় স্থলবন্দর চালু হবে—এমনটা তাঁরা জেনেছিলেন।
জানতে চাইলে রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে তথ্য পেয়ে দুই চীনা নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে আসতে হলে বিদেশি নাগরিকের আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে তাঁরা কেউ অনুমতি নেননি। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা যন্ত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিটিআরসির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।